বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন by মাসুম বিল্লাহ
১৯৪৪ সালে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) যখন যাত্রা শুরু করে তখন বিশ্বের নতুন পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এই বৈশ্বিক শাপমোচন ব্যাংকের মূল নিয়ন্ত্রা। সাত দশকের মাথায় এসে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। আর তাই গত সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটনে আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে আশঙ্কার একটি ঠাণ্ডা স্র্রোত বয়ে যায় উপস্থিত পরিচালকদের মনে। নতুন অর্থনৈতিক পরাশক্তির উত্থান পশ্চিমা অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই বৈশ্বিক সংস্থাটির গুরুত্ব ও প্রভাব কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সবার মনে।
আইএমএফের হিসাবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ চীনের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ১৭.৬৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর তখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকার হবে ১৭.৪২ মার্কিন ডলার। পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি) স্ট্যান্ডার্ডের ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়। গত বছর এ দেশটি ৯.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করেছে, যা ২০০৭ সালের প্রায় তিন গুণ।
বহু দিন ধরেই কানাঘুষা চলছিল, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এ দেশটি কবে নাগাদ অর্থনীতিতেও শীর্ষস্থানটি দখল করবে। অর্থনীতিবিদেরা এ ব্যাপারে একটি হিসাবও কষে রেখেছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহান্তে আইএমএফ যখন ঘোষণা করে দেশটির অর্থনীতির আকার ১৭.৬ ট্রিলিয়ন ডলার, আর যুক্তরাষ্ট্রের ১৯.৪ ট্রিলিয়ন ডলার তখন অনেকেই অবাক হন। কারণ, এই ঘোষণা প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে অন্তত পাঁচ বছর আগে দেয়া হয়েছে।
অনেক অর্থনীতিবিদ অবশ্য এই অর্থনীতির আকার নিরূপণের জন্য ‘চলতি মূল্য’-ভিত্তিক পদ্ধতি পছন্দ করেন না। কারণ, বিভিন্ন দেশে পণ্যমূল্য বিভিন্ন রকম। এতে ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার ব্যয় হিসাব করা হয়। এ বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রেই ধনাঢ্য যুক্তরাষ্ট্র বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে। হিসাবও করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় চীনের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে মাত্র ১০.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে এটা ৫৫ হাজার ডলার, সেখানে চীনে মাত্র আট হাজার ডলার। ব্লুমবার্গ হিসাব করে দেখিয়েছে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সব কিছু হিসাব করা হলে পিপিপি সূচকে চীনের অবস্থান দাঁড়াবে ৮৬তম। যদিও এক দশক আগের তুলনায় তা ২৯ ধাপ এগিয়েছে।
কিন্তু চীন যে শিল্পোন্নত দেশের কাতারে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ। বাকি সব অগ্রসর অর্থনীতির তুলনায় এটা অনেক বেশি। আর এটাও ঠিক, এই নতুন শক্তির আবির্ভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় আইএমএফকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। যদিও বৈশ্বিক সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটিং পাওয়ার ১৬.৭ শতাংশ। তাই ওয়াশিংটনের ভেটো এড়িয়ে সংস্থাটির বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। ভোটিংয়ে চীনের অংশ ৩.৮ শতাংশ, ঠিক ইতালির সমান। অথচ ইতালির অর্থনীতি চীনের এক-পঞ্চমাংশ মাত্র।
আইএমএফ সংস্কারের পরিকল্পনা চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে। ফলে চীন, ভারতসহ অন্যান্য উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলো ক্রমেই এই তহবিল থেকে তাদের অংশ কমিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে ৭০ বছরের পুরনো সংস্থাটি ক্রমেই হয়ে উঠছে অপ্রাসঙ্গিক। এভাবে এক সময় হয়তো এটা তার বৈধতাই হারিয়ে ফেলবে।
২০১০ সালের সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভোটিং কোটায় পরিবর্তন আসত, শেয়ারহোল্ডারদের ভোটিং ক্ষমতা বাড়ত এবং সংস্থাটির সার্বিক আর্থিক সম্পদ ব্যাপক বৃদ্ধি পেত। আর তা দরকার ছিল গ্রিস ও আয়ারল্যান্ড এবং অতি সম্প্রতি ইউক্রেনের মতো দেশগুলোকে সহায়তার জন্য। প্রতিটি বড় অর্থনীতি এই সংস্কার অনুমোদন করেছে। কিন্তু সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য চাই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনও শুরুতেই সংস্কার পরিকল্পনা অনুমোদন করে। কিন্তু বাদ সাধে কংগ্রেস, তাই এর অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
আইএমএফকে নিয়ে সমস্যা অনেক পুরনো। অনেকেই এর বিকল্প খুঁজছিলেন অনেক দিন ধরে। সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে হতাশা এর বর্তমান প্রধান ক্রিস্টিন লাগারদের কণ্ঠেও ফুটে ওঠে গত সপ্তাহান্তের বৈঠকে। এমনকি তিনি ব্যঙ্গচ্ছলে বলেন, যদি মার্কিন কংগ্রেস সংস্থাটির সংস্কার পরিকল্পনা অনুমোদন করে, তাহলে তিনি খুশিতে কংগ্রেসের সামনে গিয়ে ‘ব্যালেড্যান্স’ নাচবেন। তার ভাষায়, ‘২০১২ সালেই এটা পাওনা হয়েছিল, আর ২০১৪ সালে তা হয়ে গেছে বাড়তি পাওনা।’
এই সংস্থার সাবেক উপপরিচালক ও মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অগাস্টিন কার্স্টেন্সও অনেকের মতো উদ্বিগ্ন বৈশ্বিক সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার ভাষায়, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আইএমএফ নীতি-পরামর্শ দেয়। আর পারমর্শ কোনো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই আসা উচিত।’
তাই চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন আইএমএফের বর্তমান ভোটিং অংশটি কেবল অন্যায্যই নয়, অবৈধ ও হাস্যকর।
২০১০ সালের সংস্কারও যথেষ্ট নয় বলে অনেকে মনে করেন। কারণ, তাতে চীনের ভোটিং-রাইট ৬.১ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু সংস্থার অভ্যন্তরীণ কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রয়েছে প্রবল বাধা।
এই বাধা দূর হবে কিভাবে? ২০১৩ সালে ৭.৭ শতাংশের তুলনায় চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর। তার ওপর হংকংয়ের মতো ‘অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউজে’ অস্থিরতা। এসব দেখিয়ে অনেকে হয়তো চীনের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তাকে উপেক্ষা করতে চাইবেন। কিন্তু তাই বলে কি থেমে থাকবে আইএমএফের সংস্কার?
আইএমএফের হিসাবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ চীনের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ১৭.৬৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর তখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকার হবে ১৭.৪২ মার্কিন ডলার। পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি (পিপিপি) স্ট্যান্ডার্ডের ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়। গত বছর এ দেশটি ৯.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করেছে, যা ২০০৭ সালের প্রায় তিন গুণ।
বহু দিন ধরেই কানাঘুষা চলছিল, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এ দেশটি কবে নাগাদ অর্থনীতিতেও শীর্ষস্থানটি দখল করবে। অর্থনীতিবিদেরা এ ব্যাপারে একটি হিসাবও কষে রেখেছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহান্তে আইএমএফ যখন ঘোষণা করে দেশটির অর্থনীতির আকার ১৭.৬ ট্রিলিয়ন ডলার, আর যুক্তরাষ্ট্রের ১৯.৪ ট্রিলিয়ন ডলার তখন অনেকেই অবাক হন। কারণ, এই ঘোষণা প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে অন্তত পাঁচ বছর আগে দেয়া হয়েছে।
অনেক অর্থনীতিবিদ অবশ্য এই অর্থনীতির আকার নিরূপণের জন্য ‘চলতি মূল্য’-ভিত্তিক পদ্ধতি পছন্দ করেন না। কারণ, বিভিন্ন দেশে পণ্যমূল্য বিভিন্ন রকম। এতে ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার ব্যয় হিসাব করা হয়। এ বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রেই ধনাঢ্য যুক্তরাষ্ট্র বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে। হিসাবও করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় চীনের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে মাত্র ১০.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে এটা ৫৫ হাজার ডলার, সেখানে চীনে মাত্র আট হাজার ডলার। ব্লুমবার্গ হিসাব করে দেখিয়েছে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সব কিছু হিসাব করা হলে পিপিপি সূচকে চীনের অবস্থান দাঁড়াবে ৮৬তম। যদিও এক দশক আগের তুলনায় তা ২৯ ধাপ এগিয়েছে।
কিন্তু চীন যে শিল্পোন্নত দেশের কাতারে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চলতি বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ। বাকি সব অগ্রসর অর্থনীতির তুলনায় এটা অনেক বেশি। আর এটাও ঠিক, এই নতুন শক্তির আবির্ভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় আইএমএফকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। যদিও বৈশ্বিক সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটিং পাওয়ার ১৬.৭ শতাংশ। তাই ওয়াশিংটনের ভেটো এড়িয়ে সংস্থাটির বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। ভোটিংয়ে চীনের অংশ ৩.৮ শতাংশ, ঠিক ইতালির সমান। অথচ ইতালির অর্থনীতি চীনের এক-পঞ্চমাংশ মাত্র।
আইএমএফ সংস্কারের পরিকল্পনা চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে। ফলে চীন, ভারতসহ অন্যান্য উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলো ক্রমেই এই তহবিল থেকে তাদের অংশ কমিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে ৭০ বছরের পুরনো সংস্থাটি ক্রমেই হয়ে উঠছে অপ্রাসঙ্গিক। এভাবে এক সময় হয়তো এটা তার বৈধতাই হারিয়ে ফেলবে।
২০১০ সালের সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভোটিং কোটায় পরিবর্তন আসত, শেয়ারহোল্ডারদের ভোটিং ক্ষমতা বাড়ত এবং সংস্থাটির সার্বিক আর্থিক সম্পদ ব্যাপক বৃদ্ধি পেত। আর তা দরকার ছিল গ্রিস ও আয়ারল্যান্ড এবং অতি সম্প্রতি ইউক্রেনের মতো দেশগুলোকে সহায়তার জন্য। প্রতিটি বড় অর্থনীতি এই সংস্কার অনুমোদন করেছে। কিন্তু সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য চাই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনও শুরুতেই সংস্কার পরিকল্পনা অনুমোদন করে। কিন্তু বাদ সাধে কংগ্রেস, তাই এর অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
আইএমএফকে নিয়ে সমস্যা অনেক পুরনো। অনেকেই এর বিকল্প খুঁজছিলেন অনেক দিন ধরে। সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে হতাশা এর বর্তমান প্রধান ক্রিস্টিন লাগারদের কণ্ঠেও ফুটে ওঠে গত সপ্তাহান্তের বৈঠকে। এমনকি তিনি ব্যঙ্গচ্ছলে বলেন, যদি মার্কিন কংগ্রেস সংস্থাটির সংস্কার পরিকল্পনা অনুমোদন করে, তাহলে তিনি খুশিতে কংগ্রেসের সামনে গিয়ে ‘ব্যালেড্যান্স’ নাচবেন। তার ভাষায়, ‘২০১২ সালেই এটা পাওনা হয়েছিল, আর ২০১৪ সালে তা হয়ে গেছে বাড়তি পাওনা।’
এই সংস্থার সাবেক উপপরিচালক ও মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অগাস্টিন কার্স্টেন্সও অনেকের মতো উদ্বিগ্ন বৈশ্বিক সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার ভাষায়, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আইএমএফ নীতি-পরামর্শ দেয়। আর পারমর্শ কোনো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই আসা উচিত।’
তাই চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন আইএমএফের বর্তমান ভোটিং অংশটি কেবল অন্যায্যই নয়, অবৈধ ও হাস্যকর।
২০১০ সালের সংস্কারও যথেষ্ট নয় বলে অনেকে মনে করেন। কারণ, তাতে চীনের ভোটিং-রাইট ৬.১ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু সংস্থার অভ্যন্তরীণ কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রয়েছে প্রবল বাধা।
এই বাধা দূর হবে কিভাবে? ২০১৩ সালে ৭.৭ শতাংশের তুলনায় চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর। তার ওপর হংকংয়ের মতো ‘অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউজে’ অস্থিরতা। এসব দেখিয়ে অনেকে হয়তো চীনের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তাকে উপেক্ষা করতে চাইবেন। কিন্তু তাই বলে কি থেমে থাকবে আইএমএফের সংস্কার?
No comments