যশোরে অন্তঃসত্ত্বা নারীর আত্মহত্যার চেষ্টা
যশোরে
পুলিশের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন
সাবিনা ইয়াসমিন (৩২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। সোমবার সকালে সদর উপজেলার
বড় শেখহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সাবিনা ওই গ্রামের আবদুল গফুরের স্ত্রী।
তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাবিনার অভিযোগ,
বিভিন্ন সময় তার স্বামী আবদুল গফুরকে মাদক মামলায় আটক করে অন্তত ৫ লাখ টাকা
হাতিয়ে নিয়েছেন যশোর ডিবি পুলিশের দারোগা আলমগীর হোসেন ও কোতোয়ালি থানার
দারোগা বিপ্লব। পাশাপাশি তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন দারোগা আলমগীর।
হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে সাবিনা যুগান্তরকে জানান, বছরখানেক আগে সঙ্গদোষে
তার স্বামী আবদুল গফুর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় দারোগা আলমগীর তাকে বেশ
কয়েকবার আটক করেন। প্রতিবারই ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে পেইন্ডিং মামলায় চালান
দেন। এভাবে তার নামে ৫টি মামলা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি ও আত্মীয়-স্বজন
মিলে গফুরকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে সুস্থ ও মাদকমুক্ত করেন।
নামাজ-কালামের পাশাপাশি তাকে তাবলিগ জামাতেও পাঠান। সাবিনার দাবি, তার
স্বামী ভালো হওয়ার চেষ্টা করলেও দারোগা আলমগীর ও বিপ্লব তার পিছু ছাড়েনি।
২৪ মার্চ তারা পুলিশ সুপারের কথা বলে গফুরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। যা
গোটা গ্রামবাসী জানেন।
কিন্তু এ দিন সন্ধ্যায় পুলিশ সাবিনাকে ফোন করে
জানায়, তার স্বামীর কাছ থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। তাকে ছাড়িয়ে
নিতে হলে ১০ লাখ টাকা লাগবে। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরদিন পুলিশ তাকে আটক
দেখিয়ে চালান দেয়। ওই দিন রাতে দারোগা বিপ্লব তাকে ফোন করে ৯০ হাজার টাকা
দাবি করেন। অন্যথায় তার স্বামীর হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। বিপ্লবের
টাকা দাবির পাশাপাশি দারোগা আলমগীর তাকে ফোন করে বলেন, ‘টাকা-পয়সা দিতে না
পারলে তুই আমার সঙ্গে রাত কাটালে তোর স্বামীর সব অপরাধ মুছে দেব।’ এ
পরিস্থিতিতে বাড়ির টিভি-ফ্রিজ বিক্রি করে ২৬ মার্চ ২০ হাজার টাকা পুলিশকে
দেন তিনি। এসব বিষয় উল্লেখ করে স্বামীকে রক্ষায় ২৮ মার্চ পুলিশ সুপার বরাবর
আবেদন করেন সাবিনা। আবেদনে তিনি জানান, দারোগা আলমগীর ও বিপ্লব ফোন করে
তাকে হুমকি-ধমকিসহ অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ৬ মাসের
অন্তঃসত্ত্বা। এই পরিস্থিতিতে সুবিচার না পেলে তিনি সন্তানদের নিয়ে একসঙ্গে
আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বরং এসপির কাছে আবেদন করায় দারোগা আলমগীর ও বিপ্লব ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার রাতে
সাবিনার বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গালাগাল করে ফের হুমকি দেন। সোমবার সকালে
সাবিনা সন্তানদের নিয়ে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। প্রতিবেশীরা
তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে
মুঠোফোনে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়।
আমি কিছুই জানি না। কিন্তু আমার দোষ দেয়া হচ্ছে।
তবে গফুরের পরিবারের সবাই
আমাকে চেনে। পুলিশের কেউ ওদের বাড়িতে গেলেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়।
গত ৬ মাসে গফুরের বাড়িতে গেছি প্রমাণ দিতে পারলে শাস্তি মাথা পেতে নেব। এ
ব্যাপারে কথা বলতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপ্লবের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন
রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ব্যস্ত আছি বলে কেটে দেন। এরপর আর রিসিভ
করেননি। যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ মো. আবু সরোয়ার
বলেন, ওই মহিলার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। যশোর
গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমাউল হক বলেন, ‘ওই মহিলা মাদক
ব্যবসায়ী। তার অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ভূয়া ও ভিত্তিহীন। এটা তার মাদক
ব্যবসার কৌশল।’ যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজমল হুদা সাংবাদিকদের জানান,
সাবিনা নামে এক নারীর বিষপানের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তার অভিযোগ সম্পর্কেও
পুলিশ অবগত হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
No comments