নিউইয়র্কে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকরা।
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ না করতে আদালতের নির্দেশ এবং আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে অবস্থিত সাপ্তাহিক দেশবাংলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।সমাবেশে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিম বিচারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তির সঙ্গে বিচারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে শপথ ভঙ্গ ও আচরণ বিধি লংঘন করেছেন। তার পদত্যাগ করার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে, তিনি অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। একটি সংবাদপত্র এ ধরনের চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করলে সেই পত্রিকা ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মানসিকতা সরকারের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়।
বক্তারা অবিলম্বে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান। একই কারণে বিচারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সংবিধানের শপথ ভঙ্গের অপরাধে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ ও প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভকেট কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে বর্তমানে যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা চলছে আদালতের মাধ্যমে আমার দেশ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপে তা আরও প্রকট হয়েছে।
একটি আদালতে মানুষের জীবন মরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় ব্যক্তিগত আলাপচারিতার ব্যাপার হতে পারে না। এ ধরনের স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর বিষয় জনগণের জানার অধিকার রয়েছে এবং জানানোর দায়িত্ব গণমাধ্যমের। আমার দেশ ও তার সম্পাদক নিষ্ঠার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করে সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেছেন। এজন্য মাহমুদুর রহমান জাতির প্রশংসা ও অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।
বক্তারা বলেন, সত্য প্রকাশের জন্য মাহমুদুর রহমানকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় যায় তারা গণমাধ্যমকে সহ্য করতে পারে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই অসহিষ্ণুতার মাত্রা সব সীমা অতিক্রম করে, যার দৃষ্টান্ত আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চারটি সংবাদপত্র বাদে অবশিষ্ট সকল সংবাদপত্রের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি। আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী মানসিকতার এখনও অবসান ঘটেনি।
তারা আরো বলেন, উইকিলিকস এর ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য গোপন তথ্য এদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এদেশের সরকার কোনো মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা সে সব তথ্য প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। বাংলাদেশে কথায় কথায় সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরার চেষ্টা কোনো শুভ আলামত নয়।
তারা বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে তারাও আইন লংঘন, এমনকি হত্যাকাণ্ডে উস্কানি দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার যোগ্য। ১৯৭১ সালে মানুষ হত্যার উস্কানি দেওয়ায় গোলাম আযম বা তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিচার হলে একই অপরাধে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যেতে পারে।
বক্তারা বলেন, মাহমুদুর রহমান একজন বিচারপতির নৈতিক অসততার বিষয় প্রকাশ করলে তা কি করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মধ্যে পড়ে। তথ্য অধিকার আইন যেখানে গণমাধ্যমকে অধিকার দিয়েছে সঠিক তথ্য প্রকাশের। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাসী নয়, তারাই এ ধরনের মামলা দায়ের করতে পারে।
আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে দেশে ও বিদেশে সরকারের চেহারা উন্মোচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের ঐক্য বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন বক্তারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা হয়রারিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা না হলে দেশের ন্যয় প্রবাসের সাংবাদিকরাও স্বাধীন সাংবাদিকতা সমুন্নত রাখতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খানের সভাপতিত্বে এবং বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি শিহাবুদ্দীন কিসলুর পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহফুজুর রহমান, বাংলা পত্রিকা সম্পাদক ও প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ এর উপদেষ্টা সম্পাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু, বিশিষ্ট সাংবাদিক উইকলি হলিডে’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি মঈনুদ্দীন নাসের, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, মূলধারার রাজনীতিবিদ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাস্টনিউজের যুক্তরাষ্ট্র পরিচালক ও নর্থবেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট হাসানুজ্জামান হাসান, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট খন্দকার ফরহাদ, নিউনেশন এর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি মাহমুদ খান তাসের, বাংলা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি শেখ সিরাজুল ইসলাম, এটিএন বাংলা যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সম্পাদক ফকীর সেলিম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মো. মনিরুল ইসলাম, এনটিভি’র তৌহিদুল ইসলাম, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ এর সিনিয়র রিপোর্টার মমিনুল ইসলাম মজুমদার, দেশবাংলার নির্বাহী সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সাপ্তাহিক আজকাল এর বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ ওয়ালিউল আলম, বার্তা সংস্থা ইউএনএ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, খবর ডটকম সম্পাদক মশিউর রহমান মজু, প্রবাসী বার্তা সম্পাদক মতিউর রহমান লিটু, বাংলাভিশনের আজাদ মোহাম্মদ ও সাপ্তাহিক এখন সময় এর আরিফ মোহাম্মদ।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের খ্যাতিমান কন্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন সভায় উপস্থিত থেকে আমার দেশ বন্ধের ষড়যন্ত্র ও মাহমুদুর রহমানকে হয়রানির বিরুদ্ধে দেশ ও প্রবাসে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
No comments