সরকার উৎখাতে মোসাদের সঙ্গে চুক্তি বিএনপি নেতার
শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা
‘মোসাদ’র আশ্রয় নিয়েছিলেন বিএনপির একাধিক নেতা। মোসাদের সঙ্গে গোপন চুক্তিও
হয়েছিল। এতে বিএনপির একাধিক নেতার নাম উঠে এলেও নেতৃত্ব দেন বিএনপির যুগ্ম
মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। ভারতের রাজধানী দিল্লি ও আগ্রায় বসে মাসিক ২০ হাজার
ডলারের (প্রায় ১৬ লাখ টাকা) এ চুক্তি হয় আসলাম চৌধুরীর সঙ্গেই। এতে
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন মানবাধিকার কর্মী শিপন বসু। চুক্তির টাকাও
লেনদেন হয়েছে। হুন্ডি ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হয় চুক্তির
এসব টাকা। আসলাম চৌধুরীকে মোসাদ কর্মকর্তা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে পরিচয়
করিয়ে দেন শিপন বসুই। গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে এমনই
চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা মামলার
তদন্ত শেষ করে এনেছেন। শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হচ্ছে। চলছে শেষ
মুহূর্তের কাজ। মামলায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ছাড়াও মানবাধিকার কর্মী
শিপন বসু ও বিএনপির একাধিক নেতাকে আসামি করা হচ্ছে। তবে বিএনপি নেতাদের নাম
জানা যায়নি। আসলাম চৌধুরী জেলে থাকলেও বাকিরা পলাতক। শিপন বসুকে গ্রেফতারে
চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, শিপন ভারতে পালিয়ে থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে গুলশানের কেএফসিতে সরকার উৎখাতের যড়যন্ত্রের প্রথম
বৈঠক হয়। সেখানে আসলাম চৌধুরী, শিপন বসুসহ বিএনপির একাধিক নেতা উপস্থিত
ছিলেন। এরপর নিকেতনে আসলাম চৌধুরীর অফিস ও বাসায়ও একাধিক বৈঠক হয়। এরই
ধারাবাহিকতায় গত বছরের মার্চে ভারত যান আসলাম চৌধুরী। ভারতের দিল্লি ও
আগ্রায় বসে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কর্মকর্তা ও ইসরাইলের সেন্টার
ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান লিকুদ পার্টির
নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন আসলাম। সরকার উৎখাতে দেশে
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মাসিক ২০ হাজার ডলারে চুক্তি হয় তাদের
মধ্যে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, তদন্ত
প্রায় শেষ। এতে চারজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। আসলাম চৌধুরী ছাড়া
অন্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার
শেখ নাজমুল আলম যুগান্তরকে জানান, খুব শিগগিরই জড়িতদের অভিযুক্ত করে
আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদোহ মামলায় চার্জশিট দেয়ার
আগে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। শিগগিরই অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি মেলার পর যে
কোনো মুহূর্তেই চার্জশিট দেয়া হবে। গত বছর ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল
বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আসাদুজ্জামান
মিয়াকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তার সহকারী এখন মুক্ত।
স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে গত বছরের ২৬ মে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির
১২০ (বি), ১২১ (৩), ও ১২৪ (এ) ধারায় ডিবির পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বাদী
হয়ে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেন। মামলায় বলা হয়েছে, গত বছর ৫
মার্চ থেকে ৯ মার্চ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ভারতে অবস্থানকালে
বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কবহির্ভূত
রাষ্ট্র ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে
সাক্ষাৎ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের পর তাকে
জিজ্ঞাসাবাদসহ উদ্ঘাটিত তথ্যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের যড়যন্ত্রের
অভিযোগ পাওয়া যায়। ভারতে বসে যড়যন্ত্র হওয়ার কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তারা
ভারতে গিয়েও মামলার তদন্ত করেন। সেখান থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান ডিবির
কর্মকর্তারা। মামলা তদন্তে ভারতে যান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার
শেখ নাজমুল আলম, অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহজাহান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার
মাহফুজুল আলম রাসেল ও পুলিশ পরিদর্শক ফজলুত হক। ইমিগ্রেশন সূত্রের বরাতে
জানা যায়, ভারত সফরের আগে ও পরে আসলাম চৌধুরী দু’দফা লন্ডন সফর করেন।
ব্যাংকের মাধ্যমে চুক্তির টাকা পরিশোধ : মোসাদের সঙ্গে ২০ হাজার ডলার মাসিক
চুক্তির অর্থ পরিশোধ হতো হুন্ডি ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে। তদন্ত
কর্মকর্তারা জানান, নবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে
চুক্তির অর্থ পরিশোধের তথ্যপ্রমাণ পুলিশের হাতে রয়েছে। ২০০১ সালে চারদলীয়
জোট ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন
জামায়াত-শিবির করা এই আসলাম চৌধুরী।
No comments