মোজাম্বিকে ক্ষমতাসীন দলের জয় by মো: সাজ্জাদুল ইসলাম
মোজাম্বিকের সমাজ অনেক বেশি
আন্তঃসম্পর্কিত। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দেশটির ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যাপক
ব্যবধানের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব
মোজাম্বিক বা ফ্রিলিমোর দর্প এ নির্বাচনে কিছুটা চূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা
দেয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষক আয়েশা কাজী। তিনি বলেন, ফ্রিলিমোর তার
প্রভাব অুণœ রাখতে পারবে বলে আস্থা ব্যক্ত করা সত্ত্বেও নির্বাচনের ফলাফল
ঘোষণার সময় দলটি দেখতে পাবে যে তার দর্প কিছুটা হলেও চূর্ণ হয়ে গেছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি পরে ক্ষমতাসীন দলে পরিণত হয়। গত ২০ বছর ধরে দেশের হাল ধরে রয়েছে দলটি। এই প্রথম ফ্রিলিমোর তার পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিত্বে বড় ধরনের ধস প্রত্যক্ষ করল। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলন বা রেনামো পার্টি এবং নতুন দল ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট অব মোজাম্বিক (এমডিএম) বেশ ভালো ফল করেছে এ নির্বাচনে। পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করছেন, ফ্রিলিমোর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যদি ৫০ শতাংশের কম ভোট পান এবং দ্বিতীয় দফা ভোট অনুষ্ঠানে বাধ্য হন তাহলে তা হবে দলটির জন্য একটি বড় ধরনের আঘাত। প্রাথমিক ফলাফলে মনে হচ্ছে, দলটিকে এবার হয়তো এমন সঙ্কটে পড়তে হবে না। মোজাম্বিকের এ অভিজ্ঞতা হচ্ছে গোটা অঞ্চলের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। কারণ ফ্রিলিমোর সঙ্কট কোনো বিরল ঘটনা নয়। এ বছরের প্রথম দিকে প্রতিবেশী দণি আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস(এএনসি) অনুরূপ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। প্রধান বিরোধী দল ও নবগঠিত দ্য ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স (ইএফএফ) উভয়েই ওই নির্বাচনে অনেক ভালো ফল করে।
ঊভয় দেশ একদলীয় প্রতিযোগিতা থেকে উঠে এসে ত্রিদলীয় প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, যাতে তাদের গণতন্ত্রের পরিপক্বতার বিষয় ফুটে উঠেছে। তবে এ পরিবর্তনে দেশ দু’টির ক্ষমতাসীন দলগুলোর জন্য জেগে ওঠার নতুন বার্তা রয়েছে, যারা তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের কৃতিত্বকে ‘ঈসা আ:-এর পুনরাবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত’ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন। এটি হলো দণি আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জাকোব জুমার উক্তি।
ক্ষমতায় বহাল থাকতে ভোট কারচুপি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অন্যান্য অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ প্রকাশ্যে গ্রহণ না করলে জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবের জানু-পিএফ, এএনসি, ফ্রিলিমে ও অনুরূপ অন্যান্য দলের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হতো। মুগাবের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
হালকাপাতলা বসতিপূর্ণ দেশ নামিবিয়া। তুলনামূলক শান্ত দেশটিতে সম্প্রতি বিক্ষোভরত তরুণদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে হঠাৎ সেখানকার পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আসন্ন নির্বাচনে সোয়েটোর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। নামিবিয়ার ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স (এনইএফএফ) দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন রক্ত সঞ্চালন করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবেশী অ্যাঙ্গোলায় ২০১১ সাল থেকে তরুণদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। একনায়কতান্ত্রিক এমপিএলএ সরকার নৃশংস পন্থায় এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমন করে আসছে। নামিবিয়া ও অ্যাঙ্গোলা উভয় দেশই খনিজ ও অন্যান্য সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশ দু’টিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। সেই সাথে তাদের সমাজে বৈষম্য ও কর্মহীনতা ব্যাপক বেড়েছে।
মোজাম্বিক তার সম্পদের অভিশাপ দূর করতে সক্ষম হয়েছে। ফ্রিলিমোর সরকার সমাজের গভীর শ্রেণিবিভাজন দূর করতে ব্যর্থতা, বেপরোয়া দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। গত এক দশকে দেশটিতে বছরে ৮-১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও মোজাম্বিকের ৯-১০ শতাংশ মানুষ এখনো দিনে দুই ডলারেরও কম আয়ের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এক জরিপে এ কথা জানা গেছে। মোজাম্বিকের অ-উত্তোলিত গ্যাস ও কয়লা মজুদ আবিষ্কারের ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। জনগণ এ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি অংশ দাবি করছে এবং ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান তাদের এ দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ যুগে ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি সম্ভবত সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। ২০১০ সালে মোজাম্বিকের রাজধানী মপুতোতে খাদ্য দাঙ্গার ঘটনায় এ বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছিল। আরব বসন্তের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সে সময় রুটির জন্য দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছিল।
মোজাম্বিকের প্রধান বিরোধী দল রিনেমো প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টারি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেÑ এ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি করা হয়েছে। দলটির মুখপাত্র এন্টোনিও মুচাঙ্গা বলেন, ১৫ অক্টোবরের নির্বাচন বাতিল করতে হবে। তিনজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন, ফ্রিলিমোর সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফিলিপ নাইউসি, রিনেমোর আফোনসো ধলাকামা ও রিনেমো থেকে বেরিয়ে এসে নবগঠিত দল এডিএমের ডেভিস সিমাঙ্গা। পর্যবেক্ষক গ্রুপ সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি বলেছে, নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তাদের এ ঘোষণার নিন্দা করেছে ধলাকামা। আফ্রিকান ইউনিয়নও এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে। আফোনসো নির্বাচন অর্থহীন বলে উল্লেখ করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। সিমাঙ্গাও নির্বাচনে অনিয়মের নিন্দা করেছেন।
নির্বাচন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, এসব ঘটনা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলকে প্রভাবিত করবে না। প্রাথমিক আংশিক ফলাফলে দেখা গেছে, ফ্রিলিমোর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা আইনি প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অনিয়ম হলে তার সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করার জন্য রিনেমোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, প্রচারণা ফ্রিলিমোর অনুকূলে থাকলেও নির্বাচন বেশ ভালোই হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনও নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন।
ক্ষমতাসীন দল ফ্রিলিমো পার্টি ও রিনেমো দীর্ঘ দিন ধরে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ১৯৯২ সালে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ লোক নিহত হয়। রিনেমো ২০১৩ সালে পুনরায় অস্ত্র হাতে তুলে নেয়, কিন্তু সে বছর আগস্টে তাদের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে আফোনসো বলেন, ‘আমি যুদ্ধবাজ নই। দেশটির মহাসড়কে আর কখনো হামলার ঘটনা ঘটবে না।’ তিনি চূড়ান্ত ফলফল ঘোষণা করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর দেশটি শাসন করছে ফ্রিলিমো। পলাতক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে রিনেমো নেতা আফোনসো ধলাকামা এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শেষ মুহূর্তে তার এ অংশগ্রহণে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে রূপ নেয়।
মোজাম্বিকের ১১টি প্রদেশে ভোটার এক কোটি সাত লাখ। এ ছাড়া অন্যত্র আরো ৮৯ হাজার ৫০০ ভোটার রয়েছে।
গত সপ্তাহে অক্সফামের দেয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, দণি আফ্রিকার এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ রাতে অনাহারে বিছানায় যায়। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের এ দশা। তবে এএনসি সরকার কি বিষয়টির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে অথবা জুমার বাড়ির উন্নয়নের বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে বেশি ব্যস্ত? এ জন্য দেশটির করদাতাদের ব্যয় করতে হবে দুই কোটি ২০ লাখ ডলার।
অ্যাঙ্গোলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খরা চলছে। এতে দেশটিতে ুধা ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর হার অনেক বেড়েছে। গত মাসে দেশটিতে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে, যার প্রভাব খাদ্যদ্রব্যের দামের ওপর পড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দেবে। এ হলো আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশের বিধিলিপি। অথচ দেশটির প্রেসিডেন্টের মেয়ে হলো আফ্রিকার প্রথম নারী শত কোটি ডলারের মালিক।
সুবিধাবাদী রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণী এবং সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যাপক বিভাজনের বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থান, সেলফোন প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশের সুযোগ এখন গণতন্ত্র বজায় রাখার পাশাপাশি নির্বাচনে কারচুপি করা ও বিক্ষোভ দমন করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মপুতোর সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টিগ্রিটির (সিআইপি) মতো প্রতিষ্ঠান নাগরিক সাংবাদিকতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয় বেশ সাফল্যের সাথে তুলে ধরেছে এবং গত বছরের স্থানীয় নির্বাচন নতুন করে ভোট অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অ্যাঙ্গোলায় এমপিএলএ ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাংবিধানিক অধিকারকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশীদার প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্ধুরা আশাবাদী। তারা চান না, রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক সাফল্য ধ্বংস হয়ে যাক।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি পরে ক্ষমতাসীন দলে পরিণত হয়। গত ২০ বছর ধরে দেশের হাল ধরে রয়েছে দলটি। এই প্রথম ফ্রিলিমোর তার পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিত্বে বড় ধরনের ধস প্রত্যক্ষ করল। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলন বা রেনামো পার্টি এবং নতুন দল ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট অব মোজাম্বিক (এমডিএম) বেশ ভালো ফল করেছে এ নির্বাচনে। পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করছেন, ফ্রিলিমোর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী যদি ৫০ শতাংশের কম ভোট পান এবং দ্বিতীয় দফা ভোট অনুষ্ঠানে বাধ্য হন তাহলে তা হবে দলটির জন্য একটি বড় ধরনের আঘাত। প্রাথমিক ফলাফলে মনে হচ্ছে, দলটিকে এবার হয়তো এমন সঙ্কটে পড়তে হবে না। মোজাম্বিকের এ অভিজ্ঞতা হচ্ছে গোটা অঞ্চলের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। কারণ ফ্রিলিমোর সঙ্কট কোনো বিরল ঘটনা নয়। এ বছরের প্রথম দিকে প্রতিবেশী দণি আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস(এএনসি) অনুরূপ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। প্রধান বিরোধী দল ও নবগঠিত দ্য ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স (ইএফএফ) উভয়েই ওই নির্বাচনে অনেক ভালো ফল করে।
ঊভয় দেশ একদলীয় প্রতিযোগিতা থেকে উঠে এসে ত্রিদলীয় প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, যাতে তাদের গণতন্ত্রের পরিপক্বতার বিষয় ফুটে উঠেছে। তবে এ পরিবর্তনে দেশ দু’টির ক্ষমতাসীন দলগুলোর জন্য জেগে ওঠার নতুন বার্তা রয়েছে, যারা তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের কৃতিত্বকে ‘ঈসা আ:-এর পুনরাবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত’ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন। এটি হলো দণি আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জাকোব জুমার উক্তি।
ক্ষমতায় বহাল থাকতে ভোট কারচুপি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অন্যান্য অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ প্রকাশ্যে গ্রহণ না করলে জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবের জানু-পিএফ, এএনসি, ফ্রিলিমে ও অনুরূপ অন্যান্য দলের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হতো। মুগাবের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
হালকাপাতলা বসতিপূর্ণ দেশ নামিবিয়া। তুলনামূলক শান্ত দেশটিতে সম্প্রতি বিক্ষোভরত তরুণদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে হঠাৎ সেখানকার পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আসন্ন নির্বাচনে সোয়েটোর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। নামিবিয়ার ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স (এনইএফএফ) দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন রক্ত সঞ্চালন করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবেশী অ্যাঙ্গোলায় ২০১১ সাল থেকে তরুণদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। একনায়কতান্ত্রিক এমপিএলএ সরকার নৃশংস পন্থায় এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমন করে আসছে। নামিবিয়া ও অ্যাঙ্গোলা উভয় দেশই খনিজ ও অন্যান্য সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশ দু’টিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। সেই সাথে তাদের সমাজে বৈষম্য ও কর্মহীনতা ব্যাপক বেড়েছে।
মোজাম্বিক তার সম্পদের অভিশাপ দূর করতে সক্ষম হয়েছে। ফ্রিলিমোর সরকার সমাজের গভীর শ্রেণিবিভাজন দূর করতে ব্যর্থতা, বেপরোয়া দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। গত এক দশকে দেশটিতে বছরে ৮-১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও মোজাম্বিকের ৯-১০ শতাংশ মানুষ এখনো দিনে দুই ডলারেরও কম আয়ের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এক জরিপে এ কথা জানা গেছে। মোজাম্বিকের অ-উত্তোলিত গ্যাস ও কয়লা মজুদ আবিষ্কারের ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হয়। জনগণ এ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি অংশ দাবি করছে এবং ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান তাদের এ দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ যুগে ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি সম্ভবত সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। ২০১০ সালে মোজাম্বিকের রাজধানী মপুতোতে খাদ্য দাঙ্গার ঘটনায় এ বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছিল। আরব বসন্তের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সে সময় রুটির জন্য দাঙ্গার সৃষ্টি হয়েছিল।
মোজাম্বিকের প্রধান বিরোধী দল রিনেমো প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টারি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেÑ এ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি করা হয়েছে। দলটির মুখপাত্র এন্টোনিও মুচাঙ্গা বলেন, ১৫ অক্টোবরের নির্বাচন বাতিল করতে হবে। তিনজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেন, ফ্রিলিমোর সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফিলিপ নাইউসি, রিনেমোর আফোনসো ধলাকামা ও রিনেমো থেকে বেরিয়ে এসে নবগঠিত দল এডিএমের ডেভিস সিমাঙ্গা। পর্যবেক্ষক গ্রুপ সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি বলেছে, নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তাদের এ ঘোষণার নিন্দা করেছে ধলাকামা। আফ্রিকান ইউনিয়নও এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে। আফোনসো নির্বাচন অর্থহীন বলে উল্লেখ করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। সিমাঙ্গাও নির্বাচনে অনিয়মের নিন্দা করেছেন।
নির্বাচন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, এসব ঘটনা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলকে প্রভাবিত করবে না। প্রাথমিক আংশিক ফলাফলে দেখা গেছে, ফ্রিলিমোর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা আইনি প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অনিয়ম হলে তার সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করার জন্য রিনেমোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, প্রচারণা ফ্রিলিমোর অনুকূলে থাকলেও নির্বাচন বেশ ভালোই হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনও নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন।
ক্ষমতাসীন দল ফ্রিলিমো পার্টি ও রিনেমো দীর্ঘ দিন ধরে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ১৯৯২ সালে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ লোক নিহত হয়। রিনেমো ২০১৩ সালে পুনরায় অস্ত্র হাতে তুলে নেয়, কিন্তু সে বছর আগস্টে তাদের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে আফোনসো বলেন, ‘আমি যুদ্ধবাজ নই। দেশটির মহাসড়কে আর কখনো হামলার ঘটনা ঘটবে না।’ তিনি চূড়ান্ত ফলফল ঘোষণা করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর দেশটি শাসন করছে ফ্রিলিমো। পলাতক অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে রিনেমো নেতা আফোনসো ধলাকামা এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শেষ মুহূর্তে তার এ অংশগ্রহণে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে রূপ নেয়।
মোজাম্বিকের ১১টি প্রদেশে ভোটার এক কোটি সাত লাখ। এ ছাড়া অন্যত্র আরো ৮৯ হাজার ৫০০ ভোটার রয়েছে।
গত সপ্তাহে অক্সফামের দেয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, দণি আফ্রিকার এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ রাতে অনাহারে বিছানায় যায়। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের এ দশা। তবে এএনসি সরকার কি বিষয়টির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে অথবা জুমার বাড়ির উন্নয়নের বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে বেশি ব্যস্ত? এ জন্য দেশটির করদাতাদের ব্যয় করতে হবে দুই কোটি ২০ লাখ ডলার।
অ্যাঙ্গোলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খরা চলছে। এতে দেশটিতে ুধা ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর হার অনেক বেড়েছে। গত মাসে দেশটিতে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে, যার প্রভাব খাদ্যদ্রব্যের দামের ওপর পড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দেবে। এ হলো আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশের বিধিলিপি। অথচ দেশটির প্রেসিডেন্টের মেয়ে হলো আফ্রিকার প্রথম নারী শত কোটি ডলারের মালিক।
সুবিধাবাদী রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণী এবং সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যাপক বিভাজনের বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। নাগরিক সাংবাদিকতার উত্থান, সেলফোন প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশের সুযোগ এখন গণতন্ত্র বজায় রাখার পাশাপাশি নির্বাচনে কারচুপি করা ও বিক্ষোভ দমন করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মপুতোর সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টিগ্রিটির (সিআইপি) মতো প্রতিষ্ঠান নাগরিক সাংবাদিকতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয় বেশ সাফল্যের সাথে তুলে ধরেছে এবং গত বছরের স্থানীয় নির্বাচন নতুন করে ভোট অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অ্যাঙ্গোলায় এমপিএলএ ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাংবিধানিক অধিকারকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশীদার প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্ধুরা আশাবাদী। তারা চান না, রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক সাফল্য ধ্বংস হয়ে যাক।
No comments