‘১ লাখ টাকার জন্য অপহরণ করা হয় ইলিছকে’
‘এক
লাখ দিলে ইলিছকে জীবিত পাবে। নতুবা তাকে খুন করা হবে’- এমন হুমকি মোবাইল
ফোনে দিয়েছিল সিলেটের অপহরণচক্রের সদস্য লাহিন ও জহির। হুমকির পরপরই বিষয়টি
র্যাবকে জানানো হয়েছিল। আর সিলেটের র্যাব ৯-এর সদস্যরা এ নিয়ে তদন্তের
একপর্যায়ে দুই অপহরককে গ্রেপ্তার করতে ফাঁদ তৈরি করে। আর র্যাবের সেই
ফাঁদে ধরা পড়েছে সিলেটের অপহরকচক্রের দুই সদস্য লাহিন ও জহির। সেই সঙ্গে
অপহরণের একদিন পর উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন খান
ইলিছকে। র্যাব জানায়, অপহরক লাহিন ও জহিরের আস্তানা থেকে ১২টি ককটেল, সিল ও
স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। কাউকে অপহরণ করে ওই দুই যুবক ককটেল সামনে
রেখে ছবি তুলতো। আর স্ট্যাম্পে দস্তখত রেখে প্রতারণা করতো। সিলেটের
ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন খান ইলিছ গত রোববার ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা
দেন। তিনি সোমবার সিলেটে এসে পৌঁছলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি আকস্মিক
নিখোঁজ হয়ে যান। তবে, ইলিছ সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে তার দুলাভাই ফিরোজ
আলমকে জানিয়েছিলেন তিনি সিলেটে এসে পৌঁছেছেন। ওদিকে, ব্যবসায়ী ইলিছ নিখোঁজ
হওয়ার পর মঙ্গলবার ফোন আসে তার দুলাভাই ফিরোজ আলমের মোবাইল ফোনে। মোবাইল
ফোনে অপহরকচক্রের সদস্য লাহিন ও জহির জানায়, ইলিছকে অপহরণ করে নেয়া হয়েছে।
তাদের কাছে এক লাখ পাঠালে তারা অপহৃত ইলিছকে ছেড়ে দেবে। ফোন পাওয়ার পর
ফিরোজ আলম বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেন। আর অপহরকদের কাছে তাদের
কথামতো বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। বাকি টাকা ফিরোজ নগরীর
আম্বরখানাস্থ একটি দোকানে পাঠায়। আর ওই দোকান থেকে টাকা তুলতে এলে মঙ্গলবার
রাতে সিলেট র্যাব-৯-এর সদস্যদের ফাঁদে ধরা পড়ে অপহরক লাহিন ও জহির।
গ্রেপ্তারকৃত লাহিন মিয়া সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার সালুটিকরের আনোয়ার
হোসেনের ছেলে ও জহির রায়হান কোম্পানীগঞ্জের পাড়ুয়া এলাকার মাঝপাড়া গ্রামের
মছদ্দর আলীর ছেলে। র্যাব তাদের আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাদের দেয়া তথ্য মতে র্যাব সদস্যরা নগরীর
কুমারপাড়া ১৭-১ নম্বর বাসা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন খান ইলিছকে
উদ্ধার করে। এদিকে, র্যাব সদস্যরা অপহৃতদের উদ্ধারের পর অপহরক দুজনকে আরও
জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা জানায়, ওই বাসার উত্তর-পশ্চিম কোণের
একটি কক্ষে ১২টি ককটেল, স্ট্যাম্পসহ অন্য মালামাল রয়েছে। র্যাব তাদের
দেয়া তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে ওই মালামাল উদ্ধার করে। বুধবার র্যাব জানায়,
লাহিন ও জহির চিহ্নিত পেশাদার অপহরকচক্রের সদস্য। তারা ইতিমধ্যে বহু
মানুষকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করেছে। আর মুক্তিপণ আদায়ের পর অপহৃত
ব্যক্তির দস্তখত স্ট্যাম্পে রেখে দিতো। একই সঙ্গে সামনে ফেনসিডিল রেখে ছবি
তুলে রাখতো। গ্রেপ্তারের পর লাহিন ও জহির তাদের অপকর্মের কথা র্যাবকে
জানিয়েছেন। এদিকে, লাহিন ও জহিরকে গ্রেপ্তারের পর তাদের পুলিশের হাতে
সোপর্দ করা হয়েছে। এলাকা সূত্রে জানা গেছে, লাহিন ও জহির নামের দুই যুবক
কুমারপাড়া এলাকার ওই বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস করতো। তারা এলাকায় বসবাস করলেও
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। বিভিন্ন সময় তারা বাসায়
লোকজনকে নিয়ে এলে নিজের আত্মীয় বলে পরিচয় দিতো। তবে, তাদের আচরণ সব সময়
সন্দেহের চোখে ছিল বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।
No comments