'আমি তো সুস্থ আমি কেন ডাক্তারের কাছে যাবো?'
বিশ্বের
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকেই যাতে এই রোগটিকে শনাক্ত করে রোগীকে
যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যায়- এবছর তার ওপরই জোর দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে,
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
এদের মধ্যে বহু মৃত্যুর ঘটনাই ঘটে রোগটিকে শুরুর দিকে শনাক্ত করতে না পারার
কারণে। নারীদের বেলায় যে তিন ধরনের ক্যান্সারে কথা বেশি শোনা যায়-
জরায়ুর মুখের ক্যান্সার বা সার্ভিক্যাল ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার
বা ওভারিয়ান ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার। "বাংলাদেশে মহিলাদের মধ্যে
রোগীরা মারা যাচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরায়ু মুখের ক্যান্সার কিংবা স্তন
ক্যান্সারে। কিন্তু জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয় করার খুব ভালো দিক
হচ্ছে পূর্ব লহ্মণ নির্ণয় করা যায়" জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের
সহযোগী অধ্যাপক, ড. বেগম রোকেয়া আনোয়ার বিবিসি বাংলাকে এমনটাই বলছিলেন।
তিনি জানান এই রোগ পুরোপুরি প্রতিরোগযোগ্য। উন্নত বিশ্বে তাই এটি শূন্যের
ঘরে নামিয়ে আনা হচ্ছে। পূর্ব-লহ্মণ যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশেও বেশকিছু
পদ্ধতি রয়েছে এবং ভিআইএ নামে সহজ একটি পরীক্ষা জাতীয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে
সারাদেশে জানান, রোকেয়া আনোয়ার। তিনি বলেন, "মেয়েরা যখন সুস্থ থাকে মনে
করে আমি তো সুস্থ আমি কেন ডাক্তারের কাছে যাবো? কিন্তু যেকোনো ক্যান্সারের
পূর্ব-লহ্মণ নির্ণয় করতে হলে সুস্থ অবস্থাতেই তাকে হাসপাতালে আসতে হবে"।
সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
চিকিৎসা
সুবিধা সম্পর্কে চিকিৎসক রোকেয়া আনোয়ার জানান, জরায়ু মুখের ক্যান্সার
নির্ণয়ের জন্য রোগী আসলে সাথে সাথে স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষাও করে
দেয়া হয়। জরায়ু ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা দেশে বেশ
ভালোভাবে চলছে বলে তিনি জানান। তবে ফুসফুস ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত
করা সম্ভব হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন। "লাং ক্যান্সার বা ফুসফুসের
ক্যান্সার বাংলাদেশে মহিলাদের প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে এবং ডিম্বাশয়ের
ক্যান্সার (ওভারিয়ান ক্যান্সার) -এই ক্যান্সার খুবই খারাপ। কিন্তু এই
ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বেশিরভাগ সময়ই রোগী
অ্যাডভান্সড স্টেজে আসে। তখন তাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়না বরং চিকিৎসা
করতে গিয়ে রোগীর অনেক টাকা-পয়সা চলে যায়"। ক্যান্সার হাসপাতালে যারা
আসেন তারা কোন পর্যায়ে আসেন জানতে চাইলে তিনি জানান বেশিরভাগই আসেন
অ্যাডভান্সড পর্যায়ে। "সারা বাংলাদেশ থেকে রোগীরা আসেন যখন ক্যান্সার হয়ে
যায় তখন। এর মধ্যে ৯০ ভাগই আসে যাদের অপারেশন করার উপায় থাকেনা। একেবারে
অ্যাডভান্সড অবস্থায়, তখন সেরে ওঠার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়"। তিনি বলেন,
"বাংলাদেশে এখন সবাই একটা কথা জানে 'ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন খান',
তেমনি এই রোগ (ক্যান্সার) সম্পর্কেও এমন শ্লোগান হওয়া উচিত যেমন 'বয়স যদি
হয় ৩০ জরায়ু মুখ পরীক্ষা করান, যদি আপনি বাঁচতে চান' অথবা এই ধরনের
সুন্দর কোনও শ্লোগান তৈরি করতে হবে এবং ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে
রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে"। এই ক্যান্সার চিকিৎসক মনে করেন, স্বাস্থ্য
শিক্ষা ব্যুরো, গণমাধ্যম এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করতে পারে।
No comments