পঞ্চাশে বন্ড by ইমরুল কায়েস
পঞ্চাশে পা দিলেন ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্ট বন্ড। জেমস বন্ড। কোড ০০৭। সারা পৃথিবীতে তার পরিচয় দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা হিসেবে। প্রেম, অভিযান ও দুঃসাহসে মোড়া এই চরিত্র আলোড়িত করেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের দর্শককে। বলাবাহুল্য, চলচ্চিত্রের কারণেই জেমস বন্ডের বিশ্বজোড়া খ্যাতি।
এ পর্যন্ত জেমস বন্ড সিরিজের ২৩টির বেশি মুভি মুক্তি পেয়েছে। জেমস বন্ড সিরিজের প্রথম মুভি ডক্টর নো মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬২ সালে। সে মুভিতে জেমস বন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শন কনেরি। ডক্টর নো সিনেমার ৫০ বছর পূর্ণ হলো এ বছর। সে হিসেবেই বিশ্বব্যাপী মহাধুমধাম করে পালন করা হচ্ছে জেমস বন্ডের ৫০ বছর। পত্রপত্রিকায় বন্ড চর্চা চলছে। কোন চলচ্চিত্রে বন্ড কে ছিলেন, বন্ডের নায়িকারা কারা ছিলেন, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। আলোচনা-সমালোচনার পেছনে বন্ডের মাহাত্ম্য নিশ্চয় আছে। বিপুল জনপ্রিয় এ চরিত্রটি অনেকের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। আলোচনার জন্য উপলক্ষ লাগে না। কিন্তু বড় একটি উপলক্ষ আছে। এ বছরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে বন্ড সিরিজের মুভি স্কাইফল। আর সে মুভির মার্কেটিংয়ের আইডিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বন্ডের ৫০ বছর। স্বাভাবিকভাবেই চিরতরুণ বন্ডের ৫০ বছরে মুক্তি পাওয়া স্কাইফল নিয়ে দর্শকদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ থাকবে। বলে রাখা দরকার, বন্ডের প্রকৃত জন্ম হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। ইয়ান ফ্লেমিংয়ের উপন্যাসে তার প্রথম দেখা মিলেছিল ১৯৫৩ সালেই। সে হিসেবে আগামী বছর ফিকশনের চরিত্র হিসেবে বন্ডের বয়স হবে ষাট বছর। ধরে নেওয়াই যায়, বইয়ের বন্ডের চাইতে সিনেমার বন্ড বেশি জনপ্রিয়। ফলে বইয়ের বন্ডের ষাট বছর মিডিয়ায় ততটা গুরুত্ব পাবে না, যতটা গুরুত্ব পেয়েছে সিনেমার বন্ডের ৫০ বছর। তবে বইয়ের বন্ডের আবির্ভাব ব্রিটেনের ইতিহাসে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। ইয়ান ল্যানচেস্টার ফ্লেমিং, সংক্ষেপে ইয়ান ফ্লেমিং যখন বন্ড চরিত্র সৃষ্টি করেন, তখন ব্রিটেন রীতিমতো যুদ্ধবিধ্বস্ত ও হতাশাগ্রস্ত একটি দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছাপ তার পরতে পরতে। ব্রিটেনের মানুষেরা ততদিনে বুঝে গেছে, পৃথিবীতে তাদের আধিপত্যের যুগ শেষ। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের নিচেই তাদের সম্মানজনক অবস্থান খুঁজতে হবে। এ অবস্থায় ব্রিটেনের দরকার ছিল একজন নায়কের। আর সে নায়কের অভাব পূরণ করেন জেমস বন্ড। যিনি একাই একটি শক্তি। একা লড়েই জয় ছিনিয়ে আনতে পারেন। অসাধারণ বুদ্ধি দিয়ে পরাস্ত করতে পারেন একটি সেনাবাহিনীকে। আর বিভিন্ন অভিযানে মার্কিনিরাও পালন করেন তার সহকারীর ভূমিকা। বলাবাহুল্য, বন্ডের এই অবস্থান তাকে ব্রিটিশদের নায়ক করে তোলে। বাস্তব বিশ্বে মার খাওয়া ব্রিটিশরা স্বস্তি পায় এই কাল্পনিক চরিত্রের মধ্যে। প্রচণ্ড জনপ্রিয়তাও অর্জন করে চরিত্রটি। জেসম বন্ডের এই ভূমিকা নিয়ে বিশ্লেষণমূলক লেখালেখি হয়েছে। একটি বইয়ের নাম বিশেষভাবে বলা যায়, 'দি ম্যান হু সেভড ব্রিটেন :এ পার্সোনাল জার্নি ইনটু দ্য ডিস্টার্বিং ওয়ার্ল্ড অব জেমস বন্ড'। সাইমন ওয়াইন্ডরের বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। বন্ডের অনেক নায়কোচিত ভূমিকার কথা আমরা জানি। কিন্তু ব্রিটিশদের মনোজগতে তিনি যে আস্থার সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন, সে ইতিহাস কয়জনের জানা?
No comments