সব ঋণ মওকুফ চায় সরকারি চিনিকল by রিয়াদুল করিম
সরকারি
চিনিকলগুলোতে প্রতিবছর লোকসান বাড়ছে। উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকও চিনি উৎপাদন
করতে পারছে না চিনিকলগুলো। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের
(বিএসএফআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ১৪টিই লোকসানে। গত
অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছে ৮৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
লোকসানের পাশাপাশি করপোরেশনের ব্যাংকঋণ ও দায়দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এখন সংস্থাটির চাওয়া, লোকসান কমাতে ব্যাংকঋণ সুদসহ এককালীন মওকুফ করা হোক। ঋণ মওকুফের জন্য একবার আবেদন করে সাড়া না পেয়ে আবারও আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এ ছাড়া বিএসএফআইসি না লাভ না ক্ষতি বা ব্রেক ইভেনে না আসা পর্যন্ত সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলেও মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটিতে দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বিএসএফআইসি এসব তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীনে থাকা ১৫টি চিনিকল হচ্ছে পঞ্চগড় সুগার মিলস, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস, সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস, রংপুর সুগার মিলস, জয়পুরহাট সুগার মিলস, রাজশাহী সুগার মিলস, নাটোর সুগার মিলস, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস, পাবনা সুগার মিলস, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি, কুষ্টিয়া সুগার মিলস, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস, ফরিদপুর সুগার মিলস ও জিল বাংলা সুগার মিলস। এর মধ্যে কেরু ছাড়া বাকি ১৪টি চিনিকল দীর্ঘদিন থেকেই লোকসান গুনছে।
বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আ শ ম ইমদাদুদ দস্তগীর প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন মেয়াদে তাঁদের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকঋণ আছে। এই ঋণ মওকুফ করার জন্য এর আগে একবার তাঁরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তবে তা গৃহীত না হওয়ায় আবার তাঁরা একই ধরনের একটি প্রস্তাব তৈরি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২–১৩ অর্থবছরে কেরুর লাভ হিসাবে নিয়ে চিনিকলগুলোর লোকসান ছিল ৩১৪ কোটি টাকা। ২০১৬–১৭ অর্থবছরে সেটি দাঁড়ায় ৬৪১ কোটি টাকায়। আর গত অর্থবছরে লোকসান ৮৩৪ কোটি টাকা। এই ১৫ চিনিকলের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় ২ লাখ ১০ টন। কিন্তু গত ছয় বছরের হিসাবে তাদের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ২৬৮ টন। গত বছর ছিল ৬৮ হাজার ৫৬২ টন। এ বছর এখন পর্যন্ত উৎপাদিত হয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫২ টন। চিনি উৎপাদন করা মূল কাজ হলেও প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চিনি আমদানি করে। সে চিনি এখনো পড়ে আছে গুদামে। গত ১৫ মে বুধবার জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বিএসএফআইসির প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সংস্থাটি চিনিকলের লোকসানের কিছু কারণ উল্লেখ করেছে। যেমন উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম, পুঞ্জীভূত ঋণ ও সুদ, আখের উন্নত জাতের উদ্ভাবন না হওয়া, কারখানার আধুনিকায়ন না হওয়া ও দক্ষ জনবলের অভাব। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধন করে কম দামে বাজারজাত করে। এতে বিএসএফআইসির উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত থেকে যায়। আখ সংগ্রহ ও চিনির দামের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় ক্রমাগত লোকসানের কারণে ব্যাংকঋণ নিতে হয়েছে। এতে সুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে একজন সদস্য চিনিকলগুলোর লোকসানের জন্য অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে দায়ী করেন।
একমাত্র লাভে থাকা কেরুর চিনি কারখানা ছাড়াও আছে ডিস্টিলারি ইউনিট, বাণিজ্যিক খামার, পরীক্ষামূলক খামার, জৈব সার কারখানা। সব মিলিয়ে কেরু গত অর্থবছরে লাভ করেছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অবশ্য ২০১৩–১৪ সালে কেরুর লাভ ছিল ৯ কোটি টাকার বেশি। বিএসএফআইসির অধীন রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানিও লাভে আছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠানের লাভ হয়েছে ৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া জয়পুরহাট ও কুষ্টিয়া চিনিকলে ১০০ মেগাওয়াট করে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চিনিকলগুলোর সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি, বাজার হিস্যা ও বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে বলা যায়, বিএসএফআইসির পক্ষে এখন আর বাজারে কার্যকর ভূমিকা রাখা ও চিনিকলগুলোকে লাভজনক করার সুযোগ সীমিত। সরকারের উচিত হবে, এসব চিনিকলের কার্যক্রম ধীরে ধীরে সীমিত করে আনা। আর চিনিকলের যেসব জমি ও অবকাঠামো আছে, সেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে শিল্পাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা যেতে পারে।
লোকসানের পাশাপাশি করপোরেশনের ব্যাংকঋণ ও দায়দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এখন সংস্থাটির চাওয়া, লোকসান কমাতে ব্যাংকঋণ সুদসহ এককালীন মওকুফ করা হোক। ঋণ মওকুফের জন্য একবার আবেদন করে সাড়া না পেয়ে আবারও আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এ ছাড়া বিএসএফআইসি না লাভ না ক্ষতি বা ব্রেক ইভেনে না আসা পর্যন্ত সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলেও মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটিতে দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বিএসএফআইসি এসব তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীনে থাকা ১৫টি চিনিকল হচ্ছে পঞ্চগড় সুগার মিলস, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস, সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস, রংপুর সুগার মিলস, জয়পুরহাট সুগার মিলস, রাজশাহী সুগার মিলস, নাটোর সুগার মিলস, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস, পাবনা সুগার মিলস, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি, কুষ্টিয়া সুগার মিলস, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস, ফরিদপুর সুগার মিলস ও জিল বাংলা সুগার মিলস। এর মধ্যে কেরু ছাড়া বাকি ১৪টি চিনিকল দীর্ঘদিন থেকেই লোকসান গুনছে।
বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আ শ ম ইমদাদুদ দস্তগীর প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন মেয়াদে তাঁদের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকঋণ আছে। এই ঋণ মওকুফ করার জন্য এর আগে একবার তাঁরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তবে তা গৃহীত না হওয়ায় আবার তাঁরা একই ধরনের একটি প্রস্তাব তৈরি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২–১৩ অর্থবছরে কেরুর লাভ হিসাবে নিয়ে চিনিকলগুলোর লোকসান ছিল ৩১৪ কোটি টাকা। ২০১৬–১৭ অর্থবছরে সেটি দাঁড়ায় ৬৪১ কোটি টাকায়। আর গত অর্থবছরে লোকসান ৮৩৪ কোটি টাকা। এই ১৫ চিনিকলের উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় ২ লাখ ১০ টন। কিন্তু গত ছয় বছরের হিসাবে তাদের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ২৬৮ টন। গত বছর ছিল ৬৮ হাজার ৫৬২ টন। এ বছর এখন পর্যন্ত উৎপাদিত হয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫২ টন। চিনি উৎপাদন করা মূল কাজ হলেও প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চিনি আমদানি করে। সে চিনি এখনো পড়ে আছে গুদামে। গত ১৫ মে বুধবার জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বিএসএফআইসির প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সংস্থাটি চিনিকলের লোকসানের কিছু কারণ উল্লেখ করেছে। যেমন উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম, পুঞ্জীভূত ঋণ ও সুদ, আখের উন্নত জাতের উদ্ভাবন না হওয়া, কারখানার আধুনিকায়ন না হওয়া ও দক্ষ জনবলের অভাব। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধন করে কম দামে বাজারজাত করে। এতে বিএসএফআইসির উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত থেকে যায়। আখ সংগ্রহ ও চিনির দামের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় ক্রমাগত লোকসানের কারণে ব্যাংকঋণ নিতে হয়েছে। এতে সুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে একজন সদস্য চিনিকলগুলোর লোকসানের জন্য অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে দায়ী করেন।
একমাত্র লাভে থাকা কেরুর চিনি কারখানা ছাড়াও আছে ডিস্টিলারি ইউনিট, বাণিজ্যিক খামার, পরীক্ষামূলক খামার, জৈব সার কারখানা। সব মিলিয়ে কেরু গত অর্থবছরে লাভ করেছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অবশ্য ২০১৩–১৪ সালে কেরুর লাভ ছিল ৯ কোটি টাকার বেশি। বিএসএফআইসির অধীন রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানিও লাভে আছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠানের লাভ হয়েছে ৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া জয়পুরহাট ও কুষ্টিয়া চিনিকলে ১০০ মেগাওয়াট করে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চিনিকলগুলোর সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি, বাজার হিস্যা ও বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে বলা যায়, বিএসএফআইসির পক্ষে এখন আর বাজারে কার্যকর ভূমিকা রাখা ও চিনিকলগুলোকে লাভজনক করার সুযোগ সীমিত। সরকারের উচিত হবে, এসব চিনিকলের কার্যক্রম ধীরে ধীরে সীমিত করে আনা। আর চিনিকলের যেসব জমি ও অবকাঠামো আছে, সেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে শিল্পাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা যেতে পারে।
No comments