দূরপাল্লার মিসাইল, সামরিক চুক্তি ও একটি টুইট: দক্ষিণ চীন সাগরের নতুন কৌশলগত বাস্তবতা by শ্রিজান শুক্লা
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ক্ষমতার খেলা
সাম্প্রতিক তিনটি পরস্পরবিচ্ছিন্ন ঘটনায় দক্ষিণ চীন সাগরে ক্ষমতার ভারসাম্যে মৌলিক পরিবর্তনের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রথমটি হলো ওই অঞ্চলে চীনের জাহাজ বিধ্বংসী ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা। দ্বিতীয়টি, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দূতার্তের ফিলিপাইন-ইউএস মিউচুয়াল ডিফেন্স প্যাক্ট আহ্বান। আর তৃতীয়টি, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চোক পয়েন্টগুলোর নিরাপত্তায় অন্যান্য দেশকে অবদান রাখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তাড়া।
চীনের ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা
গত মাসে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) রকেট ফোর্স বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে জাহাজ বিধ্বসী ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে চীন দূর-পাল্লার ডিএফ-২১ডি ও ডিএফ-২৬ পরীক্ষা করেছে।
‘ক্যারিয়ার কিলার’ নামে পারিচিত ডিএফ-২১ডি মিসাইলের পাল্লা ১,৫০০ কিলোমিটার। আর ডিএফ-২৬-এর পাল্লা ৪,০০০ কিলোমিটার।
কৌশলগত বিশ্লেষক অনকিত পান্ডা তার এক কলামে লিখেন, চীনের অস্ত্রভাণ্ডারে এসব মিসাইলের উপস্থিতি দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌআধিপত্যকে খর্ব করবে।
এসব মিসাইল দিয়ে চীন ওই অঞ্চলে গুয়ামের মতো মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে টার্গেট করতে পারবে।
পান্ডা লিখেন, পিএলএ’র জন্য বিজয়ের ধারণা পাওয়া খুবই সহজ: যুদ্ধ ছাড়াই জয়ী হওয়া। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দেয়া যে যেকোন সংঘাতের মূল্য হবে অকল্পনীয় বড় এবং অনিশ্চয়তায় ভরা।
দূতার্তের ফিলিপাইন-ইউএস মিউচুয়াল ডিফেন্স প্যাক্ট আহ্বান
সাম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে দুতার্তে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান নৌ আগ্রাসন প্রতিরোধ করে ফিলিপাইনকে রক্ষার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
দুতার্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের মধ্যে ১৯৫১ সালে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয় তা কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ‘সপ্তম নৌবহর’ পাঠানো।
গত মাসে চীনের একটি জাহাজ ফিলিপাইনের একটি মাছধরা জাহাজকে ধাক্কা দিয়ে বেশ কয়েকজন জেলেকে হত্যার পর দুতার্তে ওই আহ্বান জানান।
কথার কথা নাকি গুরুত্ব দিয়েই দুতার্তে এই দাবি করেছেন তা পরিষ্কার নয়। এরপরও এতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য ক্ষুদ্র দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া নিয়ে আলোচনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব চুক্তি দেশগুলোকে কার্যকরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতার নিয়ে নিয়ে গেছে এবং দেশগুলোকে মার্কিন মিত্রে পরিণত করেছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের আশপাশের ক্ষুদ্র দেশগুলো চীনের ক্রমবর্ধমান ইচ্ছা প্রয়োগের মুখে অনিরাপদ বোধ করছে। অন্যদিকে নিজেকে নিয়ে মশগুল মার্কিন সরকার এসব দেশের নিরাপত্তাহীনতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে – তাদেরকে আমেরিকার নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিগুলো খুঁজে বের করতে বাধ্য করছে।
ট্রাম্পের দাবি
সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে অন্যান্য শক্তিগুলোকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় আরো বেশি অবদান রাখার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পণ্য ও যাত্রীদের অবাধ চলাচলের জন্য এসব চোক পয়েন্টের নিরাপত্তা রক্ষা জরুরি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের নয়টি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট পাহারা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটি বিশ্বব্যাপী নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চোক পয়েন্ট হলো দক্ষিণ চীন সাগরের মালাক্কা প্রণালী। প্রতি বছর এই চোক পয়েন্ট দিয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের মালামাল আনা নেয়া হয়।
গত এক দশকে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বাড়লেও মালাক্কা প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের পাহারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের সম্প্রতিক মন্তব্য আমেরিকান প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে এক নতুন কৌশলগত বাস্তবতা
উপরোক্ত তিনটি ঘটনার মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগর ও সার্বিকভাবে গোটা এশিয়ার শৃঙ্খলার একটি মৌলিক পরিবর্তন ফুটে উঠেছে।
চীনের নৌসামর্থ্য বৃদ্ধির বিপরীতে দক্ষিণ সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্য দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। চীনের আগ্রাসী নীতি মার্কিন মিত্রদের বাধ্য করছে তাদেরকে রক্ষায় আমেরিকান প্রতিশ্রুতি ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে।
তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিত্রদের উদ্বেগ দূর করার বদলে যুক্তরাষ্ট্র যে তাদের রক্ষায় অনিচ্ছুক, বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির কাছ থেকে তেমনই ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক তিনটি পরস্পরবিচ্ছিন্ন ঘটনায় দক্ষিণ চীন সাগরে ক্ষমতার ভারসাম্যে মৌলিক পরিবর্তনের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রথমটি হলো ওই অঞ্চলে চীনের জাহাজ বিধ্বংসী ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা। দ্বিতীয়টি, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দূতার্তের ফিলিপাইন-ইউএস মিউচুয়াল ডিফেন্স প্যাক্ট আহ্বান। আর তৃতীয়টি, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চোক পয়েন্টগুলোর নিরাপত্তায় অন্যান্য দেশকে অবদান রাখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তাড়া।
চীনের ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা
গত মাসে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) রকেট ফোর্স বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে জাহাজ বিধ্বসী ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে চীন দূর-পাল্লার ডিএফ-২১ডি ও ডিএফ-২৬ পরীক্ষা করেছে।
‘ক্যারিয়ার কিলার’ নামে পারিচিত ডিএফ-২১ডি মিসাইলের পাল্লা ১,৫০০ কিলোমিটার। আর ডিএফ-২৬-এর পাল্লা ৪,০০০ কিলোমিটার।
কৌশলগত বিশ্লেষক অনকিত পান্ডা তার এক কলামে লিখেন, চীনের অস্ত্রভাণ্ডারে এসব মিসাইলের উপস্থিতি দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌআধিপত্যকে খর্ব করবে।
এসব মিসাইল দিয়ে চীন ওই অঞ্চলে গুয়ামের মতো মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে টার্গেট করতে পারবে।
পান্ডা লিখেন, পিএলএ’র জন্য বিজয়ের ধারণা পাওয়া খুবই সহজ: যুদ্ধ ছাড়াই জয়ী হওয়া। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দেয়া যে যেকোন সংঘাতের মূল্য হবে অকল্পনীয় বড় এবং অনিশ্চয়তায় ভরা।
দূতার্তের ফিলিপাইন-ইউএস মিউচুয়াল ডিফেন্স প্যাক্ট আহ্বান
সাম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে দুতার্তে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান নৌ আগ্রাসন প্রতিরোধ করে ফিলিপাইনকে রক্ষার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
দুতার্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের মধ্যে ১৯৫১ সালে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয় তা কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ‘সপ্তম নৌবহর’ পাঠানো।
গত মাসে চীনের একটি জাহাজ ফিলিপাইনের একটি মাছধরা জাহাজকে ধাক্কা দিয়ে বেশ কয়েকজন জেলেকে হত্যার পর দুতার্তে ওই আহ্বান জানান।
কথার কথা নাকি গুরুত্ব দিয়েই দুতার্তে এই দাবি করেছেন তা পরিষ্কার নয়। এরপরও এতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য ক্ষুদ্র দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া নিয়ে আলোচনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব চুক্তি দেশগুলোকে কার্যকরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতার নিয়ে নিয়ে গেছে এবং দেশগুলোকে মার্কিন মিত্রে পরিণত করেছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের আশপাশের ক্ষুদ্র দেশগুলো চীনের ক্রমবর্ধমান ইচ্ছা প্রয়োগের মুখে অনিরাপদ বোধ করছে। অন্যদিকে নিজেকে নিয়ে মশগুল মার্কিন সরকার এসব দেশের নিরাপত্তাহীনতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে – তাদেরকে আমেরিকার নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিগুলো খুঁজে বের করতে বাধ্য করছে।
ট্রাম্পের দাবি
সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে অন্যান্য শক্তিগুলোকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় আরো বেশি অবদান রাখার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পণ্য ও যাত্রীদের অবাধ চলাচলের জন্য এসব চোক পয়েন্টের নিরাপত্তা রক্ষা জরুরি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের নয়টি গুরুত্বপূর্ণ চোক পয়েন্ট পাহারা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটি বিশ্বব্যাপী নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চোক পয়েন্ট হলো দক্ষিণ চীন সাগরের মালাক্কা প্রণালী। প্রতি বছর এই চোক পয়েন্ট দিয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের মালামাল আনা নেয়া হয়।
গত এক দশকে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বাড়লেও মালাক্কা প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের পাহারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের সম্প্রতিক মন্তব্য আমেরিকান প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে এক নতুন কৌশলগত বাস্তবতা
উপরোক্ত তিনটি ঘটনার মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগর ও সার্বিকভাবে গোটা এশিয়ার শৃঙ্খলার একটি মৌলিক পরিবর্তন ফুটে উঠেছে।
চীনের নৌসামর্থ্য বৃদ্ধির বিপরীতে দক্ষিণ সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্য দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। চীনের আগ্রাসী নীতি মার্কিন মিত্রদের বাধ্য করছে তাদেরকে রক্ষায় আমেরিকান প্রতিশ্রুতি ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে।
তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিত্রদের উদ্বেগ দূর করার বদলে যুক্তরাষ্ট্র যে তাদের রক্ষায় অনিচ্ছুক, বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির কাছ থেকে তেমনই ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে।
No comments