রাজপথে সংঘাত
রাজপথে
গত মঙ্গলবার যে কায়দায় পুলিশের ওপর হামলা ও সহিংসতা হয়েছে, তা এককথায়
অগ্রহণযোগ্য। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিয়ে বিএনপির
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফেরার পথে এ ঘটনার দায় স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিকে
নিতে হবে। পরিস্থিতি বা বাস্তবতা যা-ই হোক না কেন, কোনো অবস্থাতেই সংঘাত ও
সহিংসতার পথকে যৌক্তিক হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।
গণমাধ্যম ও
পত্রপত্রিকার খবর অনুয়ায়ী, খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা উপলক্ষে জড়ো হওয়া
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হাইকোর্ট ও প্রেসক্লাব এলাকায় কয়েক দফা
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপি-ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মীকে
পুলিশ আটক করে। পরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর জাতীয় ঈদগাহ অতিক্রম করার পর
সেখানে থেমে থাকা প্রিজন ভ্যানে গাড়িবহরের পেছনে থাকা মিছিল থেকে হামলার
ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা তখন প্রিজন ভ্যান ভেঙে দুই কর্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে যান
বলে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের হামলার
বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মিছিলে ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ
করেছেন। পুলিশ ও প্রিজন ভ্যানে কারা হামলা চালিয়েছে, তার নানা তথ্যপ্রমাণ ও
ছবি রয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেক ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ফলে তঁাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া কঠিন কিছু নয়। এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর উচিত হামলাকারীদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও তঁাদের বিচার
নিশ্চিত করা। মঙ্গলবার হাইকোর্টের সামনে হামলার ঘটনার পর বিএনপির প্রায় ৭০
জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির
সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এই হামলার ঘটনা কোনোভাবেই যেন বিএনপি বা
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের উপলক্ষ না হয়, সে ব্যাপারে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনী সচেতন থাকবে বলে আমরা আশা করি।
২০১৮ নির্বাচনের বছর।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে ‘নির্বাচনী’ প্রচারাভিযান শুরু করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সিলেটে জনসভা করে ডিসেম্বরে নৌকায় ভোট
দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব দলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি সব দলের
জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা
নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারি দলের। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই যে
দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি
পালনের সুযোগ পাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক
পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করে। সরকার ও সরকারি দলকে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে
এবং একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দলীয় কর্মসূচি পালনের সুযোগ-সুবিধা
নিশ্চিত করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও
গ্রহণযোগ্য—এটাই প্রত্যাশিত। এর জন্য রাজনীতিতে একটি সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ
পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। মঙ্গলবার বিকেলে হাইকোর্টের সামনের ঘটনাটি তাই
আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমরা আশা করব, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে
সংঘাত ও সহিংসতার পথ বাদ দিয়ে সব পক্ষ সহনশীলতার পরিচয় দেবে।
No comments