শিকল বন্দি কিশোর হানিফ
ধুলোবালি
মাখা বস্ত্রহীন শরীর। পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বাড়ির
আঙ্গিনায় একটি কাঁঠাল গাছে। কথা বলতে পারে না। শুধু মায়াভরা দু’টি চোখ দিয়ে
ফ্যাল-ফ্যাল করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে থাকে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার
কাঁঠাল ইউনিয়নের বিলবোকা চরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের বড় ছেলে মানসিক
ভারসাম্যহীন হানিফের (১৪) এভাবেই কাটছে কৈশোর। জানা গেছে, দিনে গাছের
সঙ্গে শিকলে বেধেঁ আর রাতে ঘরের চৌকির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় হানিফকে। প্রায়
চার বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে তার। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে আর
দশটা শিশুর মতো প্রাণোচ্ছ্বল শৈশব-কৈশোর পায়নি সে। বাবা কাপড় ব্যবসায়ী
আব্দুস সালাম স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করালেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। প্রায় চার
বছর আগে গাজীপুরের চৌরাস্তায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মারা যান হানিফের
বাবা সালাম। এরপর হানিফের চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। বড় সন্তানের
দুশ্চিন্তায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিন কাটছে মা শেফালী বেগমের (৩৫)।
স্বামী
হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন বড় ছেলে হানিফসহ একমাত্র মেয়ে বৃষ্টি (৮) ও ছোট
ছেলে ইয়াছিনকে (৪) নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন তিনি। শেফালী বেগম জানান, ৬
মাস বয়সে হানিফের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার
অস্বাভাবিক আচরণ আরো বাড়তে থাকে। তার বাবা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করিয়েছে।
কিস্তু তার বাবা মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুমের
ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখি। সম্পদ বলতে ভিটে-মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি
আরো বলেন কেউ যদি আমার ছেলের চিকিৎসায় এগিয়ে আসতেন, তবে হয়তো সে
সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতো। আর দশটা শিশুর মতো হেসে খেলে বেড়াতো।
চাচী সুমা বেগম বলেন, হানিফের মাথায় সমস্যা আছে। গাছের পাতার দিকে তার
ধ্যান বেশি। হাতে গাছের পাতা পেলে সাময়িকভাবে তার চিৎকার, কান্না থামে। এ
ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, খোঁজ নিয়ে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments