বাংলাদেশে গুমের সাথে যোগ হয়েছে অস্বীকারের প্রবণতা by মীনাক্ষি গাঙ্গুলি
বাংলাদেশে
সরকারের হেফাজতে মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ
এ সব অভিযোগ নাকচ করে আসছে। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিশ্বস্ত বিবরণ পাওয়া
গেছে যে, তারা সরকারী বাহিনীকে ওই সব অসহায় ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে যেতে
দেখেছে। ঢাকায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলো বেপরোয়া হয়ে প্রশ্নের উত্তর
খুঁজছে, নিদ্রাহীন রাত কাটছে তাদের। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার অফিসের
বাইরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন তারা, এবং প্রায়ই তাদের অভিযোগগুলোকে
নাকচ করে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সম্প্রতি প্রথমবারের মতো নির্যাতন বিরোধী ইউনাইটেড নেশানস কমিটির পর্যালোচনায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে যদিও ২০ বছর আগে দেশটি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় যুক্ত হয়। এই কমিটি যখন বাংলাদেশকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে গুমের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য চাপ দিয়েছে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর রিপোর্টে যে সব গুমের খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছে, তখন সরকার তাদের গতানুগতিক ধারায় এগুলোকে অস্বীকার করেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কমিটিকে বলেছেন, “আমরা এই প্রস্তাবের সাথে একমত নই যে, বাংলাদেশে ঘন ঘন গুমের ঘটনা ঘটছে”।
উল্টো হক দাবি করেন যে, “বেশ কিছু কাল ধরে একটা প্রবণতা চালু হয়েছে যে, যে কোন ধরনের নিখোঁজের ঘটনাকে গুম বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার ও তাদের অর্জনকে খাটো করার জন্যই সচেতনভাবে এটা করা হচ্ছে”।
বাংলাদেশ সরকারের অর্জনকে খাটো করার কোন আগ্রহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই। তারা শুধু সার্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য তাদের দায় নিশ্চিত করতে চায় এবং তাদের নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। ১০ আগস্ট, কমিটি বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশ পেশ করেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের পরিচিত সমস্ত বন্দী শিবিরের একটা তালিকা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে এবং সেখানে যাতে বেসররকারী সংগঠননের প্রতিনিধিরা পূর্বঘোষণা ছাড়াই সফর করতে পারে এবং সেখানকার বন্দীদের সাথে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। কমিটি একই সাথে সমস্ত গুমের ঘটনার স্বাধীন ও বিশদ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো, এটা হয়তো হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন, তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার বদলে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রায় অবাধে বিরোধী নেতাকর্মী, তার সমালোচকদের বাছবিচারহীনভাবে আটক করছে। বহু ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না এনে তাদেরকে বহু সপ্তাহ ও মাস ধরে কাস্টডিতে রাখা হয়েছে – যেটা সাধারণত গোপন বন্দীশালা। অন্যদেরকে হত্যা করা হয়েছে, যেগুলোকে সরকার ‘গুলি বিনিময়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, এবং অনেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।
২০১৩ সালের টর্চার অ্যাড কাস্টডিয়াল ডেথ (প্রিভেনশান) অ্যাক্ট প্রণয়ের পর থেকে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা আসলে বেড়ে গেছে।
আইনমন্ত্রী হক বলেন যে, বাংলাদেশের আইনের অধীনে, বাংলাদেশের সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা সকল অপহরণের ঘটনায় মামলা দায়ের করতে বাধ্য। বাস্তবে, পুলিশ প্রায়ই নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে মামলা করতে দেয় না, বিশেষ করে যে সব ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের হাতে তারা অপহৃত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর অন্তত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছেন যে, র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তারা বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সুপরিচিত স্থানীয় নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ও আরও পাঁচজনকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু পরিবারের লোকেরা যখন স্থানীয় পুলিশ স্টেশানে অভিযোগ দিতে যান, তখন কর্তব্যরত কর্মকর্তা র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা নিতে রাজি হননি।
এর পর থেকে সুমনের পরিবারের সদস্যরা অন্তত ১৩টি লিখিত অভিযোগ করেছেন র্যাবের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও সামরিক গোয়েন্দাসহ সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আরও পাঁচটি অভিযোগ করেছেন। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন তারা এবং আদালতে একটি পিটিশনও দাখিল করেছেন তারা। এই ব্যাপক প্রচেষ্টার পরও তাদেরকে এটা জানানো হয়নি যে, সুমনের কি হয়েছে।
হক দাবি করেন, এই লোকগুলোকে পরে যে পাওয়া যাচ্ছে, সেটাই ‘প্রমাণ করে যে গুমের অভিযোগ সত্য নয়”। কিন্তু গুম হলো রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি কর্তৃক কাউকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা, সে কোথায় আছে সেটা স্বীকারে রাষ্ট্রের অস্বীকৃতি, তা সে পরে যেভাবেই ফিরে আসুক না কেন। প্রশ্ন হলো, এই মানুষগুলো এতদিন কোথায় ছিল এবং তাদের কি হয়েছিল, যে বিষয়টির তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এই মানুষগুলো – যাদের সংখ্যা শত শত – তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে, সে জন্য সরকারের দায় নেয়া উচিত এবং যে আইন তারা উচ্চকিত রাখার দাবি করেন, সেই আইন তাদের মেনে চলা উচিত।
>>>মীনাক্ষি গাঙ্গুলি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাউথ এশিয়া ডিরেক্টর
বাংলাদেশ সম্প্রতি প্রথমবারের মতো নির্যাতন বিরোধী ইউনাইটেড নেশানস কমিটির পর্যালোচনায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে যদিও ২০ বছর আগে দেশটি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় যুক্ত হয়। এই কমিটি যখন বাংলাদেশকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে গুমের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য চাপ দিয়েছে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর রিপোর্টে যে সব গুমের খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছে, তখন সরকার তাদের গতানুগতিক ধারায় এগুলোকে অস্বীকার করেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কমিটিকে বলেছেন, “আমরা এই প্রস্তাবের সাথে একমত নই যে, বাংলাদেশে ঘন ঘন গুমের ঘটনা ঘটছে”।
উল্টো হক দাবি করেন যে, “বেশ কিছু কাল ধরে একটা প্রবণতা চালু হয়েছে যে, যে কোন ধরনের নিখোঁজের ঘটনাকে গুম বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার ও তাদের অর্জনকে খাটো করার জন্যই সচেতনভাবে এটা করা হচ্ছে”।
বাংলাদেশ সরকারের অর্জনকে খাটো করার কোন আগ্রহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই। তারা শুধু সার্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য তাদের দায় নিশ্চিত করতে চায় এবং তাদের নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। ১০ আগস্ট, কমিটি বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশ পেশ করেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের পরিচিত সমস্ত বন্দী শিবিরের একটা তালিকা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে এবং সেখানে যাতে বেসররকারী সংগঠননের প্রতিনিধিরা পূর্বঘোষণা ছাড়াই সফর করতে পারে এবং সেখানকার বন্দীদের সাথে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। কমিটি একই সাথে সমস্ত গুমের ঘটনার স্বাধীন ও বিশদ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো, এটা হয়তো হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন, তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার বদলে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ প্রায় অবাধে বিরোধী নেতাকর্মী, তার সমালোচকদের বাছবিচারহীনভাবে আটক করছে। বহু ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না এনে তাদেরকে বহু সপ্তাহ ও মাস ধরে কাস্টডিতে রাখা হয়েছে – যেটা সাধারণত গোপন বন্দীশালা। অন্যদেরকে হত্যা করা হয়েছে, যেগুলোকে সরকার ‘গুলি বিনিময়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, এবং অনেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।
২০১৩ সালের টর্চার অ্যাড কাস্টডিয়াল ডেথ (প্রিভেনশান) অ্যাক্ট প্রণয়ের পর থেকে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা আসলে বেড়ে গেছে।
আইনমন্ত্রী হক বলেন যে, বাংলাদেশের আইনের অধীনে, বাংলাদেশের সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা সকল অপহরণের ঘটনায় মামলা দায়ের করতে বাধ্য। বাস্তবে, পুলিশ প্রায়ই নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে মামলা করতে দেয় না, বিশেষ করে যে সব ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের হাতে তারা অপহৃত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর অন্তত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছেন যে, র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তারা বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সুপরিচিত স্থানীয় নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ও আরও পাঁচজনকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু পরিবারের লোকেরা যখন স্থানীয় পুলিশ স্টেশানে অভিযোগ দিতে যান, তখন কর্তব্যরত কর্মকর্তা র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা নিতে রাজি হননি।
এর পর থেকে সুমনের পরিবারের সদস্যরা অন্তত ১৩টি লিখিত অভিযোগ করেছেন র্যাবের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও সামরিক গোয়েন্দাসহ সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আরও পাঁচটি অভিযোগ করেছেন। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন তারা এবং আদালতে একটি পিটিশনও দাখিল করেছেন তারা। এই ব্যাপক প্রচেষ্টার পরও তাদেরকে এটা জানানো হয়নি যে, সুমনের কি হয়েছে।
হক দাবি করেন, এই লোকগুলোকে পরে যে পাওয়া যাচ্ছে, সেটাই ‘প্রমাণ করে যে গুমের অভিযোগ সত্য নয়”। কিন্তু গুম হলো রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি কর্তৃক কাউকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা, সে কোথায় আছে সেটা স্বীকারে রাষ্ট্রের অস্বীকৃতি, তা সে পরে যেভাবেই ফিরে আসুক না কেন। প্রশ্ন হলো, এই মানুষগুলো এতদিন কোথায় ছিল এবং তাদের কি হয়েছিল, যে বিষয়টির তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এই মানুষগুলো – যাদের সংখ্যা শত শত – তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে, সে জন্য সরকারের দায় নেয়া উচিত এবং যে আইন তারা উচ্চকিত রাখার দাবি করেন, সেই আইন তাদের মেনে চলা উচিত।
>>>মীনাক্ষি গাঙ্গুলি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাউথ এশিয়া ডিরেক্টর
No comments