ঘরে শত্রু রেখে বাইরের আনন্দ শুধু অভিনয়
ঘরে শত্রু রেখে বাইরে আনন্দ শুধু অভিনয়। এই আনন্দের কোনো মানে হয় না। আনন্দ করতে হলে আগে নিজের ঘরকে শত্রুমুক্ত করতে হবে- জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিরু।
এ সময় তার পরনে ছিল বুলেটবিদ্ধ রক্তমাখা ছেঁড়া জামা-কাপড় এবং হাতে ছিল বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
হিরু নোয়াখালীর সেনবাগের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহানের ছেলে। পুরো নাম আব্দুল মোতালেব হিরু।
১৯৯৬ সালে থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দিবসে মুক্তিযোদ্ধার সাজে তিনি ৩২০ বার সেজেছেন। স্বাধীনতার ৪১ বছর পূর্তিতে এটি তার ৩২১তম সাজ।
এ রকম সাজের কারণ জানতে চাইলে হিরু বাংলানিউজকে জানান, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধাদের মূলমন্ত্র শোনানোর জন্য তিনি বারবার মুক্তিযোদ্ধা সাজছেন। যতো দিন বেঁচে থাকবেন সাজবেন এভাবে।
চল্লিশ বছর বয়সী হিরু দেশবাসীকে মুক্তিযোদ্ধার কথা শোনান গান, অভিনয় আর নাটকের মাধ্যমে। মুক্তিযোদ্ধাদের কথা তুলে ধরতে পারাই তার আত্মতৃপ্তি।
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে হিরু প্রতীকী মুক্তিযোদ্ধা সেজে ঘুরে বেড়ান শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে। তার বিশ্বাস, তাকে মুক্তিযোদ্ধার সাজে দেখে সবাই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা স্মরণ করবেন।
তাই রোববার সকাল থেকেই মহান বিজয় দিবসের দিনেও হিরু ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্মৃতিসৌধের একপাশ থেকে আরেক পাশে। লাখো মানুষের এ মিলনমেলায় সবার আকর্ষণের ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন তিনি। তার শরীরে জড়ানো ছেঁড়া গেঞ্জি আর পাজামা যেন জানান দিচ্ছে, একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার কথা।
তবে স্মৃতিসৌধে মানুষের আনন্দ দেখে বিচলিত হিরু।
কারণ জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমরা এখানে যেভাবে আনন্দ করছি, এ আনন্দের কোনো মানে হয় না। কারণ, আমাদের ঘরের শত্রুদের রেখে আনন্দ করা শুধুই অভিনয়।”
‘ঘরের শত্রু’ বলতে হিরু ইঙ্গিত করেন যুদ্ধাপরাধীদের।
তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচার শেষ করতে হলে আমাদের এক হতে হবে। একাত্তরে সবাই যেমন এক হয়েছিল, তেমন করে আজকেও এক হয়ে রাজনীতি করতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণে।”
হিরুর সংসারে রয়েছে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু সে দিকে তেমন নজর নেই তার। দেশবাসীকে মুক্তির গান ও গল্প শুনিয়ে বেশি আনন্দ পান তিনি। ১৮ বছর ধরে দেশের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক দীক্ষা দিতে ছুটে বেড়ান দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
হিরু বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের ঘরের শত্রু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বিজয়ের আনন্দকে আরো অর্থবহ করতে হবে।”
প্রতিবেদকঃ জাহাঙ্গীর সুমন, ইসমাইল হোসেন, মফিজুল সাদিক, ইমরান আলী, ওমর ফারুক ও ওয়ালিউল্লাহ
No comments