এ লাশ অনেক ভারী by বিপ্লব রহমান
বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ। স্কুলের বারান্দায় সারিবদ্ধ প্রায় ১০০ মরদেহ সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগে। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছেন, ক্ষুদ্র আকৃতির হয়ে গেছেন একেকজন শ্রমিক। স্বজনরা তারপরও প্রিয় মুখটি চেনার চেষ্টায় মরিয়া। মন শক্ত করে, নাক-মুখ চেপে একেকটি ব্যাগের চেইন সরিয়ে উঁকি দিচ্ছেন তাঁরা।
রাতভর কান্না, আহাজারি, বুক ফাটা আর্তনাদের পর অনেকের চোখেই আর জল নেই। মুখে শুধু বোবা শব্দ, তীব্র বেদনায় চোখও যেন ভাষাহীন।
এমনই ছিল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্যপট। স্কুলের মাঠজুড়ে হাজারো মানুষের ঢল। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্রিয় অসংখ্য সেনা, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্য। গণমাধ্যমের কর্মীরাও সংবাদ ও ছবি সংগ্রহে তৎপর। মাঝে মাঝে ভিড় ঠেলে তীব্র সাইরেনে চারপাশ সচকিত করে আসছে অ্যাম্বুলেন্স। আসছে আঞ্জুমান মুফিদুলের লাশ বহনকারী ট্রাকও। পাশের মসজিদের মাইকে দেওয়া হচ্ছে নানা নির্দেশনা। অল্প কয়েকটি লাশ প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে নির্মাণাধীন মসজিদের ভেতরেও রাখা আছে।
আগুনে ভস্মীভূত তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টের ভেতর থেকে রবিবার সকাল ৯টার দিকে একে একে লাশগুলো পাশের নিশ্চিন্তপুর একতলা স্কুলের বারান্দায় এনে রাখা হয়। দুর্ঘটনার শিকার স্বজনকে রাতভর এখানে-সেখানে, থানা, ক্লিনিক, হাসপাতালে কোথাও খুঁজে না পেয়ে পরিবার-পরিজন ভিড় জমিয়েছে এখানে। স্বজনের সন্ধানে উদভ্রান্ত এই নারী-পুরুষগুলো নানা বয়সের। কেউ হারিয়েছেন উপার্জনক্ষম ছেলে, কেউ স্ত্রী, কেউবা মেয়ে। সব কান্না যেন বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায় মা সাইদুর বেগমের (৪৫) চাপা আর্তনাদে। ব্যাগের সামান্য ফাঁক দিয়ে একটি মরদেহের মুখ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আঙুল উঁচিয়ে মৃতদেহটি দেখিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় একটি কথাই বারবার তাঁর মুখ থেকে বের হয়, 'আমার ময়না মইরা গেছে গা! আমার ময়না মইরা গেছে গা!' ওই করুণ দৃশ্য যেন চোখেও সয় না। পুলিশ সদস্যদেরও চোখ ভিজে ওঠে মায়ের হাহাকারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মতিতে সহজেই লাশ পেয়ে যান তাঁরা। তাঁরা পাঁচ-ছয়জন মিলে মরদেহের ব্যাগটি ধরাধরি করে তখনই রওনা দেন গ্রামের বাড়ির দিকে। পেছন পেছন বোধশক্তিহীন সাইদুর বেগমও ছুটে চলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বামী আবদুল হালিম (৫০)। অল্প কথায় জানান, তাঁদের নিহত মেয়ের নাম পতি বেগম (১৬)। তবে মা তাঁকে আদর করে ময়না নামেই ডাকতেন। মরদেহে সোনার নাকফুলটি দেখেই তাঁরা মেয়েকে চিনেছেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তারাইলে। আবদুল হালিম নিশ্চিন্তপুরেই রিকশা চালান। পরিবার নিয়ে টিনশেডের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পাঁচ মাস হলো পতি গার্মেন্টের চাকরিতে যোগ দিয়েছে। মাসে তিন হাজার টাকা বেতন পেত। মেয়েকে ঘিরে বোনা তাঁদের সব স্বপ্ন এক রাতেই ছাই।
স্ত্রীকে বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ : আনোয়ারা (২৮) গার্মেন্টের ভেতরে আগুনে আটকা পড়েছেন- এ কথা শুনেই বাড়ি থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছুটে যান স্বামী বিপুল (৩৫)। তিনিও ওই কারখানার পাঁচ তলায় মেশিন অপারেটরের কাজ করতেন। স্ত্রী কাজ করতেন চার তলায়। শনিবার আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগেই নিশ্চিন্তপুরের বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। দমকল বাহিনী আগুন নেভাতে যখন মরিয়া, তখন সব বাধা উপেক্ষা সবার চোখের সামনেই গনগনে আগুনে ঘেরা কারখানায় ঢুকে পড়েন বিপুল। এতেই যেন সহমরণ ঘটে দুজনেরই। তাঁদের গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে।
নিশ্চিন্তপুর বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে রবিবার আনোয়ারার মরদেহ সংগ্রহ করে কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান তাঁর বড় ভাই মাহবুব। পেশায় রিকশাভ্যানচালক মাহবুব নিজের রিকশাভ্যানে বোনের মরহেদটি তুলে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, 'ওমার (তাঁদের) তিন তিনট্যা ছোট ছোট ছাওয়া (ছেলেমেয়ে)। ওমাক কি কয়া এলা সান্ত্বনা দেইম? ওমরা এখন বাঁচপে ক্যামন করি?' জানালেন, হাতের চুরি দেখে বোনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন তাঁরা। কিন্তু নিখোঁজ বোনাই বিপুলের লাশ এখনো খুঁজে ফিরছেন তাঁরা।
মাহবুবের স্ত্রী মর্জিনা বলেন, আনোয়ারা দুপুরে লাঞ্চের সময় বাড়িতে ফিরে দুটো ভাত খেয়েছিল। পরনের জামাটি বদলে লাল ফুলের নকশা তোলা নতুন জামা পরে আবারও ফিরে গিয়েছিল ডিউটিতে। যাওয়ার সময় ভাবিকে বলে যায়, সেদিন রাতে তার ওভারটাইম ডিউটি নেই; সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খাবে। সেই ছিল তাঁর সঙ্গে শেষ কথা এবং শেষ দেখা। মরদেহের গায়ে পুড়ে লেপ্টে থাকা জামার এক টুকরো কাপড় দেখে তাঁরা চিনেছেন আনোয়ারাকে।
'জাইগা দেখি, আমি লাশের ওপর' : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের নাজনীন বেগম (৩০)। তিনি আগুন থেকে বেঁচে যাওয়াদের একজন। রাতে স্থানীয় ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা সুস্থ হয়েছেন। রবিবার বেলা দেড়টার দিকে নিশ্চিতপুর স্কুলে ছুটে আসেন সহকর্মীদের খোঁজে। জানালার কাচে দুই হাত কেটে গিয়েছিল তাঁর। দুই হাত মোটা ব্যান্ডেজে মোড়া। এক পায়েও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নাজনীন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমাদের গার্মেন্টে আগুনের অ্যালার্ম বাজে। আমি তখন দুই তলায়। কালো ধুঁমায় ভালো কইরা কিছু দেখি না। ধুঁমায় দম বন্ধ হইয়া আসে। নিচে নামার চেষ্টা করতে গিয়া দেখি, সিঁড়ি ধুঁমায় অন্ধকার। পরে তিন তলায় উইঠা দেখি ছেলেপেলেরা জানালার কাচ ভাইঙা নিচে ঝাঁপায়া পড়তেছে। জানালা দিয়া আমিও নিচে নামার চেষ্টা করি। মিস্ত্রিদের ঝোলানো একটা দড়ি পাইয়া সেইটা বাইয়া কিছুটা নামছি, তখন দড়ির নিচ থিকা আরেকটা মাইয়া আমার জামা ধইরা টান দিছে। আমি একদম নিচে পইড়াই জ্ঞান হারাইছি। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে জাইগা দেখি, আমি মেলা মানুষের ওপর পইড়া আছি।'
'আমার মাইয়া বুঝি আর নাই!' : রংপুরের মিঠাপুকুরেরই নূরজাহান খাতুন (৫০)। পুলিশ বেষ্টনী ভেদ করে অনেক কষ্টে একাই প্রবেশ করেছেন স্কুলের মাঠে। উদভ্রান্ত দৃষ্টি তাঁর। পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা এক এক করে সব কটি লাশের মুখ দেখান তাঁকে। আঁচলে মুখ চেপে কান্না দমিয়ে নূরজাহান কেবল দুদিকে মাথা নাড়েন। জানিয়ে দেন, এখানে তাঁর নিখোঁজ মেয়ে মনিরার (২২) মৃতদেহ নেই। কাউকে চিনতে পারছেন না তিনি। হতাশ হয়ে সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় অস্ফুট স্বরে বলেন, 'আমার মাইয়া বুঝি আর নাই!'
এমনই ছিল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্যপট। স্কুলের মাঠজুড়ে হাজারো মানুষের ঢল। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্রিয় অসংখ্য সেনা, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্য। গণমাধ্যমের কর্মীরাও সংবাদ ও ছবি সংগ্রহে তৎপর। মাঝে মাঝে ভিড় ঠেলে তীব্র সাইরেনে চারপাশ সচকিত করে আসছে অ্যাম্বুলেন্স। আসছে আঞ্জুমান মুফিদুলের লাশ বহনকারী ট্রাকও। পাশের মসজিদের মাইকে দেওয়া হচ্ছে নানা নির্দেশনা। অল্প কয়েকটি লাশ প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে নির্মাণাধীন মসজিদের ভেতরেও রাখা আছে।
আগুনে ভস্মীভূত তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টের ভেতর থেকে রবিবার সকাল ৯টার দিকে একে একে লাশগুলো পাশের নিশ্চিন্তপুর একতলা স্কুলের বারান্দায় এনে রাখা হয়। দুর্ঘটনার শিকার স্বজনকে রাতভর এখানে-সেখানে, থানা, ক্লিনিক, হাসপাতালে কোথাও খুঁজে না পেয়ে পরিবার-পরিজন ভিড় জমিয়েছে এখানে। স্বজনের সন্ধানে উদভ্রান্ত এই নারী-পুরুষগুলো নানা বয়সের। কেউ হারিয়েছেন উপার্জনক্ষম ছেলে, কেউ স্ত্রী, কেউবা মেয়ে। সব কান্না যেন বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায় মা সাইদুর বেগমের (৪৫) চাপা আর্তনাদে। ব্যাগের সামান্য ফাঁক দিয়ে একটি মরদেহের মুখ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আঙুল উঁচিয়ে মৃতদেহটি দেখিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় একটি কথাই বারবার তাঁর মুখ থেকে বের হয়, 'আমার ময়না মইরা গেছে গা! আমার ময়না মইরা গেছে গা!' ওই করুণ দৃশ্য যেন চোখেও সয় না। পুলিশ সদস্যদেরও চোখ ভিজে ওঠে মায়ের হাহাকারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মতিতে সহজেই লাশ পেয়ে যান তাঁরা। তাঁরা পাঁচ-ছয়জন মিলে মরদেহের ব্যাগটি ধরাধরি করে তখনই রওনা দেন গ্রামের বাড়ির দিকে। পেছন পেছন বোধশক্তিহীন সাইদুর বেগমও ছুটে চলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বামী আবদুল হালিম (৫০)। অল্প কথায় জানান, তাঁদের নিহত মেয়ের নাম পতি বেগম (১৬)। তবে মা তাঁকে আদর করে ময়না নামেই ডাকতেন। মরদেহে সোনার নাকফুলটি দেখেই তাঁরা মেয়েকে চিনেছেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তারাইলে। আবদুল হালিম নিশ্চিন্তপুরেই রিকশা চালান। পরিবার নিয়ে টিনশেডের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পাঁচ মাস হলো পতি গার্মেন্টের চাকরিতে যোগ দিয়েছে। মাসে তিন হাজার টাকা বেতন পেত। মেয়েকে ঘিরে বোনা তাঁদের সব স্বপ্ন এক রাতেই ছাই।
স্ত্রীকে বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ : আনোয়ারা (২৮) গার্মেন্টের ভেতরে আগুনে আটকা পড়েছেন- এ কথা শুনেই বাড়ি থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছুটে যান স্বামী বিপুল (৩৫)। তিনিও ওই কারখানার পাঁচ তলায় মেশিন অপারেটরের কাজ করতেন। স্ত্রী কাজ করতেন চার তলায়। শনিবার আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগেই নিশ্চিন্তপুরের বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। দমকল বাহিনী আগুন নেভাতে যখন মরিয়া, তখন সব বাধা উপেক্ষা সবার চোখের সামনেই গনগনে আগুনে ঘেরা কারখানায় ঢুকে পড়েন বিপুল। এতেই যেন সহমরণ ঘটে দুজনেরই। তাঁদের গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে।
নিশ্চিন্তপুর বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে রবিবার আনোয়ারার মরদেহ সংগ্রহ করে কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান তাঁর বড় ভাই মাহবুব। পেশায় রিকশাভ্যানচালক মাহবুব নিজের রিকশাভ্যানে বোনের মরহেদটি তুলে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, 'ওমার (তাঁদের) তিন তিনট্যা ছোট ছোট ছাওয়া (ছেলেমেয়ে)। ওমাক কি কয়া এলা সান্ত্বনা দেইম? ওমরা এখন বাঁচপে ক্যামন করি?' জানালেন, হাতের চুরি দেখে বোনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন তাঁরা। কিন্তু নিখোঁজ বোনাই বিপুলের লাশ এখনো খুঁজে ফিরছেন তাঁরা।
মাহবুবের স্ত্রী মর্জিনা বলেন, আনোয়ারা দুপুরে লাঞ্চের সময় বাড়িতে ফিরে দুটো ভাত খেয়েছিল। পরনের জামাটি বদলে লাল ফুলের নকশা তোলা নতুন জামা পরে আবারও ফিরে গিয়েছিল ডিউটিতে। যাওয়ার সময় ভাবিকে বলে যায়, সেদিন রাতে তার ওভারটাইম ডিউটি নেই; সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খাবে। সেই ছিল তাঁর সঙ্গে শেষ কথা এবং শেষ দেখা। মরদেহের গায়ে পুড়ে লেপ্টে থাকা জামার এক টুকরো কাপড় দেখে তাঁরা চিনেছেন আনোয়ারাকে।
'জাইগা দেখি, আমি লাশের ওপর' : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের নাজনীন বেগম (৩০)। তিনি আগুন থেকে বেঁচে যাওয়াদের একজন। রাতে স্থানীয় ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা সুস্থ হয়েছেন। রবিবার বেলা দেড়টার দিকে নিশ্চিতপুর স্কুলে ছুটে আসেন সহকর্মীদের খোঁজে। জানালার কাচে দুই হাত কেটে গিয়েছিল তাঁর। দুই হাত মোটা ব্যান্ডেজে মোড়া। এক পায়েও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নাজনীন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমাদের গার্মেন্টে আগুনের অ্যালার্ম বাজে। আমি তখন দুই তলায়। কালো ধুঁমায় ভালো কইরা কিছু দেখি না। ধুঁমায় দম বন্ধ হইয়া আসে। নিচে নামার চেষ্টা করতে গিয়া দেখি, সিঁড়ি ধুঁমায় অন্ধকার। পরে তিন তলায় উইঠা দেখি ছেলেপেলেরা জানালার কাচ ভাইঙা নিচে ঝাঁপায়া পড়তেছে। জানালা দিয়া আমিও নিচে নামার চেষ্টা করি। মিস্ত্রিদের ঝোলানো একটা দড়ি পাইয়া সেইটা বাইয়া কিছুটা নামছি, তখন দড়ির নিচ থিকা আরেকটা মাইয়া আমার জামা ধইরা টান দিছে। আমি একদম নিচে পইড়াই জ্ঞান হারাইছি। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে জাইগা দেখি, আমি মেলা মানুষের ওপর পইড়া আছি।'
'আমার মাইয়া বুঝি আর নাই!' : রংপুরের মিঠাপুকুরেরই নূরজাহান খাতুন (৫০)। পুলিশ বেষ্টনী ভেদ করে অনেক কষ্টে একাই প্রবেশ করেছেন স্কুলের মাঠে। উদভ্রান্ত দৃষ্টি তাঁর। পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা এক এক করে সব কটি লাশের মুখ দেখান তাঁকে। আঁচলে মুখ চেপে কান্না দমিয়ে নূরজাহান কেবল দুদিকে মাথা নাড়েন। জানিয়ে দেন, এখানে তাঁর নিখোঁজ মেয়ে মনিরার (২২) মৃতদেহ নেই। কাউকে চিনতে পারছেন না তিনি। হতাশ হয়ে সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় অস্ফুট স্বরে বলেন, 'আমার মাইয়া বুঝি আর নাই!'
No comments