জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম আর নেই
মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোলাম আযমের পারসোনাল ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, গোলাম আযম মারা গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দিতে বলা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, হাসপাতালের ফরমালিটিস শেষ করে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হবে।
এর আগে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায় রাত পৌনে ১০টার দিকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোলাম আযমের পারসোনাল ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, গোলাম আযম মারা গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দিতে বলা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, হাসপাতালের ফরমালিটিস শেষ করে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হবে।
এর আগে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায় রাত পৌনে ১০টার দিকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতির শুরু থেকে এখন
পর্যন্ত এক পরিচিত নাম অধ্যাপক গোলাম আযম। জীবনের প্রথম দিকে বাংলাদেশের
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত হিসেবে স্মরণীয় হলেও শেষ পর্যন্ত আদালতের
রায়ে একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন।
১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর (বাংলা ১৩২৯ সালের ৫ই অগ্রহায়ন) সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের শাহ সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন গোলাম আযম। তাঁর নানা শাহ সৈয়দ আব্দুল মোনায়েম শাহ সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন।
গোলাম কবির ও সৈয়দা আশরাফুন্নিসার সন্তান গোলাম আযমের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবী নগর উপজেলার বিরগাঁও গ্রামে। তবে ঢাকার বড় মগবাজারের কাজী অফিস লেনের বাড়িতেই দীর্ঘ দিন ধরে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন।
তাঁর পূর্বপুরুষ শায়খ জাকি (র.) মধ্যপ্রাচ্য থেকে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশে বাংলাদেশে আসেন এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় বসবাস করেন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা গোলাম আযম বিরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া শুরু করলেও একটি মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার সরকারি ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল কলেজ) থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ ও এমএ পাস করেন।
বৃটিশ উপনিবেশের বিদায়লঘ্নে সংস্কৃতি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জাতীয় জীবনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় জড়িয়ে পড়া অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু'র জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখায় সবার উপরে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা "বাংলা" দাবিতে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে দেয়া স্মারকলিপি পাঠ করে ভাষা সৈনিক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন গোলাম আযম।
১৯৫১ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষকতা শুরু করার পর থেকে তাবলীগ জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেন গোলাম আযম। ১৯৫৪ সালে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন।
ইসলাম প্রচার, ইসলামী রাজনীতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করা গোলাম আযম ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হন। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খান মৌলবাদী ধর্মীয় কাজকর্মের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ও গোলাম আযম দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন। তাকে আট মাস আটক করে রাখা হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর (সভাপতি) পদে অধিষ্ঠিত হন।
গোলাম আযমের আলোচিত রাজনৈতিক জীবনকে বিতর্কিত করেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান। তিনি দীর্ঘদিন পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শাসক চক্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও বিশ্বাস করতেন একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
তিন দিক থেকে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতের শাসক গোষ্ঠীর ভূমিকার কারণে ভীতশ্রদ্ধ হয়ে গোলাম আযম স্বাধীনতার বিরোধিতা করার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মনে করার যথেষ্ঠ কারণ থাকলেও, এ সিদ্ধান্ত তাকে রাজনৈতিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। ব্যক্তিগতভাবেও তাকে এর জন্য দায়মোচন করতে হয়েছে।
ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মুক্তিযুদ্ধকালীন কোনো অপরাধে গোলাম আযম সরাসরি জড়িত নয় বলে স্বীকার করলেও 'সুপ্রিম কমান্ড রেসপনসিবিলিট'র দায়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
আদালত মনে করেছিলেন, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে তিনি ও তার দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য দায় মোচনে বাধ্য।
এর ফলে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই অধ্যাপক আযমের বিরুদ্ধে আদালত দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে দণ্ড ভোগকালে সেখানেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তিনি এখানে বন্দি ছিলেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বর থেকে গোলাম আযম পাকিস্তানে থাকলেও ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ফেরেন। জেনারেল এরশাদের সময় দেশে রাজনৈতিক দৈন্য-দশা দেখা দিলে নির্দলীয় তত্ববধায়ক সরকারের রুপরেখা দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে তাকে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমীর ঘোষণা করা হলে দেশে ব্যাপক আন্দোলন দেখা দেয়। তবুও ২০০০ সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। রাজনীতির বাইরে শতাধিক বইও লিখেছেন গোলাম আযম।
১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর (বাংলা ১৩২৯ সালের ৫ই অগ্রহায়ন) সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের শাহ সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন গোলাম আযম। তাঁর নানা শাহ সৈয়দ আব্দুল মোনায়েম শাহ সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন।
গোলাম কবির ও সৈয়দা আশরাফুন্নিসার সন্তান গোলাম আযমের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবী নগর উপজেলার বিরগাঁও গ্রামে। তবে ঢাকার বড় মগবাজারের কাজী অফিস লেনের বাড়িতেই দীর্ঘ দিন ধরে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন।
তাঁর পূর্বপুরুষ শায়খ জাকি (র.) মধ্যপ্রাচ্য থেকে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশে বাংলাদেশে আসেন এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় বসবাস করেন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা গোলাম আযম বিরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া শুরু করলেও একটি মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার সরকারি ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল কলেজ) থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ ও এমএ পাস করেন।
বৃটিশ উপনিবেশের বিদায়লঘ্নে সংস্কৃতি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার জাতীয় জীবনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় জড়িয়ে পড়া অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু'র জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখায় সবার উপরে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি।পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা "বাংলা" দাবিতে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে দেয়া স্মারকলিপি পাঠ করে ভাষা সৈনিক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন গোলাম আযম।
১৯৫১ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষকতা শুরু করার পর থেকে তাবলীগ জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেন গোলাম আযম। ১৯৫৪ সালে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন।
ইসলাম প্রচার, ইসলামী রাজনীতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করা গোলাম আযম ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হন। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খান মৌলবাদী ধর্মীয় কাজকর্মের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ও গোলাম আযম দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন। তাকে আট মাস আটক করে রাখা হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর (সভাপতি) পদে অধিষ্ঠিত হন।
গোলাম আযমের আলোচিত রাজনৈতিক জীবনকে বিতর্কিত করেছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান। তিনি দীর্ঘদিন পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শাসক চক্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও বিশ্বাস করতেন একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
তিন দিক থেকে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতের শাসক গোষ্ঠীর ভূমিকার কারণে ভীতশ্রদ্ধ হয়ে গোলাম আযম স্বাধীনতার বিরোধিতা করার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মনে করার যথেষ্ঠ কারণ থাকলেও, এ সিদ্ধান্ত তাকে রাজনৈতিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। ব্যক্তিগতভাবেও তাকে এর জন্য দায়মোচন করতে হয়েছে।
ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মুক্তিযুদ্ধকালীন কোনো অপরাধে গোলাম আযম সরাসরি জড়িত নয় বলে স্বীকার করলেও 'সুপ্রিম কমান্ড রেসপনসিবিলিট'র দায়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
আদালত মনে করেছিলেন, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে তিনি ও তার দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য দায় মোচনে বাধ্য।
এর ফলে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই অধ্যাপক আযমের বিরুদ্ধে আদালত দণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে দণ্ড ভোগকালে সেখানেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তিনি এখানে বন্দি ছিলেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বর থেকে গোলাম আযম পাকিস্তানে থাকলেও ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ফেরেন। জেনারেল এরশাদের সময় দেশে রাজনৈতিক দৈন্য-দশা দেখা দিলে নির্দলীয় তত্ববধায়ক সরকারের রুপরেখা দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে তাকে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমীর ঘোষণা করা হলে দেশে ব্যাপক আন্দোলন দেখা দেয়। তবুও ২০০০ সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। রাজনীতির বাইরে শতাধিক বইও লিখেছেন গোলাম আযম।
No comments