ভারত-ওবামা-রমনি বিতর্ক এবং মনমোহনের ভবিষ্যৎ by এম জে আকবর
মার্কিন সরকারের সদ্য প্রকাশ করা তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ব্লুমস্বার্গের একটি প্রতিবেদন গত ৩ অক্টোবর আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর মার্কিন আয় প্রবৃদ্ধির ৯৩ শতাংশই ধনবান এক শতাংশ অর্থাৎ ১১ লাখ পরিবারের পকেটে গেছে।
এটা গত চার দশকের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যকার সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় গ্যাপ। আগাগোড়া একটি পুঁজিবাদী নিউজ সার্ভিস ব্লুমস্বার্গ মন্তব্য করেছে যে, আয় বৈষম্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র উগান্ডাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটা অবশ্যই অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
যিনি মনে করতেন, যে ৪৭ শতাংশ আমেরিকান কর দেয় না, তাদের দরিদ্রই থাকা উচিত, সেই ডিগবাজিতে পারদর্শী মিট রমনি বুধবারের টেলিভিশন বিতর্কে ওবামাকে নাস্তানাবুদ করার মাধ্যমে উদ্দীপ্ত করেছেন রিপাবলিকানদের; ডেমোক্র্যাটদের করেছেন বিপর্যস্ত। সৌভাগ্যক্রমে ওবামার হাতে এখনও নির্বাচনের জন্য আরও এক মাস সময় আছে। এ সময় অনেক প্রশ্নের সুরাহা করার জন্য পর্যাপ্ত। এখন এ প্রশ্নটা নিশ্চিতভাবেই আসবে_ ওবামা কেন এসব তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেননি? এর উত্তর তাৎক্ষণিকভাবেই দেওয়া যায়। আত্মতুষ্টি নামক একটা অপকারী ভাইরাসে ওবামা টিম আক্রান্ত হয়েছিল। তাছাড়া এসব তথ্য জনগণের মধ্যে প্রকাশ পেলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন।
সংবাদপত্র পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে পারে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা নিয়ে নড়াচড়া হচ্ছে, ততক্ষণ তা রাজনৈতিক তথ্যের সারণিতে ঢুকবে না। গত সপ্তাহে এই বাস্তবতার প্রকাশ আমরা নয়াদিলি্লতে দেখেছি। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সোনিয়া গান্ধীর জামাতা রবার্ট ভদ্র নিজেকে একজন বিজনেস জিনিয়াস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একটি বিজনেস হাউসের আনুকূল্যের কারণে তিনি এত টাকার মালিক বনেছেন বলে কিছু সময় ধরে বলাবলিও হচ্ছিল। নয়াদিলি্লতে এটি লুকানো-ছাপানো কোনো বিষয়ও ছিল না। বিশেষ করে সম্পত্তি ক্রয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল। ইকোনমিক টাইমস নামের সংবাদপত্র এ ব্যাপারে একটি তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী ত্রুক্রসেডার অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও শশীভূষণ প্রাসঙ্গিক দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে এ বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত এ দুর্নীতির স্ক্যান্ডালটি মানুষের চেতনায় গেঁথে যায়নি। এখন এটা ভোটারদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।
এ ধরনের আরও অনেক সূক্ষ্ম ঘটনা রয়েছে। ভদ্র এবং তার ব্যবসায়ী বন্ধুরা যে ইউপিএর প্রথমবারের ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বাগাতে ব্যগ্র হয়নি; তা নয়। তবে তাদের তখন ইউপিএ ও এর পরিচালক পরিবারের সতর্কতার কারণে নিজেদের গুটিয়ে রাখতে হয়েছিল। ২০০৯ সালের বিপুল বিজয় ওই পরিবারকে অসতর্ক করে থাকবে।
সংকটের সময় স্পিন ডক্টরদের গুগলি বল ছোড়ার জন্য ভাড়া করা হয়ে থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভদ্রের পক্ষে এখন পর্যন্ত যাদের সওয়াল করতে দেখা যাচ্ছে, তারা বহুলাংশেই মধ্য সারির আস্থাভাজন। এরা মিডিয়ার ওপর তর্জন-গর্জন করছে এবং যারা দুর্নীতি ফাঁস করছে তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এক আইনজীবী বলছেন, বিষয়টা যখন সরকারের কাছে এসেই পড়েছে তখন এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করা সাজে না। হায়! কথা বলা বন্ধ করে দিলেই কি এসব দলিল-দস্তাবেজ অসত্য হয়ে যাবে? দ্বিতীয় এক আস্থাভাজন অভিযোগ করেছেন, ভদ্র সোনিয়া গান্ধীর জামাতা বিধায় তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্যে চিড়ে ভিজবে না।
এটা তো সত্যি যে, গান্ধী পরিবারের সদস্য বিধায় ভদ্র এ ধরনের আনুকূল্য পেয়েছেন। সে যদি তার মোরাদাবাদের প্রতিবেশী কোনো পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করত, তাহলে এভাবে তার প্রপার্টি প্রিন্স হয়ে ওঠা সম্ভব হতো না। এদিক থেকে ওবামার স্পিন ডক্টররা তাদের বেতন হালাল করে নেওয়ার দাবি করতে পারেন। তারা এমন একটা সেন্টিমেন্টাল ইস্যুকে উপস্থাপন করেছেন, যেটা ওবামার বিতর্কের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে। তারা বলেছেন, তাদের প্রার্থী বিতর্কের সময় আনমনা ছিলেন এ কারণে যে, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী মিশেল বিতর্কটা তাদের বিবাহবার্ষিকীর দিনে নেওয়া হয়েছে বলে হতাশ ছিলেন। মিশেল বিবাহবার্ষিকীর দিনে একটা রোমান্টিক ডিনার আশা করছিলেন। এ স্টোরিটি নিঃসন্দেহে মার্কিন বিবাহিত নারীদের আবেগাপ্লুত করবে। বিশেষত, যাদের স্বামী বিবাহবার্ষিকীর কথা মনে রাখতে পারেন না, শুধু তাদের স্ত্রীর ভোটে যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ওবামাকে ভোটে বিজয়ী হওয়ার জন্য কোনো কষ্টই স্বীকার করতে হতো না। মার্কিন নির্বাচনে মহিলা ভোটাররাই নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের স্বার্থেই টেলিভিশন একটা মিথ তৈরি করে, যেটা নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। প্রথম টেলিভিশন বিতর্কের সময় নিক্সনের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকার বিষয়টি ১৯৬০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেনেডির কাছে তার পরাজয়ে আইকনিক কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। আসলে নিক্সন শেভ করতে ভুলে গিয়েছিলেন বলে কেনেডির কাছে হেরেছিলেন_ তা সত্যি নয়। কেনেডি তরুণ প্রজন্মকে অ্যাড্রেস করতে পেরেছিলেন বলেই তার অপ্রত্যাশিত বিজয় সম্ভব হয়েছিল। টেলিভিশন অবশ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের কোর্স নির্ধারণে অবদান রাখে বলে দাবি করা হয়। স্মর্তব্য যে, ওই যুদ্ধে পরাজয়টা সিবিএস স্টুডিওতে হয়নি। হয়েছিল ইন্দোচীনের শস্য মাঠে। টেলিভিশন খারাপ সংবাদ বর্ণিলভাবে দেখায় এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিস্তৃত করে। তবে পেন্টাগন যদি যুদ্ধে জিততে থাকত, তাহলে সহিংসতা বৃদ্ধির পক্ষে হিস্টিরিয়ায় তারাই নেতৃত্ব দিত। কারণ ওই হিস্টিরিয়া আরও বেশি সহিংসতাকে ডেকে আনত। এতে টেলিভিশনের রেটিং বাড়ত। আসলে মিডিয়া স্টোরি বলতে বা প্রকাশ করতে পারে। তবে খুব কমই তারা ফলাফলকে পাল্টাতে পারে।
ওবামা-রমনির নির্বাচনী দ্বৈরথ কীভাবে শেষ হবে? মার্কিন জনগণের অর্ধেক যেমন রমনিকে এক শতাংশ ধনী পরিবারের প্রার্থী বলে বিশ্বাস করে; তারা কি ওবামা মাইক্রোফোনের সামনে আনমনা ছিলেন বলে তাদের মত পরিবর্তন করবে? মহিলারা যারা গর্ভপাতের ব্যাপারে রিপাবলিকানদের শাস্তিমূলক ও আক্রমণমূলক কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত, তারা কি ওবামার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে?
২০০৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএর কাছে অনেক যুক্তি ছিল। কিন্তু কংগ্রেসের কাছে ছিল অধিক সত্য তথ্য-উপাত্ত। ২০০৯ সালের নির্বাচনে তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি_ উভয় ক্ষেত্রেই মনমোহন সিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন তার যুক্তি সহকর্মীদের দুর্নীতির চোরাবালিতে পথ হারিয়েছে এবং তথ্য-উপাত্ত দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সংযোগহীন হয়ে পড়েছে।
এম জে আকবর :দিলি্ল থেকে প্রকাশিত সানডে গার্ডিয়ানের সম্পাদক; খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
যিনি মনে করতেন, যে ৪৭ শতাংশ আমেরিকান কর দেয় না, তাদের দরিদ্রই থাকা উচিত, সেই ডিগবাজিতে পারদর্শী মিট রমনি বুধবারের টেলিভিশন বিতর্কে ওবামাকে নাস্তানাবুদ করার মাধ্যমে উদ্দীপ্ত করেছেন রিপাবলিকানদের; ডেমোক্র্যাটদের করেছেন বিপর্যস্ত। সৌভাগ্যক্রমে ওবামার হাতে এখনও নির্বাচনের জন্য আরও এক মাস সময় আছে। এ সময় অনেক প্রশ্নের সুরাহা করার জন্য পর্যাপ্ত। এখন এ প্রশ্নটা নিশ্চিতভাবেই আসবে_ ওবামা কেন এসব তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেননি? এর উত্তর তাৎক্ষণিকভাবেই দেওয়া যায়। আত্মতুষ্টি নামক একটা অপকারী ভাইরাসে ওবামা টিম আক্রান্ত হয়েছিল। তাছাড়া এসব তথ্য জনগণের মধ্যে প্রকাশ পেলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন।
সংবাদপত্র পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে পারে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা নিয়ে নড়াচড়া হচ্ছে, ততক্ষণ তা রাজনৈতিক তথ্যের সারণিতে ঢুকবে না। গত সপ্তাহে এই বাস্তবতার প্রকাশ আমরা নয়াদিলি্লতে দেখেছি। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সোনিয়া গান্ধীর জামাতা রবার্ট ভদ্র নিজেকে একজন বিজনেস জিনিয়াস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একটি বিজনেস হাউসের আনুকূল্যের কারণে তিনি এত টাকার মালিক বনেছেন বলে কিছু সময় ধরে বলাবলিও হচ্ছিল। নয়াদিলি্লতে এটি লুকানো-ছাপানো কোনো বিষয়ও ছিল না। বিশেষ করে সম্পত্তি ক্রয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল। ইকোনমিক টাইমস নামের সংবাদপত্র এ ব্যাপারে একটি তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী ত্রুক্রসেডার অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও শশীভূষণ প্রাসঙ্গিক দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে এ বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত এ দুর্নীতির স্ক্যান্ডালটি মানুষের চেতনায় গেঁথে যায়নি। এখন এটা ভোটারদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।
এ ধরনের আরও অনেক সূক্ষ্ম ঘটনা রয়েছে। ভদ্র এবং তার ব্যবসায়ী বন্ধুরা যে ইউপিএর প্রথমবারের ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বাগাতে ব্যগ্র হয়নি; তা নয়। তবে তাদের তখন ইউপিএ ও এর পরিচালক পরিবারের সতর্কতার কারণে নিজেদের গুটিয়ে রাখতে হয়েছিল। ২০০৯ সালের বিপুল বিজয় ওই পরিবারকে অসতর্ক করে থাকবে।
সংকটের সময় স্পিন ডক্টরদের গুগলি বল ছোড়ার জন্য ভাড়া করা হয়ে থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভদ্রের পক্ষে এখন পর্যন্ত যাদের সওয়াল করতে দেখা যাচ্ছে, তারা বহুলাংশেই মধ্য সারির আস্থাভাজন। এরা মিডিয়ার ওপর তর্জন-গর্জন করছে এবং যারা দুর্নীতি ফাঁস করছে তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এক আইনজীবী বলছেন, বিষয়টা যখন সরকারের কাছে এসেই পড়েছে তখন এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করা সাজে না। হায়! কথা বলা বন্ধ করে দিলেই কি এসব দলিল-দস্তাবেজ অসত্য হয়ে যাবে? দ্বিতীয় এক আস্থাভাজন অভিযোগ করেছেন, ভদ্র সোনিয়া গান্ধীর জামাতা বিধায় তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্যে চিড়ে ভিজবে না।
এটা তো সত্যি যে, গান্ধী পরিবারের সদস্য বিধায় ভদ্র এ ধরনের আনুকূল্য পেয়েছেন। সে যদি তার মোরাদাবাদের প্রতিবেশী কোনো পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করত, তাহলে এভাবে তার প্রপার্টি প্রিন্স হয়ে ওঠা সম্ভব হতো না। এদিক থেকে ওবামার স্পিন ডক্টররা তাদের বেতন হালাল করে নেওয়ার দাবি করতে পারেন। তারা এমন একটা সেন্টিমেন্টাল ইস্যুকে উপস্থাপন করেছেন, যেটা ওবামার বিতর্কের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে। তারা বলেছেন, তাদের প্রার্থী বিতর্কের সময় আনমনা ছিলেন এ কারণে যে, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী মিশেল বিতর্কটা তাদের বিবাহবার্ষিকীর দিনে নেওয়া হয়েছে বলে হতাশ ছিলেন। মিশেল বিবাহবার্ষিকীর দিনে একটা রোমান্টিক ডিনার আশা করছিলেন। এ স্টোরিটি নিঃসন্দেহে মার্কিন বিবাহিত নারীদের আবেগাপ্লুত করবে। বিশেষত, যাদের স্বামী বিবাহবার্ষিকীর কথা মনে রাখতে পারেন না, শুধু তাদের স্ত্রীর ভোটে যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ওবামাকে ভোটে বিজয়ী হওয়ার জন্য কোনো কষ্টই স্বীকার করতে হতো না। মার্কিন নির্বাচনে মহিলা ভোটাররাই নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের স্বার্থেই টেলিভিশন একটা মিথ তৈরি করে, যেটা নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। প্রথম টেলিভিশন বিতর্কের সময় নিক্সনের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকার বিষয়টি ১৯৬০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেনেডির কাছে তার পরাজয়ে আইকনিক কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। আসলে নিক্সন শেভ করতে ভুলে গিয়েছিলেন বলে কেনেডির কাছে হেরেছিলেন_ তা সত্যি নয়। কেনেডি তরুণ প্রজন্মকে অ্যাড্রেস করতে পেরেছিলেন বলেই তার অপ্রত্যাশিত বিজয় সম্ভব হয়েছিল। টেলিভিশন অবশ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের কোর্স নির্ধারণে অবদান রাখে বলে দাবি করা হয়। স্মর্তব্য যে, ওই যুদ্ধে পরাজয়টা সিবিএস স্টুডিওতে হয়নি। হয়েছিল ইন্দোচীনের শস্য মাঠে। টেলিভিশন খারাপ সংবাদ বর্ণিলভাবে দেখায় এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিস্তৃত করে। তবে পেন্টাগন যদি যুদ্ধে জিততে থাকত, তাহলে সহিংসতা বৃদ্ধির পক্ষে হিস্টিরিয়ায় তারাই নেতৃত্ব দিত। কারণ ওই হিস্টিরিয়া আরও বেশি সহিংসতাকে ডেকে আনত। এতে টেলিভিশনের রেটিং বাড়ত। আসলে মিডিয়া স্টোরি বলতে বা প্রকাশ করতে পারে। তবে খুব কমই তারা ফলাফলকে পাল্টাতে পারে।
ওবামা-রমনির নির্বাচনী দ্বৈরথ কীভাবে শেষ হবে? মার্কিন জনগণের অর্ধেক যেমন রমনিকে এক শতাংশ ধনী পরিবারের প্রার্থী বলে বিশ্বাস করে; তারা কি ওবামা মাইক্রোফোনের সামনে আনমনা ছিলেন বলে তাদের মত পরিবর্তন করবে? মহিলারা যারা গর্ভপাতের ব্যাপারে রিপাবলিকানদের শাস্তিমূলক ও আক্রমণমূলক কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত, তারা কি ওবামার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে?
২০০৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএর কাছে অনেক যুক্তি ছিল। কিন্তু কংগ্রেসের কাছে ছিল অধিক সত্য তথ্য-উপাত্ত। ২০০৯ সালের নির্বাচনে তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি_ উভয় ক্ষেত্রেই মনমোহন সিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন তার যুক্তি সহকর্মীদের দুর্নীতির চোরাবালিতে পথ হারিয়েছে এবং তথ্য-উপাত্ত দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সংযোগহীন হয়ে পড়েছে।
এম জে আকবর :দিলি্ল থেকে প্রকাশিত সানডে গার্ডিয়ানের সম্পাদক; খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments