বৈশাখী মেলা ঘিরে চলছে মানিকগঞ্জে ২৫ হাজার শিল্পীর প্রস্তুতি
আর
কয়েকদিন পরেই বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ। নববর্ষকে বরণ করতে আগ্রহের
কোনো কমতি নেই মানিকগঞ্জের গ্রামীণ জনপদের মানুষজনের। চৈত্র সংক্রান্তি
থেকে পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা। বাঙালির ঐতিহ্য
ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নববর্ষের বৈশাখী মেলা। আর এ
মেলাকে সামনে রেখেই জেলার প্রায় ২৫ হাজার তাঁত, হস্ত ও মৃৎশিল্পী আর
মিষ্টির কারিগররা পার করছেন ব্যস্ত সময়। বৈশাখী মেলার অন্যতম আকর্ষণ মাটির
তৈরি খেলনাসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। বৈশাখী মেলায় মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র
বিক্রির প্রস্তুতি নিতে চৈত্র মাসের শুরু থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঘিওর
উপজেলাসহ জেলার প্রায় ৪ সহ¯্রাধিক মৃৎশিল্পী। বাড়ির পুরুষদের কাজে সহযোগিতা
করতে ঘরে বসে নেই ওইসব পল্লীর রমণীরা। বৈশাখী মেলার খেলনা তৈরির মাধ্যমে
হাতেখড়ি দিচ্ছে পাল পাড়ার ভবিষ্যত প্রজন্মের শিশুরাও। সরেজমিন দেখা যায়,
কর্মমুখর কুমার পাড়ায় কোথাও হচ্ছে মাটি থেকে কাদা তৈরির কাজ, কোথাও হচ্ছে
নানা আকারের পাত্র তৈরি। পণ্য তৈরি শেষে শুকানো হচ্ছে তা। সবশেষে দেয়া
হচ্ছে রং তুলির আঁচড়। এখানকার পণ্য নিয়ে কুমাররা বেরিয়ে পড়বেন দেশের
বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশাখী মেলায়। সেসব মেলায় নিজেদের বানানো পণ্যের পসরা
সাজিয়ে বিক্রি করবেন তারা। ঘিওরের পাল পাড়ার মৃৎশিল্পী, তরণী পাল, প্রবীণ
সুখেন পাল ও গৃহবধূ শিল্পী রানী পাল জানান, তারা প্রত্যেকেই মেলার জন্য
মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করছেন। চাহিদার কথা চিন্তা
করে পুতুল, ব্যাংক, আম, কাঁঠাল, হরিণ, ঘোড়া, হাতি, মাছ, ময়ুর, সিংহসহ হরেক
রকম শিশু খেলনা, ঘর গৃহস্থালীর হাড়ি, পাতিল, ঢাকনা, ঝাজর, কলসসহ নানান
তৈজসপত্র, ঘর সাজানোর জন্য ফুলদানি, টবসহ নানান জিনিসপত্র তৈরী করছেন।
মির্জাপুর (তরা) এলাকার হারান পাল বলেন, নতুন প্রজন্মের সন্তানরা এখন তাদের
পূর্বপুরুষদের পেশায় আসতে চাইছে না। কারণ আগের মতো এখন আর তৈজসপত্রের
একচেটিয়া ব্যবসা নেই। নেই তেমন মর্যাদাও। পাল পাড়ার সন্তানরা এখন পড়াশোনা
শিখে চাকুরীতে আগ্রহী।
হরেক স্বাদের মিষ্টি ছাড়া বৈশাখী মেলা কল্পনাও করতে
পারে না মানিকগঞ্জের লোকজন। এছাড়াও সারাদেশেই রয়েছে মানিকগঞ্জের মিষ্টির
কদর। রসগোল্ল, জিলাপী, দধি, মাসকলাই আমিরতী, রসমালাই, সন্দেশ, কালোজাম,
চমচম তৈরী করতে দুধ, চিনি, গুড়, মাসকলাইসহ অন্যান্য উপকরণ ক্রয় এবং মিষ্টি
তৈরী করার কাজে দম ফেলার ফুসরত নেই ঘোষপাড়ার নারী-পুরুষদের। একটি বেসরকারী
সংস্থার তথ্য মতে, জেলায় এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় ৬ হাজার লোক।
ঘিওরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি বিক্রির প্রতিষ্ঠান নিজাম সুইটমিটের ব্যবস্থাপক
জানান, আমাদের মিষ্টির চাহিদা এমনিতেই ব্যাপক। এছাড়াও পহেলা বৈশাখে
অতিরিক্ত ৪০/৫০ মণ মিষ্টি বিক্রি বেশি হবে। তাই কারিগররা এখন ভীষন ব্যস্ত।
জেলার ৭টি উপজেলাতেই রয়েছে কম বেশি তাঁতশিল্প। বৈশাখী শাড়ি, লুঙ্গি, বাহারী
রংয়ের গামছা তৈরির কাজে মানিকগঞ্জের তাঁতশিল্পীদের ঘুম নেই চোখে। এছাড়াও
মানিকগঞ্জের সিল্ক, মসলিন, থানকাপড় ও কারু কাজ সমৃদ্ধ শাড়ির কদর দেশজুড়ে।
তাঁত মালিক আবদুল বাসেত মিয়া জানান, মালিক-শ্রমিক মিলে প্রায় ১০ হাজার লোক এ
পেশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শ্রমিক নিয়ামত মল্লিক জানান, দিনপ্রতি ৩৫০
থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করছেন একেকজন শ্রমিক। তবে পয়লা বৈশাখ ও ঈদ-পূজায়
রোজগার বেড়ে যায়। কুটির শিল্পীরা বাঁশ-বেত সামগ্রী, রঙিন হাতপাখা, মোড়া,
টেবিলম্যাট, ওয়ালম্যাট, ট্রে, ফুলদানি, ছাইদানি, শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ
ঘর গৃহস্থালীর নানাবিধ উপকরণ তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার ২ হাজারেরও
বেশি পরিবার। কাটিগ্রাম এলাকার মো: শামসুল মিয়া জানান, এবার বৈশাখী মেলায়
প্রতিটি পরিবার গড়ে ৩০/৪০ হাজার টাকার সামগ্রী বিক্রি করবে।
No comments