চট্টগ্রামে গভীর রাতে রাস্তার ধারে ৩ কোটি টাকার সোনা, রহস্য
চট্টগ্রামে
গভীর রাতে দুই পথচারীর কাছ থেকে উদ্ধার করা ৩ কোটি টাকা সোনা নিয়ে রহস্যের
সৃষ্টি হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা এই ব্যাপারে মুখ না খুললেও পুলিশ
ধারণা করছে, তারা আন্তর্জাতিক চোরাচালানি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। সাধারণ
ছদ্মবেশে দীর্ঘদিন ধরে এভাবে সোনা পাচার করে আসছিল। তাদের সঙ্গে নগরীর
স্বর্ণ তৈরির পাড়া হিসেবে পরিচিত হাজারী গলির এক শ্রেণীর কারবারির সঙ্গে
যোগাযোগ রয়েছে। যারা আসল সোনার সঙ্গে নকল সোনা মিশ্রণ করে খাদ তৈরিতে
ওস্তাদ। নগর পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় শহরের কাটাপাহাড় লেইনে
একটি এলিয়ন প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো ৩৭-৩০৪৯) এসে থামে। এই সময় পুলিশ
সদস্যরা তাদের দেখে সন্দেহ করলে চোরাচালানি পরিতোষ দে ও দুলাল কর্মকার সটকে
পড়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের শরীর তল্লাশি করে ৬৫টি
সোনার বার উদ্ধার করেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা। প্রাথমিক
জিজ্ঞাসাবাদে এসব চোরাচালানি তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তারা
একেকবার একেক রকম কথা বলতে থাকে। পরে পুলিশ সদস্যরা নিশ্চিত হন নারায়ণ
নামের এক ব্যক্তিকে দেওয়ার জন্যই তারা ৩ কোটি টাকার সোনা পাচারের উদ্দেশ্যে
নিয়ে যাচ্ছিল। নারায়ণ সোনা চোরাচালানের একজন শক্তিশালী সিন্ডিকেট সদস্য।
ইতিমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের তালিকায় তার নাম সবার উপরে রয়েছে। ঘটনার দিন দুই
ব্যক্তিকে দেখে সন্দেহ করেন কোতোয়ালি থানার এসআই মফিজ উদ্দিন। তাকে ফোনে
এক ব্যক্তি জানায়, গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি সোনার বার পাচারের জন্য
হাজারী গলির দিকে যাচ্ছে। বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে সন্দেহ থেকে
অভিযান চালায় পুলিশের এই ব্যক্তি। শেষমেশ ধরা পড়ে ৩ কোটি টাকার সোনা। তবে
জিজ্ঞাসাবাদে পরিতোষ দে ও দুলাল কর্মকার আরও জানায়, কাটা পাহাড় লেইনে এর
আগেও তারা এভাবে সোনা পাচার করেছে। যার বেশির ভাগই কিনেছে হাজারী গলির
ব্যবসায়ীরা। এরা মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা সোনার বিশাল ক্রেতা। পুলিশ
জানায়, চট্টগ্রামে গত ৬ মাসে যেসব বড় চালান ধরা পড়েছে তার সঙ্গে গ্রেপ্তার
হওয়া ব্যক্তিদের যোগসূত্র রয়েছে। কেননা জিজ্ঞাসাবাদে তারা বেশ কয়েকজন
ব্যক্তির নাম বলেছে যারা আন্তর্জাতিক চোরাচালানি চক্রের সদস্য। সোনা
চোরাচালানের আগে পরিতোষ ও দুলাল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতো। প্রথমে গাড়ির
সব লাইটগুলো নিভিয়ে দিতো। এরপর গাড়িতে বসেই রাস্তার ধারে হতো লেনদেন। তবে
ধরা পড়ার আগে পুলিশ সদস্যরা গাড়িতে টর্চ জ্বালিয়ে তাদের ভেতরে দেখতে পেয়ে
সন্দেহ করে। এরপর জোর করে ধরে নিয়ে আসা হয় কোতোয়ালি থানায়। সেখানে তল্লাশি
করে দেখা যায়, দুইজনের শরীরে জামার ভেতর দুটি কাপড়ের থলে। সেখানে স্কচটেপ
মোড়ানো দুটি প্যাকেটে রয়েছে ৬৫টি পিস সোনার বার। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে
কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম মানবজমিনকে বলেন, ঘটনাটি সত্যিই
রহস্যজনক। এভাবে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার সোনা পেয়ে যাবো তা
কখনোই ভাবতে পারিনি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ওরা আন্তর্জাতিক
চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে দুই ব্যক্তি অনেক
চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। বলেছে হাজারী গলির একটি সিন্ডিকেট নাকি তাদের কাছ
থেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এভাবে সোনা কিনে নিতো। এসব সোনা চট্টগ্রাম
বিমানবন্দর দিয়ে দেশে আসতো। তারপর হাত বদল হয়ে ছড়িয়ে পড়তো বিভিন্ন জায়গায়।
সে যাদের নাম বলেছে তাতে প্রভাবশালী মহলের অনেকেই জড়িত।
No comments