হাসপাতালে দগ্ধদের আর্তনাদ by আরিফুল হক
(পুড়ে কয়লা হয়ে গেছেন স্বামী, শাশুড়িসহ তিন স্বজন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে শোকে পাথর নিলুফার l ছবি: প্রথম আলো)
‘আমার পুরো শরীরে অসহ্য ব্যথা। আমাকে দেখার কেউ নেই। দয়া করে আমাকে
বাঁচান।’ বলছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে
চিকিৎসাধীন মাহবুব রহমান। মিঠাপুকুরে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় আহত
মাহবুবের মতো অনেকেরই এমন আর্তি শোনা যাচ্ছিল ওই হাসপাতালে। যাত্রীবাহী
বাসটি যখন জ্বলছিল, জীবন বাঁচাতে ওই বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিলেন
মাহবুব। এতে তাঁর ডান পা ভেঙে গেছে। জখম হয়েছে শরীরের বিভিন্ন অংশে। ঢাকার
একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন মাহবুব (৩২)। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের
উলিপুর উপজেলার রামদাস গ্রামে। চাকরি যাওয়ার ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার
উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি। পেট্রলবোমায় দগ্ধ মিনারা বেগম (৩৫) ও
তছিরন নেছা (৬০) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায়
কাতরাচ্ছেন। চোখেমুখে দগদগে ক্ষত। দেখলে আতকে ওঠার মতো। পাশে থাকা
স্বজনদের চোখেমুখে বিষণ্নতা। এমন নৃশংস ঘটনায় যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন
তাঁরা। মিনারা বেগমের স্বামী কুড়িগ্রামের উলিপুরের ফজলুল হক ঢাকার
গাজীপুর এলাকায় ছোট্ট দোকান করেন। একমাত্র মেয়ে ফারজানা (৮)। তারও ডান
হাত দগ্ধ হয়েছে। মায়ের পাশে অসহায় ফারজানা এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। মিনারার
পাশে তাঁর স্বজন আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ভাগনে-বউ মিনারা বেগম। গত দুই দিন
আগে কুড়িগ্রামে এসেছিলাম। বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না।
শেষমেশ যখন গাড়ি পাওয়া গেল...।’ কথা শেষ করতে পারলেন না তিনি। মাথা নিচু
করে কাঁদতে থাকেন।
(পিঠে-হাতে
দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন একজন (বাঁয়ে)। পেট্রলবোমায় পুড়ে যাওয়া
খলিল এন্টারপ্রাইজের বাস। বাসটি রাখা হয়েছে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের
সামনে l প্রথম আলো)
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কুড়িগ্রামের উলিপুরের মালতিবাড়ী এলাকার বদরুজ্জামানের ছেলে রাশেদ খানের (৩০) ঢাকায় দোকান রয়েছে। তাঁরও ডান পা ভেঙেছে। ব্যথা ও যন্ত্রণায় হাসপাতালের শয্যায় ছটফট করছেন। তাঁর পাশে নেই কোনো স্বজন। তিনি বলেন, ‘ঘুম ঘুম ভাবের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার। দেখি বাসের মধ্যে আগুন। এরপর জানালা দিয়ে ঝাপ দিই। রাস্তার মধ্যেই কাতরাতে থাকি। পরে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।’
এ ছাড়া সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উপুড় হয়ে শুয়ে মুখ, হাত ও পিঠে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সবুজপাড়া গ্রামের লতিফ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৩)। তিনি বলেন, ‘আমি এখন বড় অসহায়। আমার পাশে কেউ নেই। চোখমুখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি আর কিছু বলতে পারছি না। আমাকে বাঁচান।’
হাসপাতালের পরিচালক আবদুল কাদের খান জানান, আহত কারও কারও অবস্থা গুরুতর। দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কুড়িগ্রামের উলিপুরের মালতিবাড়ী এলাকার বদরুজ্জামানের ছেলে রাশেদ খানের (৩০) ঢাকায় দোকান রয়েছে। তাঁরও ডান পা ভেঙেছে। ব্যথা ও যন্ত্রণায় হাসপাতালের শয্যায় ছটফট করছেন। তাঁর পাশে নেই কোনো স্বজন। তিনি বলেন, ‘ঘুম ঘুম ভাবের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার। দেখি বাসের মধ্যে আগুন। এরপর জানালা দিয়ে ঝাপ দিই। রাস্তার মধ্যেই কাতরাতে থাকি। পরে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।’
এ ছাড়া সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উপুড় হয়ে শুয়ে মুখ, হাত ও পিঠে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সবুজপাড়া গ্রামের লতিফ মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩৩)। তিনি বলেন, ‘আমি এখন বড় অসহায়। আমার পাশে কেউ নেই। চোখমুখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি আর কিছু বলতে পারছি না। আমাকে বাঁচান।’
হাসপাতালের পরিচালক আবদুল কাদের খান জানান, আহত কারও কারও অবস্থা গুরুতর। দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
No comments