ইরানে মুদ্রামান সংকট-ভড়কে দিতে পারলেও সরকার টলাতে পারবে না

ইরানের মুদ্রামানের ব্যাপক অবনতিতে জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায়ও নেমে এসেছে। অস্থির এ পরিস্থিতি সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনের দিকে গড়াবে কি না_এমন আলোচনা এখন চারদিকে। তবে এ বিক্ষোভকে এখনই প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের জন্য সত্যিকারের হুমকি হিসেবে মানতে নারাজ বিশ্লেষকরা।


চলমান পরিস্থিতিকে আরো তাতিয়ে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে পশ্চিমারা যে কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করছে, তার পরিণতিও 'ব্যাপকভাবে অনিশ্চিত' বলেও তাদের মত।
বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় পশ্চিমারা ইরানের ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়েছে। কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এ অবরোধের মাত্রা আরো কঠোর করা হয়। এতে ইরানি রিয়ালের দাম ক্রমেই কমতে থাকে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। সর্বকালের মধ্যে রিয়ালের দাম সবচেয়ে বেশি কমায় (৪০ শতাংশ) গত বুধবার বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নামে। ইসরায়েল মনে করে, ইরানে দানা বাঁধা এ বিক্ষোভ 'পার্সিয়ান বসন্তে' রূপ নেবে, যা বর্তমান সরকারকে শেষ পর্যন্ত উৎখাত করে ছাড়বে। পশ্চিমা কূটনীতিকরাও এ বিক্ষোভকে সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলেই মনে করেন।
তবে প্যারিসভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক রিলেশন্সের থিয়েরি কোভিলের মত ভিন্ন। তিনি বলেন, 'ইরানের ওপর পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধে দেশবাসী সন্তুষ্ট নয়, এটা সত্য। তবে আমি মনে করি না, এ অসন্তুষ্টি সরকার পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।' তাঁর মতে, পরমাণু কর্মসূচির প্রতি অধিকাংশ ইরানিরই সমর্থন রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমাদের অবরোধ মোকাবিলায়ও তারা প্রস্তুত। কোভিল বলেন, পশ্চিমারা পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করার কৌশল নিয়েছে। আশা করছে, এর মাধ্যমে হয়তো রাজনৈতিক পরিবর্তন হবে এবং পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আদতে তা হওয়ার নয়। কোভিল বলেন, 'ঐতিহাসিকভাবে ইরান বরাবরই পশ্চিমাদের চাপ প্রতিহত করতে চেয়েছে। সুতরাং অবরোধ দিয়ে তাদের দমানো যাবে_আমাদের এমন চিন্তা বাদ দিতে হবে।' ইতিমধ্যে মুদ্রার মান পতনের গতি ঠেকাতে প্রতি রিয়ালের বিপরীতে ডলারের দাম নির্ধারণ করেছে ইরান। গত শনিবার প্রতি ডলারের ক্রয়মূল্য ২৫ হাজার রিয়াল ও বিক্রয়মূল্য ২৬ হাজার রিয়াল নির্ধারণ করেছে সরকার। কোভিলের মতে, অবরোধের ফলে দেশটি আরো একটু দরিদ্র হবে, ব্যস এটুকুই।
এদিকে ইরানের পরমাণু পরিকল্পনার ব্যাপারটিকে 'উন্মাদ' আখ্যা দিয়ে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড গতকাল রবিবার বলেন, এ ব্যাপারে বিশ্বের আরো বেশি কঠোর হওয়া উচিত। আগের দিন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা বলেন, পরমাণু কর্মসূচির প্রশ্নে আন্তর্জাতিক উদ্বেগকে অবশ্যই ইরানকে আমলে নিতে হবে, অন্যথায় তাদের আরো বেশি শাস্তিমূলক অবরোধের মুখোমুখি হতে হবে। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.