পিয়া ও সুমির খোঁজে by একরামুল হক শামীম

পিয়া ও সুমির বয়স ৫ থেকে ৮ বছর। এই বয়সী শিশুদের নানা আবদার থাকে, নানা ইচ্ছা থাকে। ঢাকা শহরেই এই বয়সী অনেক ছেলেমেয়ে হরহামেশা বাবা-মায়ের কাছে আবদার করে। মাঝে মধ্যেই খেতে যায় অভিজাত রেস্টুরেন্টে। প্রিয় সন্তানের জন্য মায়ের যত্নের অন্ত থাকে না।
কিন্তু এসব থেকে বঞ্চিত পিয়া ও সুমি। কেবল বাবা-মার আদর-যত্ন থেকেই বঞ্চিত না, জাগতিক তাবৎ যত্ন থেকেই হয়তো তারা বঞ্চিত। এমনিতেই তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ফুটপাত। সারাদিন রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা, পড়ে থাকা কাগজ কুড়িয়ে যৎসামান্য যা আয় তা দিয়ে সবসময় খাবার মিলে না। তারা ক্ষুধার সীমাহীন জ্বালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ঢাকার রাস্তার এপাড় থেকে ওপাড়। রৌদ্রোজ্জ্বল কি বৃষ্টিস্নাত দিন, সংকট তাদের পিছু ছাড়ে না। ক্ষুধার জ্বালা যখন সহ্য করার পর্যায়ে থাকে না, তখনই হয়তো টিকতে না পেরে সামান্য রুটি চুরি করে বসে পিয়া ও সুমি। এই রুটি চুরিই কাল হলো তাদের জন্য। একটি রিকশায় তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। চারপাশে আমাদেরই মতো নাগরিক মানুষরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে। পিয়া ও সুমির চোখের পানি কারও হৃদয়কে গলাতে পারেনি। এ যেন আনন্দময় কোনো আয়োজন। রুটি চুরি করে পিয়া ও সুমি বিশাল অপরাধ করে ফেলেছে, তাই তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ফলে ক্ষুধায় ক্লান্ত দেহে পড়েছে কিল-ঘুষি। চুরির বিচার করতে সিদ্ধহস্ত নাগরিক আবেগবিহীন মানুষদের তাই নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়নি।
পিয়া ও সুমির ছবি প্রথম ছাপা হয় একটি জাতীয় দৈনিকে। তারপর ফেসবুকের কল্যাণে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকের বাসিন্দারা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নির্যাতনকারীদের বিচারের দাবি তুলেছেন। ফেসবুকে 'সার্চ ফর সুমি অ্যান্ড পিয়া' নামের একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে। সেখানেই একজন মন্তব্য করেছেন, 'যারা রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা চুরি করে তাদের বিচার হয় না, অথচ সামান্য রুটি চুরির জন্য নির্দয়ভাবে মারা হলো পিয়া ও সুমির মতো শিশুদের।' জানা গেছে, পিয়া ও সুমি জিগাতলা এলাকায় থাকে। সকালে সূর্যের আলো যখন পুবের আকাশকে রাঙিয়ে দেয়, তখন ঢাকার অনেক বাসা থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে স্কুলব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়ে স্কুলে যাবে বলে। পিয়া ও সুমির কাছেও তখন ব্যাগ থাকে। সেই ব্যাগ নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ে ময়লা কাগজ জমিয়ে বিক্রি করবে বলে। কিন্তু খাবার-দাবার আর বসবাসের নিশ্চয়তা তাদের কপালে নেই। রাষ্ট্র থেকে ঘটা করে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়। কিন্তু সেই রাষ্ট্রেই প্রকাশ্যে নির্যাতিত হয় পিয়া ও সুমির মতো শিশুরা।
এরই মধ্যে পিয়া ও সুমিকে নির্যাতনকারীদের বিচার দাবি করে অনলাইন পিটিশন খোলা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত এতে ১৮৫৩ জন স্বাক্ষর করেছে। তারা দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছে। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে রুটি চুরি করার অপরাধে ৫-৮ বছর বয়সী শিশুদের যেভাবে প্রকাশ্যে মারা হলো তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পিটিশনে স্বাক্ষরকারীরা।
আশার কথা হলো, পুরবী খান নামের একজন প্রবাসী বাংলাদেশি (অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত) পিয়া ও সুমিকে সাহায্য করতে চেয়েছেন। জাগো ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান পিয়া ও সুমিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পিয়া ও সুমির মতো পথশিশুদের যেন ক্ষুধার জ্বালায় রুটি চুরি করতে না হয় তাই নিশ্চিত করতে হবে। এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
samim707@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.