অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতেই ভারতের রক্তক্ষরণ ঘটছে by আকর প্যাটেল
কাশ্মীরের রাস্তায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী |
চীনের
সাথে ১৯৬২ সালের যুদ্ধে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর যত সদস্য নিহত হয়েছিল, গত
২০ বছরে দেশটির অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে তার চেযে তিনগুণ বেশি প্রাণ হারিয়েছে।
কার্গিল যুদ্ধে ভারত তার সশস্ত্র বাহিনীর যতজন সদস্যকে হারিয়েছে, তার চেয়ে
ছয়গুণ বেশি হারিয়েছে কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ও মধ্য ভারতে (তথা নক্সাল
এলাকায়)। ১৯৬২ সালে ও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মোট যত জন
ভারতীয় নিহত হয়েছে, এসব স্থানে মারা গেছে তার চেয়ে বেশি।
এসব লোক বৈদেশিক আগ্রাসনের কারণে আত্মত্যাগ করেননি, বরং রাষ্ট্র তার নিজের লোকদের সাথে সমঝোতায় উপনীত হতে পারেনি বলে প্রাণ হারিয়েছে।
এসব মৃত্যু যুদ্ধের কারণ হয়নি, হয়েছে রাজনৈতিক ব্যর্থতার ফলে। কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই রক্তের এই আত্মত্যাগ আমাদের দেশের হজম করার সামর্থ্যের কারণেই ওই তিন এলাকায় ভারতের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা সহজ করে দিয়েছে। সফল হোক বা ব্যর্থ হোক, অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত প্রশ্নে ভারতের নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই। কারণ সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের অব্যাহত মৃত্যু গ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে।
কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত সরকার যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, তা সশস্ত্র বাহিনীর ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে কোনো অভ্যন্তরীণ বিতর্ক হয়নি। অথচ তারাই ৩০ বছর ধরে চাপা ক্রোধ আর অসন্তোষে থাকা লোকজনের ওপর তদারকি চালাচ্ছে। শ্রীনগরে গেলে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। তারা ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে গেছে, তারা স্থানীয় ভাষা জানে না, স্থানীয়দের মতো দেখতেও নয় তারা। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কাশ্মীরের রাস্তায় রাস্তায় বিচরণ করে, আর সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরে টহল দেয়।
এসব নগরীর লোকজনকে তাদের ভাবাবেগ প্রকাশ করতে না দেয়ায় মাঝে মাঝে সহিংসতার মাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। কারণ কথা বলার অন্য কোনো মাধ্যম নেই। অনেক বছর ধরেই কাশ্মীরের যোগাযোগ ও মিডিয়াব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রাখার কাজটি এই প্রথম হয়নি। এ ধরনের সমস্যা ভারতের অন্যান্য স্থানে নেই, কিন্তু কাশ্মীরে নিয়মিত হয়ে থাকে।
এটা ঘটতে পারার সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত সহিংসতা থেকে ভারতের বেশির ভাগ লোক অনেক দূরে অবস্থান করছে এবং সেখানকার পরিস্থিতির সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমেরিকায় সাধারণত তাদের পার্লামেন্টে (তারা বলে কংগ্রেস) প্রায় ১০০ জন মার্কিন সামরিক বাহিনীতে দায়িত্বপালনকারী সদস্য থাকেন। আমেরিকার সামরিক বাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী। তারা সহজেই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে সঙ্ঘাতে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু দেশটিতে এখন আত্ম-সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। সৈনিক হিসেবে কাজ করার পর যারা পার্লামেন্টে প্রবেশ করে তারা সামরিক বাহিনীর পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা রাখে। তারা কাল্পনিক লাভের বিপরীতে বাস্তব ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরতে পারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যোদ্ধা-নেতার সংখ্যা ছিল খুবই বেশি, আইনসভার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সদস্যই ছিল সাবেক সৈনিক।
ভারতের ব্যাপারটি এমন নয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সামরিক বাহিনীতে কাজ করার কোনো আগ্রহ নেই। তারা করপোরেট চাকরি, সরকারি চাকরি, বিশেষ করে আইএএস ও আইপিএসকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রধানত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সাধারণভাবে কৃষক শ্রেণি থেকে (পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে থাকে) সংগ্রহ করা হয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে গঠিত মিডিয়াও সহিংসতা থেকে দূরে থাকে।
কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন অংশে সশস্ত্র বাহিনী কী করছে, তার মূল্যায়ন করে থাকে মিডিয়া। আসলে কী ঘটছে তা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার মতো মানসিকতা আমাদের সাংবাদিকদের নেই। এর ফলে আমরা পক্ষ নেই, বাস্তবতা এড়িয়ে যাই।
পাঠকেরা বিস্মিত হবেন জেনে যে এক পাকিস্তানি সাংবাদিকই পূর্ব পাকিস্তানের নৃশংসতার দিকে বিশ্বকে গভীরভাবে দৃষ্টি ফেরাতে পেরেছিলেন। করাচির রিপোর্টার অ্যানথনি মাসক্যারেনহাস ১৯৭১ সালের জুনে ব্রিটিশ সংবাদপত্র সানডে টাইমসে বিষয়টি লেখেন। তাতে তিনি প্রকাশ করেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার নিজের বেসামরিক লোকজনের ওপর কী করছে। কাশ্মীর, নক্সাল বেল্ট ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কী ঘটছে তা কোনো ভারতীয় সাংবাদিকের পক্ষে লেখা একেবারেই কঠিন। কারণ আমরা আমাদের নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে ওই ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।
বাস্তবতা হলো, সব দখলদার সেনাবাহিনী (সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে থাকে অনেক দূরে এবং তারা বসবাস করে বৈরী লোকজনের মধ্যে) একইভাবে আচরণ প্রকাশ করে। ভিয়েতনাম, ইরাক বা শ্রীলঙ্কা- কোথাও তা বদলায় না। এটাই মানুষের প্রকৃতি। এই অবস্থার পরিবর্তনের দায়িত্ব জাতির নেতাদের ও জনসাধারণের। তারাই যথাক্রমে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে এই পরীক্ষায় নামায় এবং সমর্থন দেয়।
চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় যুদ্ধগুলো ভারতের ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে লেখা রয়েছে, আমাদের ক্ষতিও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ফোঁটায়-ফোঁটায় যে ক্ষতি হচ্ছে এবং তা অনেক বড় পরিমাণে তা কোনো ব্যান্ডেজ লাগানোর প্রয়াস বা ক্ষত পরীক্ষা ছাড়াই রক্ষক্ষরণ করে যাচ্ছে।
এসব লোক বৈদেশিক আগ্রাসনের কারণে আত্মত্যাগ করেননি, বরং রাষ্ট্র তার নিজের লোকদের সাথে সমঝোতায় উপনীত হতে পারেনি বলে প্রাণ হারিয়েছে।
এসব মৃত্যু যুদ্ধের কারণ হয়নি, হয়েছে রাজনৈতিক ব্যর্থতার ফলে। কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই রক্তের এই আত্মত্যাগ আমাদের দেশের হজম করার সামর্থ্যের কারণেই ওই তিন এলাকায় ভারতের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা সহজ করে দিয়েছে। সফল হোক বা ব্যর্থ হোক, অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত প্রশ্নে ভারতের নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই। কারণ সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের অব্যাহত মৃত্যু গ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে।
কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত সরকার যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, তা সশস্ত্র বাহিনীর ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে কোনো অভ্যন্তরীণ বিতর্ক হয়নি। অথচ তারাই ৩০ বছর ধরে চাপা ক্রোধ আর অসন্তোষে থাকা লোকজনের ওপর তদারকি চালাচ্ছে। শ্রীনগরে গেলে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। তারা ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে গেছে, তারা স্থানীয় ভাষা জানে না, স্থানীয়দের মতো দেখতেও নয় তারা। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কাশ্মীরের রাস্তায় রাস্তায় বিচরণ করে, আর সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরে টহল দেয়।
এসব নগরীর লোকজনকে তাদের ভাবাবেগ প্রকাশ করতে না দেয়ায় মাঝে মাঝে সহিংসতার মাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। কারণ কথা বলার অন্য কোনো মাধ্যম নেই। অনেক বছর ধরেই কাশ্মীরের যোগাযোগ ও মিডিয়াব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রাখার কাজটি এই প্রথম হয়নি। এ ধরনের সমস্যা ভারতের অন্যান্য স্থানে নেই, কিন্তু কাশ্মীরে নিয়মিত হয়ে থাকে।
এটা ঘটতে পারার সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত সহিংসতা থেকে ভারতের বেশির ভাগ লোক অনেক দূরে অবস্থান করছে এবং সেখানকার পরিস্থিতির সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমেরিকায় সাধারণত তাদের পার্লামেন্টে (তারা বলে কংগ্রেস) প্রায় ১০০ জন মার্কিন সামরিক বাহিনীতে দায়িত্বপালনকারী সদস্য থাকেন। আমেরিকার সামরিক বাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী। তারা সহজেই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে সঙ্ঘাতে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু দেশটিতে এখন আত্ম-সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। সৈনিক হিসেবে কাজ করার পর যারা পার্লামেন্টে প্রবেশ করে তারা সামরিক বাহিনীর পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা রাখে। তারা কাল্পনিক লাভের বিপরীতে বাস্তব ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরতে পারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যোদ্ধা-নেতার সংখ্যা ছিল খুবই বেশি, আইনসভার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সদস্যই ছিল সাবেক সৈনিক।
ভারতের ব্যাপারটি এমন নয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সামরিক বাহিনীতে কাজ করার কোনো আগ্রহ নেই। তারা করপোরেট চাকরি, সরকারি চাকরি, বিশেষ করে আইএএস ও আইপিএসকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রধানত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সাধারণভাবে কৃষক শ্রেণি থেকে (পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে থাকে) সংগ্রহ করা হয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে গঠিত মিডিয়াও সহিংসতা থেকে দূরে থাকে।
কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন অংশে সশস্ত্র বাহিনী কী করছে, তার মূল্যায়ন করে থাকে মিডিয়া। আসলে কী ঘটছে তা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার মতো মানসিকতা আমাদের সাংবাদিকদের নেই। এর ফলে আমরা পক্ষ নেই, বাস্তবতা এড়িয়ে যাই।
পাঠকেরা বিস্মিত হবেন জেনে যে এক পাকিস্তানি সাংবাদিকই পূর্ব পাকিস্তানের নৃশংসতার দিকে বিশ্বকে গভীরভাবে দৃষ্টি ফেরাতে পেরেছিলেন। করাচির রিপোর্টার অ্যানথনি মাসক্যারেনহাস ১৯৭১ সালের জুনে ব্রিটিশ সংবাদপত্র সানডে টাইমসে বিষয়টি লেখেন। তাতে তিনি প্রকাশ করেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার নিজের বেসামরিক লোকজনের ওপর কী করছে। কাশ্মীর, নক্সাল বেল্ট ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কী ঘটছে তা কোনো ভারতীয় সাংবাদিকের পক্ষে লেখা একেবারেই কঠিন। কারণ আমরা আমাদের নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে ওই ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।
বাস্তবতা হলো, সব দখলদার সেনাবাহিনী (সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে থাকে অনেক দূরে এবং তারা বসবাস করে বৈরী লোকজনের মধ্যে) একইভাবে আচরণ প্রকাশ করে। ভিয়েতনাম, ইরাক বা শ্রীলঙ্কা- কোথাও তা বদলায় না। এটাই মানুষের প্রকৃতি। এই অবস্থার পরিবর্তনের দায়িত্ব জাতির নেতাদের ও জনসাধারণের। তারাই যথাক্রমে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে এই পরীক্ষায় নামায় এবং সমর্থন দেয়।
চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় যুদ্ধগুলো ভারতের ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে লেখা রয়েছে, আমাদের ক্ষতিও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ফোঁটায়-ফোঁটায় যে ক্ষতি হচ্ছে এবং তা অনেক বড় পরিমাণে তা কোনো ব্যান্ডেজ লাগানোর প্রয়াস বা ক্ষত পরীক্ষা ছাড়াই রক্ষক্ষরণ করে যাচ্ছে।
No comments