চোখ কাশ্মীরে, শঙ্কায় ভারতীয় নাগারা by বার্তিল লিন্টনার
নাগা
স্বাধীনতা দিবস সাধারণত ভারতে বড় কোনো ঘটনা নয়। অবশ্য চলতি বছর উপনিবেশিক
ব্রিটেনের কাছ থেকে নাগা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের স্বাধীনতা ঘোষণার বার্ষিকী
পালনের জন্য হাজার হাজার জাতিগত নাগা দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য
নাগাল্যান্ড ও মনিপুরে সমবেত হয়।
অন্যতম উদযাপন অনুষ্ঠান হয় মনিপুরের নাগা-অধ্যুষিত এলাকা সেনাপতিতে। এখানে সাদা তারকা-সংবলিত নীল নাগা পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে সমবেত জনতা নাগা জাতীয় সঙ্গীত গায়।
নাগারা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল ভারতের স্বাধীনতা লাভের এক দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। নাগা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আনগামি জাপু ফিজো এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ আধা-স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা ও এলাকাটিকে কেন্দ্রশাসিত দুটি ভূখণ্ডে বিভক্ত করার নয়া দিল্লির সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মধ্যে চলতি বছর নাগাদের অনুষ্ঠানের বিশেষ তাৎপর্য ছিল।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় জম্মু ও কাশ্মীর যে ধরনের সুবিধা (অন্যান্য এলাকার ভারতীয়রা সেখানে জমি ক্রয় করতে পারত না) পেত, তা ভারতের উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্যও ভোগ করে।
গত ১৪ এপ্রিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী নাগা পিপলস মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইটসের মহাসচিব নিনগুলো ক্রম এবারের স্বাধীনতা দিবসে বেশি লোকের সমবেত হওয়ার কারণ হিসেবে কাশ্মীর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারের নীতির ফলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাপারে ভারত সরকার তার নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরপরই লাল থানহাওয়াল টুইন করেন, উত্তরপূর্বের জনসাধারণের প্রতি রেড এলার্ট। সংবিধানে সংরক্ষিত মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুনাচলের মতো রাজ্যগুলোর জন্য এটি হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বের অনেকে এখন আশঙ্কা করছে যে তারাও তাদের বিশেষ অধিকারগুলো হারাবে। উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্বের অনেক এলাকায় অনুচ্ছেদ ৩৭০ থেকেও কঠোর ব্যবস্থা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম বা অরুনাচল প্রদেশের বাইরের লোকদের এসব এলাকায় প্রবেশের জন্যও তথাকথিত ‘ইনার লাইন পারমিট’ দরকার হয়।
এই নিয়মটি ১৮৭৩ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশনের মাধ্যমে জারি করা হয়। এখনো তা বলাল রয়েছে।
ভারতের নিম্ন এলাকার লোকজন যাতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় গিয়ে ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থে আঘাত হানতে না পারে, সেজন্যই মূলত এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। স্বাধীন ভারতে স্থানীয় উপজাতীয় সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য তা বহাল রাখা হয়।
ভারতীয় সংবিধানে এই তিন রাজ্যের ভূমির মালিকানা ও সম্পদের ব্যবহারে বহিরাগতদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ইনার লাইন পারমিট কেবল মনিপুর নয়, তথাকথিত সেভেন সিস্টার নামের রাজ্যগুলোতেও প্রযোজ্য।
ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাপারে সরকারি ঘোষণার পর উত্তর-পূর্বেও এ ধরনের পরিবর্তন হবে – এমন শঙ্কা দূর করতে ভারতের কর্মকর্তাদের সেখানে ছুটে যাওয়া বিস্ময়কর কোনো ঘটনা নয়।
নাগাল্যান্ডের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত গর্ভনর আর এন রবি ৬ আগস্ট এক সরকারি বিবৃতিতে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের ঘটনার প্রভাব নিয়ে কিছু লোক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই।
১ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে সাবেক উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবি নাগা বিদ্রোহী আন্দোলনের অন্যতম গ্রুপ ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগালিম (ইসাক-মুইভা গ্রুপ)’র সাথে শান্তি আলোচনায় নয়া দিল্লির প্রধান আলোচক ছিলেন।
১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রথমে পাকিস্তানের ও পরে চীনের মধ্যস্ততায় নাগারা বিদ্রোহ করে ভারত থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশে হাজার হাজার নাগা যোদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তাদের অস্ত্র দেয় চীনের নিরাপত্তা বাহিনী।
তাদের অন্যতম থুইনগালেঙ মুইভা চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আদর্শ নিয়ে নাগা দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। তবে এতে করে নাগাদের মধ্যে বিভক্তি ঘটে। এনএসসিএন থেকে আলাদা হয়ে ১৯৮০ সালে নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল (এনএনসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
এনএনসির বর্ষীয়ান নেতা ইসাক চিশি সুইয়ের সহায়তায় মুইভা ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাগালের বাইরে উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। তবে ইসাক ও মুইভা অল্প সময় পরেই মিয়ানমার নাগা মিত্র শানওয়াং শানিয়াং খাপলাঙের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। ফলে তিনি তাদেরকে ১৯৮৮ সালে তার এলাকা থেকে বের করে দেন।
মিয়ানমারের থাকার আশ্রয় হারিয়ে ১৯৯৭ সালে এনএসসিএন (আইএম) সরকারের সাথে আলোচনায় বসে।
তারপর প্রায় ১০০ রাউন্ড আলোচনার পর নাগাল্যান্ডের কয়েক দশকের বিদ্রোহ অবসানের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট একটি কাঠামো চুক্তি হয়।
ভারতের কাছে আট দফা প্রস্তাব পেশ করে এনএসসিএন (আইএম)। এসবের মধ্যে রয়েছে নাগাদের জন্য আলাদা সংবিধান, আলাদা পতাকা, তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট, মুদ্রা, নয়া দিল্লির সাথে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি, জাতিসঙ্ঘে স্থায়ী প্রতিনিধি, এবং সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয় তথা বৃহত্তর নাগা পরিচিতি, যেটাকে বিদ্রোহীরা বলে ‘নাগালিম’ প্রতিষ্ঠা।
প্রস্তাবটি কার্যত সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এতে কেবল নাগাল্যান্ড নয়, মনিপুর, আসাম, অরুনাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারের একটি বড় অংশ (এখানেও নাগারা বাস করে) নিয়ে নাগাদের দেশ গঠনের কথা বলা হয়েছে।
গত জুনে স্থানীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয় যে নয়া দিল্লি এসব দাবি মেনে নিয়েছে। তবে রবি তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এটা স্রেফ গুজব।
তবে জম্মু ও কাশ্মীরে যা ঘটেছে, তাতে করে নয়া দিল্লি নাগাদের দাবি মেনে নেবে, তা মনে হয় না। আবার মনিপুর, আসাম ও অরুনাচল থেকে অংশবিশেষ কেটে নিয়ে নাগাদের দিয়ে দেয়ার যে দাবি জানানো হয়েছে, তাও এসব এলাকার রাজনীতিবিদেরা মেনে নেবেন না।
মনিপুরের ৩০ লাখ লোকের প্রায় ২০ ভাগ নাগা, কিন্তু তারা দাবি করছে ৭০ ভাগ। আসামে নাগা জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের ছোট ছোট পকেট রয়েছে। আর অরুনাচলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কিছু এলাকায় নাগারা সীমাবদ্ধ।
২০১৫ সালের আগস্টে তদানিন্তন আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তারা সহযোগিতামূলক ফেডারেলবাদ ও পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের চেতনা লঙ্ঘন করছেন এনএসসিএনের (আইএম) সাথে বৃহত্তর নাগালিম নিয়ে আলোচনার আগে তার ও অরুনাচল ও মনিপুরের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা না করে।
অন্যদিকে, রবি ১৭ আগস্ট ইন্ডিয়া টুডেতে উদ্ধৃত করা এক বিবৃতির উল্লেখ করে বলেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চান তিন মাসের মধ্যে এনএসসিএনের (আইএম) সাথে আলোচনা করতে।
এনএসসিএনের (আইএম) দাবিগুলো বিবেচনা করলে সেগুলোকে অবাস্তব মনে হবে। মনে হতে পারে যে এই ধরনের চুক্তি হলে নাগাদের সাথে আশপাশের এলাকার বৈরিতা সৃষ্টি হবে। মিজোরামেও ১৯৬০, ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে উপজাতীয় বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৬ সালে চুক্তির পর সেখানে শান্তি বিরাজ করছে।
মনিপুরে যুদ্ধবিরতি না হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটে। এখানে সংঘর্ষ হয় মূলত নাগা আর মেইতেই বিদ্রোহীদের মধ্যে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হলে প্রায় অনিবার্যভাবেই প্রত্যাঘাতের সৃষ্টি হবে। মোদি সরকারও তা জানেন।
তবে ২২ বছর ধরে আলোচনার পরও এনএসসিএনের (আইএম) সাথে কোনো চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি না হওয়ায় ও নাগা বিদ্রোহীদের অতিরিক্ত দাবির ফলে অঞ্চলটি আবার আলোচনায় চলে আসতে পারে। তবে তা কেবল কেন্দ্র আর সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যেই নয়, বিভিন্ন জাতিগত সম্প্রদায়ের মধ্যেও সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যতম উদযাপন অনুষ্ঠান হয় মনিপুরের নাগা-অধ্যুষিত এলাকা সেনাপতিতে। এখানে সাদা তারকা-সংবলিত নীল নাগা পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে সমবেত জনতা নাগা জাতীয় সঙ্গীত গায়।
নাগারা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল ভারতের স্বাধীনতা লাভের এক দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। নাগা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আনগামি জাপু ফিজো এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ আধা-স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা ও এলাকাটিকে কেন্দ্রশাসিত দুটি ভূখণ্ডে বিভক্ত করার নয়া দিল্লির সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মধ্যে চলতি বছর নাগাদের অনুষ্ঠানের বিশেষ তাৎপর্য ছিল।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় জম্মু ও কাশ্মীর যে ধরনের সুবিধা (অন্যান্য এলাকার ভারতীয়রা সেখানে জমি ক্রয় করতে পারত না) পেত, তা ভারতের উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্যও ভোগ করে।
গত ১৪ এপ্রিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী নাগা পিপলস মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইটসের মহাসচিব নিনগুলো ক্রম এবারের স্বাধীনতা দিবসে বেশি লোকের সমবেত হওয়ার কারণ হিসেবে কাশ্মীর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারের নীতির ফলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাপারে ভারত সরকার তার নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরপরই লাল থানহাওয়াল টুইন করেন, উত্তরপূর্বের জনসাধারণের প্রতি রেড এলার্ট। সংবিধানে সংরক্ষিত মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুনাচলের মতো রাজ্যগুলোর জন্য এটি হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বের অনেকে এখন আশঙ্কা করছে যে তারাও তাদের বিশেষ অধিকারগুলো হারাবে। উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্বের অনেক এলাকায় অনুচ্ছেদ ৩৭০ থেকেও কঠোর ব্যবস্থা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম বা অরুনাচল প্রদেশের বাইরের লোকদের এসব এলাকায় প্রবেশের জন্যও তথাকথিত ‘ইনার লাইন পারমিট’ দরকার হয়।
এই নিয়মটি ১৮৭৩ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশনের মাধ্যমে জারি করা হয়। এখনো তা বলাল রয়েছে।
ভারতের নিম্ন এলাকার লোকজন যাতে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় গিয়ে ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থে আঘাত হানতে না পারে, সেজন্যই মূলত এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। স্বাধীন ভারতে স্থানীয় উপজাতীয় সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য তা বহাল রাখা হয়।
ভারতীয় সংবিধানে এই তিন রাজ্যের ভূমির মালিকানা ও সম্পদের ব্যবহারে বহিরাগতদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ইনার লাইন পারমিট কেবল মনিপুর নয়, তথাকথিত সেভেন সিস্টার নামের রাজ্যগুলোতেও প্রযোজ্য।
ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাপারে সরকারি ঘোষণার পর উত্তর-পূর্বেও এ ধরনের পরিবর্তন হবে – এমন শঙ্কা দূর করতে ভারতের কর্মকর্তাদের সেখানে ছুটে যাওয়া বিস্ময়কর কোনো ঘটনা নয়।
নাগাল্যান্ডের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত গর্ভনর আর এন রবি ৬ আগস্ট এক সরকারি বিবৃতিতে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের ঘটনার প্রভাব নিয়ে কিছু লোক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই।
১ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে সাবেক উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবি নাগা বিদ্রোহী আন্দোলনের অন্যতম গ্রুপ ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগালিম (ইসাক-মুইভা গ্রুপ)’র সাথে শান্তি আলোচনায় নয়া দিল্লির প্রধান আলোচক ছিলেন।
১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রথমে পাকিস্তানের ও পরে চীনের মধ্যস্ততায় নাগারা বিদ্রোহ করে ভারত থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশে হাজার হাজার নাগা যোদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তাদের অস্ত্র দেয় চীনের নিরাপত্তা বাহিনী।
তাদের অন্যতম থুইনগালেঙ মুইভা চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আদর্শ নিয়ে নাগা দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। তবে এতে করে নাগাদের মধ্যে বিভক্তি ঘটে। এনএসসিএন থেকে আলাদা হয়ে ১৯৮০ সালে নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল (এনএনসি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
এনএনসির বর্ষীয়ান নেতা ইসাক চিশি সুইয়ের সহায়তায় মুইভা ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাগালের বাইরে উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। তবে ইসাক ও মুইভা অল্প সময় পরেই মিয়ানমার নাগা মিত্র শানওয়াং শানিয়াং খাপলাঙের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। ফলে তিনি তাদেরকে ১৯৮৮ সালে তার এলাকা থেকে বের করে দেন।
মিয়ানমারের থাকার আশ্রয় হারিয়ে ১৯৯৭ সালে এনএসসিএন (আইএম) সরকারের সাথে আলোচনায় বসে।
তারপর প্রায় ১০০ রাউন্ড আলোচনার পর নাগাল্যান্ডের কয়েক দশকের বিদ্রোহ অবসানের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট একটি কাঠামো চুক্তি হয়।
ভারতের কাছে আট দফা প্রস্তাব পেশ করে এনএসসিএন (আইএম)। এসবের মধ্যে রয়েছে নাগাদের জন্য আলাদা সংবিধান, আলাদা পতাকা, তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট, মুদ্রা, নয়া দিল্লির সাথে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি, জাতিসঙ্ঘে স্থায়ী প্রতিনিধি, এবং সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয় তথা বৃহত্তর নাগা পরিচিতি, যেটাকে বিদ্রোহীরা বলে ‘নাগালিম’ প্রতিষ্ঠা।
প্রস্তাবটি কার্যত সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এতে কেবল নাগাল্যান্ড নয়, মনিপুর, আসাম, অরুনাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারের একটি বড় অংশ (এখানেও নাগারা বাস করে) নিয়ে নাগাদের দেশ গঠনের কথা বলা হয়েছে।
গত জুনে স্থানীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয় যে নয়া দিল্লি এসব দাবি মেনে নিয়েছে। তবে রবি তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এটা স্রেফ গুজব।
তবে জম্মু ও কাশ্মীরে যা ঘটেছে, তাতে করে নয়া দিল্লি নাগাদের দাবি মেনে নেবে, তা মনে হয় না। আবার মনিপুর, আসাম ও অরুনাচল থেকে অংশবিশেষ কেটে নিয়ে নাগাদের দিয়ে দেয়ার যে দাবি জানানো হয়েছে, তাও এসব এলাকার রাজনীতিবিদেরা মেনে নেবেন না।
মনিপুরের ৩০ লাখ লোকের প্রায় ২০ ভাগ নাগা, কিন্তু তারা দাবি করছে ৭০ ভাগ। আসামে নাগা জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের ছোট ছোট পকেট রয়েছে। আর অরুনাচলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কিছু এলাকায় নাগারা সীমাবদ্ধ।
২০১৫ সালের আগস্টে তদানিন্তন আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তারা সহযোগিতামূলক ফেডারেলবাদ ও পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের চেতনা লঙ্ঘন করছেন এনএসসিএনের (আইএম) সাথে বৃহত্তর নাগালিম নিয়ে আলোচনার আগে তার ও অরুনাচল ও মনিপুরের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা না করে।
অন্যদিকে, রবি ১৭ আগস্ট ইন্ডিয়া টুডেতে উদ্ধৃত করা এক বিবৃতির উল্লেখ করে বলেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চান তিন মাসের মধ্যে এনএসসিএনের (আইএম) সাথে আলোচনা করতে।
এনএসসিএনের (আইএম) দাবিগুলো বিবেচনা করলে সেগুলোকে অবাস্তব মনে হবে। মনে হতে পারে যে এই ধরনের চুক্তি হলে নাগাদের সাথে আশপাশের এলাকার বৈরিতা সৃষ্টি হবে। মিজোরামেও ১৯৬০, ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে উপজাতীয় বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৬ সালে চুক্তির পর সেখানে শান্তি বিরাজ করছে।
মনিপুরে যুদ্ধবিরতি না হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটে। এখানে সংঘর্ষ হয় মূলত নাগা আর মেইতেই বিদ্রোহীদের মধ্যে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হলে প্রায় অনিবার্যভাবেই প্রত্যাঘাতের সৃষ্টি হবে। মোদি সরকারও তা জানেন।
তবে ২২ বছর ধরে আলোচনার পরও এনএসসিএনের (আইএম) সাথে কোনো চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি না হওয়ায় ও নাগা বিদ্রোহীদের অতিরিক্ত দাবির ফলে অঞ্চলটি আবার আলোচনায় চলে আসতে পারে। তবে তা কেবল কেন্দ্র আর সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যেই নয়, বিভিন্ন জাতিগত সম্প্রদায়ের মধ্যেও সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের ক্যাম্প হেবরনে ৭৩তম নাগা স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ চলাকালে নাগা পতাকা দোলাচ্ছেন ন্যাশনাল সোশিয়ালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-ইসাক মুইভা (এসএসসিএন-আইএম)’র এক ক্যাডার, ছবি: এএফপি |
No comments