যৌন উত্তেজক ঔষধ: কাঁচামাল গোপনে বাংলাদেশে আসছে যে কারণে
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বেনাপোল বন্দরে যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রার সমগোত্রীয় ঔষধ তৈরির কাঁচামাল জব্দ করেছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ।
মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করা হচ্ছিল।
শুল্ক কর্তৃপক্ষ গত কয়েকমাসে একাধিকার এ ধরণের চলান আটক করা করেছে।
ঔষধ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেছেন, বাংলাদেশে যৌন উত্তেজক ঔষধের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যৌন উত্তেজক ঔষধের কাঁচামাল চোরাপথে আসা এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে এ ধরণের ঔষধের ব্যাপক চাহিদা আছে।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক
মুনীরউদ্দিন আহমদ বলেন, যৌন উত্তেজক ঔষধের কাঁচামাল এখন নানাপথে বাংলাদেশে
প্রবেশ করছে।
অধ্যাপক আহমদ বলেন, "এটার ডিমান্ড প্রচুর বাংলাদেশে।
যেসব ঔষধের চাহিদা বেশি থাকে, সেটা নকল এবং ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
থাকে। এবং বিদেশ থেকে চোরাপথে কাঁচামাল এনে এখানে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা
হয়। "
বিশ্বখ্যাত ঔষধ কোম্পানি ফাইজার ভায়াগ্রা আবিষ্কার করেছে। এটা তাদের ব্র্যান্ড নাম। এই ঔষধের জেনেরিক নাম সিলডেনাফিল।
প্রথম যখন এটি উদ্ভাবন করা হয় তখন এনিয়ে বেশ শঙ্কা ছিল।
অধ্যাপক
আহমদ বলেন, যারা ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ভুগছেন বা যা লিঙ্গোত্থান ঘটেনা তাদের
জন্য সীমিত আকারে চিকিৎসকের পরামর্শে এটি সেবনের অনুমোদন দেয়া হয়। এ ঔষধ
নিয়ে বেশ কড়াকড়ি আছে।
একসময় বাংলাদেশে ভায়াগ্রা সমগোত্রীয় ঔষধ নিষিদ্ধ থাকলেও কয়েক বছর আগে সরকার কিছু কোম্পানিকে এসব ঔষধ তৈরির অনুমোদন দিয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশে
অসংখ্য রোগী আছেন, যারা ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ভুগছে, তাদের কথা চিন্তা করে
এই অনুমতি দেয়া হয়।"
দেশের ভেতরে ঔষধ না পেয়ে অনেকে বিদেশে গিয়ে
ঔষধ আনতো নানা উপায়ে। ফলে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ চলে যাচ্ছিল বলে সে
কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
ভায়াগ্রা সমগোত্রীয় ঔষধের অনুমোদন দেবার ক্ষেত্রে সেটিও একটি কারণ ছিল।
কর্মকর্তারা
বলছেন, যেসব উপাদান দিয়ে ফাইজার কোম্পানি ভায়াগ্রা উৎপাদন করে সেসব
উপাদান দিয়েই বিভিন্ন নামে বাংলাদেশে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট প্রস্তুত হচ্ছে
বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে যেসব কোম্পানি এ ঔষধ তৈরি করে তারা নিজেদের
নাম দিয়ে তৈরি করে। এসব ঔষধের কার্যকারিতা এবং উপাদান ভায়াগ্রার মতো বলে
উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যৌন উত্তেজক ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতা
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে যৌন উত্তেজক ঔষধের চাহিদা বেড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সেজন্য ভায়াগ্রা সমগোত্রীয় ঔষধ বাংলাদেশে উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ বাধ্যতামূলক।
কিন্তু
বাস্তব চিত্র কিছুটা ভিন্ন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকের পরামর্শ
ছাড়া এ ধরণের ঔষধ গ্রহণ করা একেবারেই অনুচিত বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক
আহমদ।
তিনি বলেন, "এই ঔষধটা খুবই ভয়ঙ্কর ঔষধ। যাদের হার্ট অ্যাটাক
এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। এটা
ব্যবহারে প্রচণ্ড রিস্ক আছে। "
সেজন্য এই ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে খোলামেলা আলাপ করতে হবে।
বাংলাদেশে
এটি ঠিকমতো মানা হচ্ছেনা বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক আহমদ বলেন, "ডাক্তারের
কাছে গিয়ে অনেকে নিজের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দুর্বলতার কথা খোলাখুলি প্রকাশ
করতে চায়না। সেজন্য অনেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এ ধরণের ঔষধ কিনছে"
No comments