পবিত্র কোরআনের আলো-সত্য গোপনকারীদের প্রতি আল্লাহ, ফিরিশতা ও মানবকুলের অভিসম্পাত

১৫৯. ইন্নাল্লাযীনা ইয়াকতুমূনা মা আন্যাল্না মিনাল বায়্যিনাতি ওয়াল হুদা মিম্ বা'দি মা বাইয়্যান্নাহু লিন্নাসি ফিল কিতাবি; উলায়িকা ইয়াল্'আনুহুমুল্লাহু ওয়া ইয়াল্'আনুহুমুল্লা'য়িনূন। ১৬০. ইল্লাল্লাযীনা তাবূ ওয়া আস্লাহূ ওয়া বাইয়্যানূ ফা-উলায়িকা আতূবু 'আলাইহিম ওয়া আনাত্ তাওয়্যাবুর রাহিম।


১৬১. ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ ওয়া মাতূ ওয়া হুম কুফ্ফারুন উলায়িকা 'আলাইহিম লা'নাতুল্লাহি ওয়াল মালায়িকাতি ওয়ান্নাসি আজমা'য়ীন।
১৬২. খালিদীনা ফীহা; লা ইউখাফ্ফাফু 'আন্হুমুল 'আযাবু ওয়া লাহুম ইউন্জারূন। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৫৯-১৬২)

অনুবাদ
১৫৯. মানুষের জন্য যেসব বিধান আমি কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, তারপর যারা আমার নাজিল করা সুস্পষ্ট বর্ণনা ও পথনির্দেশগুলো গোপন করে, এরাই সেসব লোক, যাদের ওপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অভিশাপ বর্ষণ করেন অন্য অভিশাপকারীরাও।
১৬০. তবে যারা এ কাজ থেকে ফিরে আসে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তারা সেসব সত্য প্রকাশ করে দেয়, এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের ওপর আমি দয়াপরবশ হব, আমি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
১৬১. যারা অবাধ্য হয়েছে এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছে তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, ফিরিশতাদের অভিশাপ এবং অভিশাপ সমগ্র মানবকুলের।
১৬২. এরা সেখানে চিরদিন থাকবে, এদের ওপর থেকে আজাব কখনো কমানো হবে না, এদের কোনো রকম অবকাশও দেওয়া হবে না।

ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলো মূলত আহলে কিতাব বা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উদ্দেশ করে নাজিল হয়েছে। তাওরাত, জাবুর ও ইঞ্জিলে শেষ নবীর আগমন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বার্তা আছে। সেসব কিতাবে আল্লাহ তায়ালা শেষ নবীর নাম, বংশ-পরিচয়, আগমনের সময়কালসহ স্পষ্টভাবে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করেছেন, যাতে তারা বুঝতে পারে এবং চিনতে পারে শেষ নবী কে হবেন। আর সেসব কিতাবেই আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে, যখন শেষ নবীর আগমন ঘটবে তখন সব আহলে কিতাবেরই উচিত হবে সেই নবীকে বরণ করে নেওয়া এবং তাঁর ধর্ম গ্রহণ করা। কারণ শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু নতুন ধর্ম নিয়ে আসেননি, তিনি অতীতের সব ধর্মের সংস্কারক হয়েও এসেছেন। ধর্ম আসলে স্থবির বিষয় নয়। মানুষের জীবনধারা ও সভ্যতার গতিশীলতার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মও গতিশীল। তা ছাড়া ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মকে নানাভাবে বিকৃত করে ফেলেছে। তারা তাদের কাছে প্রেরিত আল্লাহর কিতাবসমূহও কাটছাঁট বা রদবদল করেছে। সর্বোপরি তারা নিজ নিজ ধর্মকে কেন্দ্র করে এমন সব কায়েমি স্বার্থ দাঁড় করিয়েছে, সেগুলো সত্য নয়, ন্যায়সংগতও নয়। ওই আয়াতগুলোতে এসব সুবিধাবাদী ও কায়েমি স্বার্থবাদী লোকদের উদ্দেশ করেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। যারা নিজেদের কায়েমি স্বার্থ রক্ষার জন্য সত্য গোপন করে আল্লাহর বাণীগুলোকে পরিবর্তন করে ফেলে বা চেপে রাখার চেষ্টা করে, তাদের ভয়াবহ পরিণতির কথাই এখানে বলা হয়েছে। তবে এখানে তাদের জন্য আশ্বাসবাণীও উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা সত্য গোপন করা থেকে ফিরে আসবে সত্য ও শান্তির পথে, তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত দয়াশীল হবেন। আর যারা অবাধ্য হবে, তাদের প্রতি তিনি অত্যন্ত কঠোর হবেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.