সহিংসতা না থামালে আরও কঠোর হবে সরকার -শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন ধরনের সহিংসতা রাজনীতির পর্যায়ে পড়ে না।
জামায়াত-বিএনপি আন্দোলনের নামে যা করছে তা রাজনীতি না। তারা নাশকতা না
থামালে সরকার আরও কঠোর হতে বাধ্য হবে। গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা
সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, আমরা শিক্ষা বছরের প্রথম দিনে সকল
শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছি। আর বিএনপি-জামায়াত শিক্ষা বছরের শুরুতেই
লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি-জামায়াত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনেও হরতাল ডেকেছে এবং বিশ্ব
ইজতেমার সময়ে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী
মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে
অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতার হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য বিষয়ে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায়
বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এছাড়া, তিনি ২০১৪ সালে প্রাথমিক
শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় সেরা বিদ্যালয়, সরকারি কর্মকর্তা,
নির্বাচিত প্রতিনিধি, ইনস্ট্রাক্টর, শিক্ষক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের
কর্মচারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার
দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে- যা একটি শিক্ষিত সমাজ
ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মৌলিক
অধিকার। একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তৈরির মূল্য ভিত্তি হচ্ছে মানসম্মত ও
যুগোপযোগী প্রাথমিক শিক্ষা। বর্তমান সরকার ছেলে-মেয়ে উভয়কে শিক্ষিত করার
ওপর সমান গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ, নারীদের শিক্ষা বঞ্চিত করে কোন জাতি উন্নতি
করতে পারে না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেয়া পরিকল্পনা যথাযথভাবে
বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আজ পরিপূর্ণভাবে শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হতো। বিপুল
আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা অর্জনকারী একটি দেশের আরও
সমৃদ্ধ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর ধরে
উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ পিছিয়ে পড়ে। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে
সম্পৃক্ত কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন,
জাতিসংঘের ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা থাকলেও
বাংলাদেশে ২০১১ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সরকারের গুরুত্ব প্রদান এবং সকল কর্মকর্তা, শিক্ষক ও
কর্মচারীদের আন্তরিক সেবার জন্য এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে এ কথা উল্লেখ
করে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষাখাতে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় গুরুত্ব প্রদান
করেছে। সকল বিদ্যালয়ে ‘মিড-ডে মিল’ চালুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এটাকে ঝরেপড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত
করেছে। এই মিড-ডে মিল চালুর জন্য জনপ্রতিনিধি, স্কুল কমিটি, অভিভাবক,
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার
বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, বৃত্তি ও উপ-বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার
ব্যয়ভার নিজ কাঁধে নিয়েছে। উপবৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৭৮ লাখ ৭০ হাজার
১২৯ জনে উন্নীত করা হয়েছে। এ সঙ্গে ৯৬টি দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলার ২৯ লাখ
শিক্ষার্থীর মধ্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা যেনো ধর্মের চেতনা অনুধাবন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে কেউ তাদের
ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ত করতে না পারে- এ জন্য ধর্মীয়
শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা
সম্পূর্ণভাবে জাতীয়করণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরো ৯৫১ প্রাথমিক
বিদ্যালয়কে সরকারি করা হবে।
No comments