উনিশ বছরে যুগান্তর
সত্য
প্রকাশে আপসহীনতার প্রমাণ রেখে যুগান্তর আজ ঊনবিংশ বর্ষে পদার্পণ করল। এ
আনন্দঘন মুহূর্তে আমরা শুভেচ্ছা জানাই যুগান্তরের অগণিত পাঠক, লেখক,
বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকার ও শুভানুধ্যায়ীকে। তাদের সমর্থন ও সহায়তা ছাড়া
তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ সংবাদপত্র জগতে যুগান্তরের প্রতিষ্ঠা লাভ সম্ভব হতো
না। এটি দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক। প্রকাশের অল্পদিনের মধ্যেই যুগান্তর
পাঠকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। ক্রমেই হয়ে ওঠে সব মহলে আলোচিত ও প্রশংসিত একটি
দৈনিক। ‘সত্যের সন্ধানে নির্ভীক’ যুগান্তরের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে
এখনও। এর প্রধান কারণ বস্তুনিষ্ঠ খবর ও বলিষ্ঠ মতপ্রকাশে পত্রিকাটির সাহসী
ভূমিকা। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এজন্য যুগান্তরকে কম মূল্য দিতে হয়নি। রাজনৈতিক ও
সামাজিকভাবে প্রতিপত্তিশালী বিভিন্ন মহল থেকে বাধা এসেছে বারবার। সত্য
প্রকাশ করায় ক্রুদ্ধ হয়ে যুগান্তর কর্তৃপক্ষের ওপরও আঘাত হেনেছে
স্বার্থান্বেষী মহল। তবু সংবাদপত্রের কাছে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন থেকে
যুগান্তরকে বিরত করা যায়নি। অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি আমরা। নতুন একটি
বর্ষে পা রাখার সময় আমরা আবারও সেই অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। একটি দৈনিক
পত্রিকাকে প্রতিদিনই পাঠকের প্রত্যাশা পূরণে ভূমিকা রাখতে হয়; দিতে হয়
পরীক্ষা। প্রকৃত সংবাদপত্রের দায়িত্ব পালন করে যুগান্তর আগামীতেও সে
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রত্যয় রাখে। পত্রিকাটির সব বিভাগের কর্মী এ
লক্ষ্যে উজ্জীবিত ও একাত্ম। যুগান্তর আপস না করে জনস্বার্থে সত্যনিষ্ঠ
সাংবাদিকতা করে আসছে। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর একে সংহত ও সার্থক করার
ক্ষেত্রে মিডিয়ার যথাযথ ভূমিকার বিষয়েও যুগান্তর সজাগ।
আমরা বিশ্বাস করি,
প্রকৃত সংবাদপত্র কখনও জন-আকাক্সক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিতে পারে না। সরকার
পরিবর্তন হতে পারে; কিন্তু জনগণ ও দেশ স্থায়ী। যুগান্তরের কাছে দেশের
স্বার্থ সব সময়ই সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান পেয়েছে। যুগান্তর নিরপেক্ষভাবে
সমস্যার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের সম্ভাবনার ওপরও জোর দিয়ে এসেছে। এটা
করতে গিয়ে সময়ে সময়ে মহলবিশেষ দ্বারা আক্রান্ত হলেও পত্রিকাটি অর্জন করেছে
জনগণের আস্থা। এটাই যুগান্তরের সবচেয়ে বড় অবলম্বন। শুরু থেকেই খবর ও
মন্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা আঁকড়ে ধরেছি দলনিরপেক্ষতার নীতি। ঘটনার
গভীরে গিয়ে সত্যানুসন্ধানের ক্ষমতা যুগান্তরকে করে তুলেছে বিশিষ্ট। ঘটনা,
ইস্যু বা বিষয়ের ওপর সম্ভাব্য সব দৃষ্টিকোণ থেকে নিবন্ধ প্রকাশ আমাদের সব
সময়ের নীতি। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার আহ্বান
জানানো হয়েছে। তবে যুগান্তর নিজে থেকেই এ বিষয়ে আন্তরিক। দায়িত্বহীন
সাংবাদিকতাকে পাঠকও প্রত্যাখ্যান করে থাকে। সরকার ও বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট
সব মহলের সমালোচনায় আমরা সব সময়ই দায়িত্বশীল। ভালোকে ভালো ও মন্দকে মন্দ
বলতে দ্বিধান্বিত নই। জনগণ চায় বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য সব
ধরনের উন্নয়ন। এ লক্ষ্য অর্জনে সংবাদপত্রকে সহায়ক শক্তি হিসেবে পাশে দেখতে
চায় তারা। আমাদের মতো দেশে যেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবিকশিত,
সেখানে সংবাদপত্রের সাহসী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা বেশি করে প্রয়োজনীয়। এটা
গভীরভাবে উপলব্ধি করেই পথ চলছি আমরা। পাঠকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও
নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করে আরও বলিষ্ঠতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে যুগান্তর-
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
No comments