প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি
সরকারের
শেষ বছরে এসে প্রকল্প সংশোধন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন এবং মেয়াদ ও ব্যয়
বৃদ্ধির হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতর ও সংস্থায়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষকর্তারা একে চলমান কার্যক্রম বললেও অতীতে
প্রায় সব সরকারের শেষ বছরে পাইকারি হারে প্রকল্প সংশোধন এবং এর ব্যয় ও
মেয়াদ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। এতে করে জনগণের করের অর্থের বিপুল অপচয়ের
পাশাপাশি জনগণকে যে কাক্সিক্ষত সেবা দেয়ার জন্য প্রকল্পটি পাস করা হয়েছে,
সে সেবা পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায় সীমাহীন। ফলে
লাগামহীনভাবে প্রকল্প সংশোধনকে দেশের জন্য একটি অশুভ সংকেত হিসেবে দেখছেন
অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পবিদরা। আমরা মনে করি, কেন প্রকল্প নির্ধারিত অর্থ ও
সময়সীমার ভেতরে শেষ করা গেল না- তার জবাবদিহিতা ছাড়া প্রকল্পের সংশোধনী
অনুমোদন করা উচিত নয়। উদ্বেগের বিষয়, অনেক প্রকল্পে এক-দু’বার নয়, তিন থেকে
চারবার পর্যন্ত মেয়াদ ও বরাদ্দ- উভয়ই বাড়ানো হচ্ছে। এতে একদিকে নির্ধারিত
ব্যয় থেকে তিন-চারগুণ বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার
ঘা’ হিসেবে যাদের টাকায় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, তাদের কপালে জুটছে বড় ধরনের
ভোগান্তি। যেমন, ২০১০ সালে নেয়া হয় ‘বরিশাল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটকে শহীদ
আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প। ৫৯
কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার
কথা ছিল; কিন্তু এরই মধ্যে দু’বার মেয়াদ বাড়িয়ে, দু’গুণের বেশি ১২২ কোটি
টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যেও শেষ করা যায়নি কাজ।
সর্বশেষ
তৃতীয়বারের মতো আরও ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে সংশোধনী প্রস্তাবটি
অনুমোদনের জন্য আগামী একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। এতেও শেষ পর্যন্ত
যদি কাজটি শেষ হয়! কেবল এটিই নয়, দেশে এমন বহু প্রকল্পে চলছে জনগণের
অর্থের তছরুপ। বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। আর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা,
ঠিকাদার ও রাজনৈতিক নেতার পকেট ভারি হচ্ছে। একটি বিষয় আমাদের বোধগম্য নয়,
যেখানে প্রতিবেশী কিছু দেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের চেয়ে রাস্তা ও
অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কিলোমিটার-বর্গফুটে নির্মাণ ব্যয় আমাদের দেশে
বেশি দেয়া হয়, সেখানে এক-দুই, এমনকি তিন-চারবার পর্যন্ত সময় ও বরাদ্দ কেন
বাড়ানো হবে? এ ক্ষেত্রে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’টা কোথায় তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং
তা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত হয়ে বলা
যায়, কোনো প্রকল্প নেয়ার সময় বাস্তব অবস্থা, প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা,
সততা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ভালোভাবে বিবেচনায় না নিয়ে অত্যধিক ব্যয়বহুল
প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া উচিত নয়। দেখা যায়, কিছু প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে
অপ্রতুলভাবে মাঝে মাঝে কিছু বরাদ্দ দেয়া হয়, অন্যদিকে কিছু প্রকল্পে গভীর
মনিটরিং ছাড়া চাহিবামাত্র ব্যয় ও সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে করে অসাধু
কিছু মানুষ তাদের পকেট ভারি করার চেষ্টা করে। সুষম উন্নয়নের স্বার্থে
প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থের সীমার বিষয়ে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। নির্দিষ্ট
সময়সীমা ও বরাদ্দের চেয়ে কম অর্থেও যে প্রকল্প শেষ করা যায়, মেঘনা দ্বিতীয়
সেতু সংক্রান্ত কিছু প্রকল্প থেকে তেমন নজির পাওয়া গেছে। বিষয়টি বিবেচনায়
নিয়ে সতর্ক হতে হবে, অবিলম্বে।
No comments