বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
বিশ্বব্যাংকের
সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিশ্বের সম্পদ ও বৈষম্যের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা
মানবসভ্যতার জন্য গ্লানিকরই বলতে হবে। প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, গত দুই
দশকে সারা বিশ্বে সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সত্য, তবে
সম্পদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৈষম্য।
১৯৯৫ সালে বিশ্বের মোট সম্পদের
বাজারমূল্য যেখানে ছিল ৬৯০ লাখ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে ২০১৪ সালে মোট
সম্পদের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ১৪৩ লাখ কোটি ডলারে, অর্থাৎ এই
সময়ে সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। তবে বিশ্বজুড়ে সম্পদের এই বৃদ্ধি
বৈষম্য দূর করতে পারেনি। নিন্ম আয়ের দেশগুলোর তুলনায় উন্নত দেশগুলোর
মাথাপিছু আয় বর্তমানে ৫২ গুণ বেশি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
দরিদ্র দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি সম্পদের উৎস প্রকৃতি। সংস্থাটির
প্রেসিডেন্ট বলেছেন, প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের
প্রায় সব দেশ নিজের সম্পদ বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়তি সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
মানবসম্পদকে সবচেয়ে বড় সম্পদ বিবেচনা না করলে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা
সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মানবসম্পদকে সবচেয়ে বড় সম্পদ
বিবেচনা করার যে কথা বলা হয়েছে, তা খুবই সঙ্গত। বাংলাদেশে বর্তমানে
মাথাপিছু সম্পদের বাজারমূল্য যেখানে ১২ হাজার ৭১৪ ডলার, সেখানে মানবসম্পদের
মাথাপিছু মূল্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৭০ ডলার, অর্থাৎ মোট সম্পদের অর্ধেকের
বেশি।
এই সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে টেকসই উন্নয়নই নিশ্চিত হবে
না শুধু, বৈষম্যও কমে আসবে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ফলে মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকেই নজর দিতে হবে বেশি। বিশ্বে বৈষম্য বৃদ্ধি
পাওয়ার যে খবর, তা মর্মান্তিক বটে। সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে বিশেষ বিশেষ
কেন্দ্রে। পুঁজিবাদী বিশ্বের বৈশিষ্ট্য অবশ্য তা-ই। তবে যে হারে সম্পদ
কুক্ষিগত হচ্ছে তা উদ্বেগজনক। এ বৈষম্য কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা
বিশ্ব-অর্থনীতিবিদদের এক গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরাসি অর্থনীতিবিদ
টমাস পিকেটি তার গবেষণায় সম্পদ-বৈষম্যের নানা কারণ দেখিয়ে চলেছেন।
বাংলাদেশেও ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার বৈষম্যের হার বেড়ে চলেছে, যদিও
দারিদ্র্যের হার কমেছে, বেড়েছে জিডিপিও। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে
বৈষম্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে অবশ্যই।
No comments