‘অনুপ্রবেশকারী’ সাব্যস্ত হওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত আসামের মুসলিমরা

৭১ বছর আগে ভারতে জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ রেহাত আলী বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়ার এক মাস পরেও এখনও আতঙ্কের মধ্যে আছেন যে ভবিষ্যতে কি হবে – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনস্থ ভারতে আরও বহু মুসলিমকে যে আতঙ্কটা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
মোদির ডান-হাত খ্যাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই রাষ্ট্রহীন মানুষদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত এই তৎপরতা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও হিন্দু জাতীয়তাবাদী এই দলটি এই সিস্টেমটি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চায়। মুসলিমদের মধ্যে এটা আতঙ্ক তৈরি করেছে, কারণ সমালোচকদের মতে, মুসলিমরাই এখানে মূল টার্গেট।
অশিক্ষিত একজন কৃষক আলী এএফপিকে বললেন, “আমি কখনও কল্পনা করিনি যে আমাকে আমার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। আমি ভারতীয় নাগরিক, এখানে আসামেই আমার জন্ম এবং কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানে বাস করছি আমি”।
ভুলে যাওয়া মানুষেরা
৩৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই রাজ্যে চার মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকেই এই রাজ্যে অভিবাসন একটা বিতর্কিত বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে।
তারা প্রমাণ করতে পারেননি যে, ১৯৭১ সালের আগে তাদের বাবা বা দাদা আসামে ছিলেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু বাংলাদেশী ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল।
যারা বাদ পড়েছেন, তারা আপিল করতে পারবেন, কিন্তু জানা গেছে যে, দুই মিলিয়ন মানুষ চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। চলতি মাসে এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
পুরো প্রক্রিয়াটা অনুধাবন করা এবং এই রাজ্যে প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহ করা, যেখানে বহু মানুষ অশিক্ষিত, সেখানে অনেকের কাছেই এটা দুঃস্বপ্নের মতো।
‘উইকেটস’
যারা তালিকায় নাম উঠাতে ব্যর্থ হবেন, তাদেরকে ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের’ কাছে যেতে হবে। বর্তমানে প্রায় একশয়ের মতো ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। আরও ২০০ স্থাপনের কাজ চলছে।
প্রচারণাকারীরা বলেছেন, এটা এক ধরনের লটারির মতো এবং এখানকার স্টাফরা অযোগ্য।
অনলাইন ম্যাগাজিন স্ক্রলের মতে, আসামে মোদির দলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার সেই সব ট্রাইব্যুনাল সদস্যদের সরিয়ে দিয়েছে, যারা ‘পার্ফর্মেন্স’ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের সাবেক এক সদস্য ক্রিকেটের উপমা ব্যবহার করে স্ক্রলকে বলেন, “এখানে একটা প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যেটা নিয়ে সদস্যরা নিজেদের মধ্যে হাসি তামাশা করে। সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়ার কৃতিত্বত্ব পাবে সে, যে যত বেশি মানুষকে বিদেশী ঘোষণা করতে পারবে”।
উঁইপোকা
খসড়া এনআরসি থেকে যাদের বাদ দেয়া হয়েছে, এদের অধিকাংশই মুসলিম। মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সমালোচকরা বলেছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা শুধু নিজেদের ধর্মানুসারীদের জন্য কাজ করছে।
জানুয়ারিতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে একটি আইন পাস হয় যেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের সুযোগ রাখা হয়েছে, যে সুযোগটা কোন মুসলিমের জন্য রাখা হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘উঁইপোকা’দের বের করে দেয়ার ডাক দিয়েছেন এবং নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন যে, “অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর জন্য তারা সারা দেশে প্রচারণা চালাবেন”।
যারা তালিকা থেকে বাদ পড়বেন, তাদের পরিণতি কি হবে, এটা স্পষ্ট নয়। কিছু কট্টরপন্থী তাদের গণহারে ফেরত পাঠানোর কথা বলছে, যদিও বাংলাদেশ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কাউকে ফেরত নেবে না।

No comments

Powered by Blogger.