ফেসবুকে কবুতরের হাট
সাদা-কালো পালক, গোলাপি ঠোঁট—নজরকাড়া
রেড লাহোর জাতের কবুতরটির ছবি ফেসবুক ওয়ালে। ছবির নিচের মন্তব্য ঘরে চলছে
দরদাম। আহমেদ সাকিব নামের একজন চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থেকে এই ছবি
আপলোড করেন। জোড়া কবুতর ও একটি ছানার দাম হাঁকা হয়েছে ৩ হাজার টাকা। সঙ্গে
দেওয়া আছে বিক্রেতার মুঠোফোন নম্বর। শুধু আহমেদ সাকিব নয়, আরও অনেকে
কবুতরের ছবি আপলোড করেছেন একই নিয়মে। তাঁরা সবাই বিক্রেতা। কবুতর বিক্রির
ডিজিটাল এই হাটের কারবার চলে ফেসবুকে। ‘সিটিজি অনলাইন পিজন বাই অ্যান্ড
সেল’ নামের একটি গ্রুপ পেজের মাধ্যমে চলে বেচাকেনা। গ্রুপটিতে গতকাল বুধবার
পর্যন্ত সদস্য হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৯ জন। এই গ্রুপের অ্যাডমিনের সঙ্গে কথা বলে
জানা গেছে, পেজে মাসে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জোড়া কবুতর বিক্রি হয়। গত ৩০ দিনে
কবুতর বিক্রির পোস্ট দেওয়া হয়েছে ৩৬২টি। ফেসবুকে গ্রুপটি খোলেন সরোয়ার
জামান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তিনি থাকেন কাতারে। গ্রুপটির বর্তমান
অ্যাডিমন তাঁর ছোট ভাই সাইদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম নগরের
সদরঘাটস্থ ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ফিন্যান্স বিভাগে স্নাতক (সম্মান)
তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। থাকেন নগরের নাসিরাবাদ এলাকায়। সাইদুজ্জামান
চৌধুরী গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই শখের বসে কবুতর পালন
করতেন। তিনিও তাঁকে সহযোগিতা করতেন।
তাঁরা তখন অন্য একটি গ্রুপে কবুতর
বেচাকেনা করতেন। পরে তিনি তাঁর ভাইয়ের ফেসবুক আইডি থেকে এই গ্রুপটি খোলেন
২০১৬ সালের শুরুর দিকে। অল্প দিনের মধ্যে সেটি জনপ্রিয়তা পায়। তখন
চট্টগ্রামের কবুতর বিক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে এটি খোলা হয়, এখন ঢাকা,
সিলেট ও রাজবাড়ী থেকে এখানে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পেজের সুবিধা
হলো, যেকোনো সদস্য বিক্রির জন্য কবুতরের ছবি কিংবা ভিডিও পোস্ট দিতে পারেন,
আবার কেনার জন্য সদস্যরা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী স্ট্যাটাস দেন। যাঁরা এই
পেজের সদস্য তাঁরা নোটিফিকেশন পাবেন। অনেকে ইনবক্সে তথ্য আদান-প্রদান করে
দর-কষাকষি করতে পারেন। যে স্ট্যাটাসে কবুতরের দাম ফিক্সড লেখা থাকবে সেখানে
দর-কষাকষি হয় না। দরদাম ঠিক হলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কিংবা সরাসরি
টাকার লেনদেন করে কবুতর নিয়ে যান। অনেকে টাকা একসঙ্গে দিতে না পারলে কিছু
টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিক্রেতার কাছে পাঠিয়ে পছন্দের বায়না করতে
পারেন। এ ছাড়া আগে টাকা পরিশোধ করতে পারেন ক্রেতা। পরে যেকোনো বাস
সার্ভিসের মাধ্যমে কবুতর গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কারও খামারে
রোগবালাই দেখা দিলে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি জানাতে পারে। সে ক্ষেত্রে
অভিজ্ঞ খামারিরা তাঁদের সহযোগিতা করেন। অথবা কী করলে অসুবিধা থেকে মুক্তি
পাবে তার পরামর্শ দেন গ্রুপের সদস্যরা। এ গ্রুপের কিছু অসুবিধার কথাও
জানালেন সাইদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, অনেকে পুরোনো ছবি কিংবা অন্যের
আইডি থেকে কপি করা ছবি পোস্ট দিয়ে দেন। কেনার পর দেখা যায় অসুস্থ, দুর্বল
কবুতর পাঠিয়েছেন বিক্রেতা। অথবা যে টাকা কথা হয়েছে, সে টাকা পাঠান না
ক্রেতা। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁদের গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ
রকম ৩ হাজারের মতো সদস্যকে গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। গ্রুপটিতে
আমেরিকা, ব্রিটেন থেকে আমদানি করা এক জোড়া কবুতর সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা
বিক্রি হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ৪ থেকে ২০ হাজার টাকা দামের কবুতর।
কবুতর বিক্রি হলে পোস্টে সোল্ড নামে একটি অপশন রয়েছে। সেখানে বিক্রেতা
সোল্ড লিখে দেন। অনেক সময় পোস্টটি ডিলিটও করে দিতে পারেন। বেশি বিক্রি হওয়া
কবুতরের মধ্যে রয়েছে শো-কিং, ফেন্সি, ব্লু-বার্লেস, বোখারা ট্রামপিটার,
লাহোর (রেড, ব্ল্যাক), গিরিবাজ, জেকোবিন, শর্ট ফেসড, চেকারড (রেড, ব্লু),
গ্রেভার বেলজিয়াম রেচার হোমা ও ময়ূরপঙ্খী। এই গ্রুপের মাধ্যমে কবুতর বিক্রি
করেন সীতাকুণ্ডের তরুণ রায়হান উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে শখের বসে তিনি
দেশীয় জাতের দুই জোড়া কবুতর পালন শুরু করেন। তখন তিনি শুকলালহাট,
সীতাকুণ্ড, কুমিরাসহ বিভিন্ন বাজারে, গ্রামের বিভিন্ন স্থানে খাঁচায় করে
নিয়ে কবুতর বিক্রি করতেন। ২০১২ সালে তিনি ফেসবুকে ঢাকা পিজন ক্লাব নামের
একটি গ্রুপে যুক্ত হন। এরপর থেকে অনেক গ্রুপে তিনি কবুতর বিক্রি করেছেন।
সর্বশেষ দেড় বছর আগে তিনি এই গ্রুপে বেচাকেনা করছেন। এই গ্রুপের মাধ্যমে
জানুয়ারি মাসে ১০ জোড়া কবুতর বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন বলে
জানান।
No comments