পদায়ন ও বদলি
সরকারি
চাকুরেদের এক দপ্তরে একনাগাড়ে তিন বছরের বেশি থাকার বিধান না থাকলেও
শিক্ষা প্রশাসনে সেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এটা খুবই
দুর্ভগ্যজনক যে এ নিয়ে নানা কথাবার্তা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টি আমলে নেননি। সম্প্রতি খোদ শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত
কর্মকর্তাসহ দুজন কর্মকর্তার উৎকোচ গ্রহণের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর শিক্ষা
প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু এটি লোকদেখানো না
শিক্ষা প্রশাসনের চরিত্রবদল, সেই প্রশ্নের জবাব ভবিষ্যৎই দিতে পারে। শিক্ষা
প্রশাসন যে এত দিনে নিয়মনীতি ছাড়া চলেছে, তার প্রমাণ মাধ্যমিক ও
উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও পরিদর্শন ও নিরীক্ষা
অধিদপ্তরে (ডিআইএ) ৬১ জন কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি সময় বহাল আছেন। তাঁদের
কেউ কেউ ৯ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দীর্ঘদিন একই
প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কায়েমি স্বার্থ গড়ে ওঠা
স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মাধ্যমিক
ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী বদলির সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কিন্তু এত দিনে কেন নিয়মনীতি অনুযায়ী পদায়ন ও বদলি
হয়নি, সেই প্রশ্নের জবাবও খুঁজে বের করতে হবে। এর পেছনে কারা দায়ী, তাদের
চিহ্নিত করে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত
কর্মকর্তাসহ দুই কর্মকর্তার অপকর্মের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর দুর্নীতি দমন
কমিশনও (দুদক) শিক্ষা প্রশাসনের কাজকর্ম সম্পর্কে তত্ত্ব-তালাশের পাশাপাশি
৫২২ জন শিক্ষককে বদলির সুপারিশ করেছে। গত রোববার ঢাকা থেকে ২৫ জন শিক্ষককে
প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের স্থলাভিষিক্ত কারা
হবেন? শিক্ষকদের বদলির কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না
হয়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ করতে হবে।
আমরা আশা করতে চাই, শিক্ষা প্রশাসনের নীতিমালা বাস্তবায়ন শুধু শিক্ষকদের
মধ্যে সীমিত থাকবে না। পদমর্যাদা-নির্বিশেষে যেসব কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি
সময় একই প্রতিষ্ঠানে আছেন, তাঁদের অবিলম্বে বদলি করতে হবে। কারও বিরুদ্ধে
কোনো অভিযোগ থাকলে তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নিতে হবে। উৎকোচের দায়ে দুই কর্মকর্তার গ্রেপ্তার হওয়ার অর্থ এই নয় যে
শিক্ষা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা সাধু পুরুষ। রেলওয়ের কালো বিড়াল ধরতে
গিয়ে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেই ‘ধরা’ খেয়েছিলেন। শিক্ষা
প্রশাসনের কালো বিড়াল ধরবে কে?
No comments