হিজড়ারা রাস্তায় কেন? by আবদুল হাকিম
গাজীপুর
চৌরাস্তা থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত গড়ে প্রতিটি যাত্রীবাহী বাসে এক বা
দু’জন হিজড়া সাজগোজ করে যাত্রীদের কাছে টাকা সংগ্রহ করে। যদি কেউ টাকা দিতে
অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। অনেক সময় বাসে
যাত্রী হিসেবে পরিবারের একাধিক সদস্য থাকেন। ফলে তাদের বেশ লজ্জায় পড়তে হয়।
এমনও ঘটে- মা-ছেলে কিংবা বাবা-ছেলে একসঙ্গে বাসে বসে আছে আর হিজড়ারা
অশ্লীল ভাষা ও নানা অঙ্গভঙ্গি করে অশোভন আচরণ করছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে
অস্বস্তিকর। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ অনুযায়ী, হিজড়ারা মূল জনগোষ্ঠীর
ক্ষুদ্র অংশ এবং তাদের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সরকার এদের পুনর্বাসনের জন্য
পাইলট প্রকল্প হাতে নিলেও এখনও অনেক হিজড়া এই প্রকল্পের বাইরে রয়ে গেছে।
শতভাগ হিজড়াকে অবশ্যই এ আওতায় আনতে হবে। কয়েক বছর পূর্বে সাধারণত রাত দশটার
পরে কয়েকজন হিজড়াকে চান্দনা চৌরাস্তার মোড়ে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর রাতে
নয়, দিনের বেলাতেই রাস্তাঘাটে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাদের
সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। কয়েকদিন পূর্বে গাজীপুরে একদল হিজড়া এক তরুণকে
মেরে আহত করেছে। বস্তুত হিজড়াদের নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেক যাত্রীর।
কোথাও কোনো নবজাতকের খবর পেলে হিজড়ারা দল বেঁধে সেখানে হানা দেয় এবং বড়
অংকের টাকা দাবি করে। দাবি পূরণ না হলে নবজাতককে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এর
ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই হিজড়াদের টাকা দিতে বাধ্য হয়। হিজড়াদের জন্য যে
তহবিল বরাদ্দ হয়, কয়েক বছরে তা বেড়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হয়েছে। তাহলে
হিজড়ারা রাস্তায় কেন? হিজড়াদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে
নিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যেন তাদের ব্যবহার করে
ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল
রাখাও জরুরি। সামাজিকভাবে যেন প্রতিটি পরিবার তাদের হিজড়া সন্তানের
পরিচর্যা নিজেরাই করে, সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। হিজড়াদের জন্য
প্রশিক্ষণ ও বৃত্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া এই
জনগোষ্ঠীকে বোঝা নয়, সম্পদে রূপান্তরের উদ্যোগ ফলপ্রসূ করতে সরকারের
বিভিন্ন দফতরে, বিশেষ করে ট্রাফিক ও আনসার বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
গাজীপুরে বসবাসকারী প্রত্যেকের প্রতাশা- প্রশাসন খুব দ্রুত বাস কিংবা জনপদে
হিজড়াদের উৎপাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
No comments