সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে লতিফ সিদ্দিকীকে আমন্ত্রণ by দীন ইসলাম
আগামী
সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন সাবেক বিতর্কিত টিএন্ডটি মন্ত্রী আবদুল
লতিফ সিদ্দিকী। আগামী ১৯শে জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে
জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে কারা
অধিদপ্তর সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
(বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন লতিফ সিদ্দিকীর কাছে তার
মনোভাব জানতে চায়। লতিফ সিদ্দিকী অধিবেশনে যোগ দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে কারা
অধিদপ্তরের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন। ওই আবেদনে আবেগঘন ভাষায় তিনি বলেছেন,
অনেক ঝঞ্ঝার পরও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছি।
বাবা-মায়ের পর জাতীয় সংসদ আমার অতি শ্রদ্ধার একটি জায়গা। তাই যে কোন উপায়ে
জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনের প্রতিটি দিন উপস্থিত এবং সংসদীয় ব্যবস্থায়
ভূমিকা রাখতে চাই। আশা করছি, এ বিষয়ে আমাকে বিমুখ করা হবে না। এ বিষয়ে
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবজমিনকে
বলেন, কারা অধিদপ্তরের এ ধরনের কোন চিঠি এখনও নজরে পড়েনি। তবে জেলখানায়
থেকেও সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার নজির আছে। সেটা অবশ্যই পরিবেশ পরিস্থিতি
বিবেচনা করে দেখা হবে। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ
সচিবালয়ের আমন্ত্রণপত্র এবং লতিফ সিদ্দিকীর আবেদনসহ একটি চিঠি গত মঙ্গলবার
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কারা অধিদপ্তর। ওই চিঠিতে সংসদ অধিবেশনে
লতিফ সিদ্দিকীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকীকে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার অনুমতি
দিতে চাইলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীকে
প্যারোলে মুক্তি দিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হবে কিনা- এটা
এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সূত্রে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা
চলছে। সহসাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফাইল পাঠানো হতে পারে। এর আগে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সফরে থাকার সময় গত ২৮শে সেপ্টেম্বর নিউ
ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি’র সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ,
তাবলীগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে
নানা বেফাঁস মন্তব্য করেন। এরপর তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
লতিফ সিদ্দিকী সেদিন বলেছিলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলীগ জামাতের ঘোরতর
বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল
সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির অপচয় হয়। তার ওই
বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে কয়েকটি ইসলামী দল আন্দোলনের হুমকি
দেয়। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তারের দাবিও তোলে
বিএনপি। সারা দেশে তুমুল সমালোচনার পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। এ ঘটনায় তার
বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগ এনে সারা দেশে দুই ডজনেরও বেশি
মামলা হয়। বেশ ক’টি মামলাতে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এমন অবস্থার
মধ্যে নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে গত ৩রা অক্টোবরই এক সংবাদ সম্মেলনে
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন লতিফ সিদ্দিকী আর মন্ত্রিসভায় থাকবেন
না। হজ শেষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন
ভূঁইঞা দেশে ফেরার পর ১২ই অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ
করা হয়। এরপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে বাদ দেয়া
হয়। গেল বছরের ২৩শে নভেম্বর অনেকটা আকস্মিকভাবে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী।
এরপর ২৫শে নভেম্বর আত্মসমর্পণের পর থেকেই জেলখানায় বন্দি। যদিও বর্তমানে
অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলে আছেন। সেখানেই কাটছে তার
বন্দি জীবন।
No comments