লাখো মানুষের বিজয় উল্লাসে উন্মাতাল টিএসসি by মাহমুদুল হাসান
চারদিকে মানুষ। তীব্র জনস্রোত। সব বয়সী মানুষের মিলনমেলা। আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। তাদের ঝলমল আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে শীতের সূর্যকে। মানুষের এ বিজয় মিছিলের যেন কোনো শুরু বা শেষ নেই।
এ দৃশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের। বিজয় দিবস উপলক্ষে গোটা ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে উৎসবস্থলে। আর এ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র টিএসসি।উৎসব শুরু হয়েছিল বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে। সারারাত ধরে চলা উৎসব চলছে রোববার সারাদিন। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নন, ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে অগণিত মানুষ এসে জমায়েত হয়েছেন তারুণ্যের এ তীর্থভূমিতে।
কেউ হাতে নিয়ে এসেছেন লাল সবুজের পতাকা। কেউ আঁকিয়ে নিয়েছেন গালে। পুরুষদের পরনে লাল সবুজ পাঞ্জাবী। আর নারীরা পরেছেন লাল-সবুজ শাড়ি। কারও হাতে ঢোল, কেউ বাজাচ্ছেন বাঁশি। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বাজি ফোঁটাচ্ছেন কেউ কেউ।
ছোট্ট শিশু শান্তনু। পুরান ঢাকা থেকে মায়ের কোলে করে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। তার হাতে জাতীয় পতাকা। গালে আঁকা জাতীয় পতাকা। লাল পাঞ্জাবী আর সবুজ পায়জামা।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত শান্তনুর মা আফরোজা বাংলানিউজকে বলেন, “আমি আমার সন্তানকে বিজয় উৎসব দেখাতে নিয়ে এসেছি। আমি চাই, আমার ছেলে এ উৎসব থেকে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করুক।”
গায়ে বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে উৎসবে যোগ দিতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু নোমান বাংলানিউজকে বলেন, “সত্যিকার অর্থে এখানে বিজয়ের উৎসব করতে এলেও আমার মনের মধ্যে অন্যরকম দুঃখ কাজ করছে। কেননা এ বিজয়, এ স্বাধীনতা আমরা অনেক মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করেছি।”
উত্তরা থেকে টিএসসিতে তারুণ্যের উৎসবে যোগ দিতে এসেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রনি। রনি বাংলানিউজকে জানান, ‘‘যে কোনো উৎসব আমরা বন্ধুরা মিলে টিএসসি এসে উদযাপন করি। এবারের উৎসবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের দাবি, যুদ্ধাপরাধের বিচার।’’
ঢাবিতে নানা অনুষ্ঠান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ও বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
ডাকসুর সামনে ‘রাজাকার ঘৃণাস্তম্ভে’ ডার্টি (ময়লা ও থুথু) নিক্ষেপের আয়োজন করে টিএসসি ভিত্তিক সংগঠন ‘স্লোগান৭১’।
সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজল আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, “বিজয় দিবসে ক্যাম্পাসে আসা হাজার হাজার মানুষ এ স্তম্ভে থুথু নিক্ষেপ করছেন। তাদের সবার দাবি, অবিলম্বে যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি দিতে হবে।”
টিএসসির সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি আয়োজন করে ‘মুক্তিযোদ্ধার ক্যামেরায় মুক্তিযুদ্ধ৭১’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট আলোকচিত্রী হারুন হাবীবের তোলা মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি স্থান পায়।
ব্যাকবেঞ্চার্স ৪টা ২০ মিনিটে টিএসসিতে উদযাপন করে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সেই মুহূর্ত। টিএসসির বাইরের মাঠে মাটি দিয়ে আঁকা হয় বিশাল একটি মানচিত্র।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও এ দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া হলে হলে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে বিজয় দিবস।
No comments