দুঃসহ-বাতাসে শিশুর কান্না সহকর্মীর আহাজারি by জয়নাল আবেদীন
কবিরের লাশ গেছে রাজবাড়ীতে, রহিমার লাশ রংপুরে; কিন্তু তাঁদের রেখে যাওয়া শোকে ভারি হয়ে আছে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের ধোঁয়াচ্ছন্ন আকাশ। এখানকার পথ থেকে পথে, মানুষের মুখে মুখে পোশাক কারখানার আগুনের কথা, মৃত্যুর কথা। আছে কারো কারো মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসারও কাহিনী।
কারখানার পূর্ব পাশের আমিন কলোনি। রবিবার দুপুরে দুটি লাশ ঘিরে চারপাশে শতাধিক মানুষ। কাপড়ে ঢাকা মা-বাবার নিথর দেহের পাশে বসে অঝোরে কাঁদছিল সাত বছরের শিশু মাহফুজ। শিশুটির বাবা কবির হোসেন ও মা দিলরুবা একই সঙ্গে কাজ করতেন ওই কারখানায়। প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন এমন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর দৌড়ে নিচে নেমে আসেন কবির। স্ত্রীর কথা মনে পড়তেই ফের ধোঁয়া ঠেলে ওপরে ওঠেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, স্ত্রীকে নিয়ে জীবিত ফিরতে ব্যর্থ হন তিনি। লাশের মিছিলে শামিল হন দুজনই।
কলোনির বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, মাজেদা, জোবেদা, শহীদ ও তাঁর স্ত্রীসহ ওই কলোনির আরো ১৫ শ্রমিক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
তোবা গ্রুপের পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনের ভবনের নিচতলায় শনিবার সন্ধ্যায় আগুন লাগে। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়ে ওপরের সব তলায়। ভেতরে জীবন্ত মানুষের প্রাণে বাঁচার লড়াই, দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। রাত গভীর হয়, আগুন থামে না। বাড়ে আশঙ্কা। রবিবার ভোর নাগাদ ক্ষান্ত হয় আগুন। কিন্তু ততক্ষণে সবই শেষ।
বাইরে উৎকণ্ঠায় হাজার হাজার মানুষ। কত জীবন্ত মানুষকে লাশ বানাবে আগুন? ১০, ২০, ৫০, ১০০- নাকি তারও বেশি! সরকারি ঘোষণা মতে, ১১১টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই আগুন।
রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থলের উত্তর-পূর্ব কোণে শেখ শহর আলীর বাড়িতে শুরু হয় শোকের মাতম। স্বামী এবং চার মেয়েকে নিয়ে এ বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন রহিমা (৩৮); তিনিও ছিলেন তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিক। আগুন কেড়ে নিয়েছে রহিমার জীবন। চেহারা বোঝা যায় না। পরনে থাকা হলুদ রঙের সালোয়ার-কামিজ দেখে লাশের সারি থেকে স্ত্রীর
পোড়া লাশ শনাক্ত করেন স্বামী ছাদেক আলী। বড় মেয়ে হাওয়া বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এর পরপরই চার মেয়েকে সঙ্গে করে রহিমার নিথর দেহ নিয়ে রংপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ছাদেক।
জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের অনেকেরই বাড়ি রাজধানীর বাইরের। যেসব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয় স্বজনরা সেসব লাশ নিয়ে রবিবার বিকেলের আগেই রওনা দেয়। গ্রামের মাটিতে হবে শেষ ঠিকানা।
নিহতদের সঙ্গে স্থানীয় অনেক শ্রমিকের রক্তের সম্পর্ক নেই, হয়তো অনেকের ব্যক্তিগত পরিচয়ও ছিল না; কিন্তু সহকর্মী হারানোর বেদনায় সব সহকর্মী মুষড়ে পড়েছেন। রবিবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ঘরে সকাল থেকে চুলা জ্বলেনি। পাশের অন্য পাঁচটি গার্মেন্টও রবিবার ছিল নীরব-নিস্তব্ধ।
অবর্ণনীয় দৃশ্য : কারখানার ফটকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। ফলে সাধারণ মানুষ কারখানার আশপাশে ভিড়তে পারছে না। তবে রবিবার বিকেলে এ প্রতিবেদক কারখানার ভেতরে ঢুকে ঘুরে দেখেন। তখনো কক্ষগুলোতে পোড়া গন্ধ। পোড়া কাপড় আর পোড়া মানুষের উৎকট গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছিল। ভবনের তৃতীয় তলায় উত্তর কোণে পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি মাথার খুলি এবং দুই টুকরো পা।
থমকে যায় নিশ্চিন্তপুর : নিশ্চিন্তপুর এলাকার নব্বই ভাগেরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন আশপাশের পোশাক কারখানাগুলো। কিন্তু তাজরীন ফ্যাশনের এ ট্র্যাজিক ঘটনার পর রবিবার যেন থেমে আছে পুরো গ্রাম। পাশের নিট এশিয়া, খান গার্মেন্ট, অন্বেষা সোয়েটার কারখানা, অনন্ত ও হা-মীম কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকের নির্বাক দৃষ্টি ছিল পোড়া ভবনের দিকে। নিট এশিয়া কারখানার শ্রমিক রমিছা বেগম, খান গার্মেন্টের আবদুল আহাদসহ অসংখ্য শ্রমিকের ভাষ্য, এমন বিভীষিকা তাঁরা আর দেখেননি। ধ্বংসলীলা তাঁদের মন ভেঙে দিয়েছে। কাজের সব মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। শোক কবে ভুলতে পারবেন, তাও অনিশ্চিত।
কলোনির বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, মাজেদা, জোবেদা, শহীদ ও তাঁর স্ত্রীসহ ওই কলোনির আরো ১৫ শ্রমিক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
তোবা গ্রুপের পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনের ভবনের নিচতলায় শনিবার সন্ধ্যায় আগুন লাগে। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়ে ওপরের সব তলায়। ভেতরে জীবন্ত মানুষের প্রাণে বাঁচার লড়াই, দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। রাত গভীর হয়, আগুন থামে না। বাড়ে আশঙ্কা। রবিবার ভোর নাগাদ ক্ষান্ত হয় আগুন। কিন্তু ততক্ষণে সবই শেষ।
বাইরে উৎকণ্ঠায় হাজার হাজার মানুষ। কত জীবন্ত মানুষকে লাশ বানাবে আগুন? ১০, ২০, ৫০, ১০০- নাকি তারও বেশি! সরকারি ঘোষণা মতে, ১১১টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই আগুন।
রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থলের উত্তর-পূর্ব কোণে শেখ শহর আলীর বাড়িতে শুরু হয় শোকের মাতম। স্বামী এবং চার মেয়েকে নিয়ে এ বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন রহিমা (৩৮); তিনিও ছিলেন তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিক। আগুন কেড়ে নিয়েছে রহিমার জীবন। চেহারা বোঝা যায় না। পরনে থাকা হলুদ রঙের সালোয়ার-কামিজ দেখে লাশের সারি থেকে স্ত্রীর
পোড়া লাশ শনাক্ত করেন স্বামী ছাদেক আলী। বড় মেয়ে হাওয়া বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এর পরপরই চার মেয়েকে সঙ্গে করে রহিমার নিথর দেহ নিয়ে রংপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ছাদেক।
জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের অনেকেরই বাড়ি রাজধানীর বাইরের। যেসব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয় স্বজনরা সেসব লাশ নিয়ে রবিবার বিকেলের আগেই রওনা দেয়। গ্রামের মাটিতে হবে শেষ ঠিকানা।
নিহতদের সঙ্গে স্থানীয় অনেক শ্রমিকের রক্তের সম্পর্ক নেই, হয়তো অনেকের ব্যক্তিগত পরিচয়ও ছিল না; কিন্তু সহকর্মী হারানোর বেদনায় সব সহকর্মী মুষড়ে পড়েছেন। রবিবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ঘরে সকাল থেকে চুলা জ্বলেনি। পাশের অন্য পাঁচটি গার্মেন্টও রবিবার ছিল নীরব-নিস্তব্ধ।
অবর্ণনীয় দৃশ্য : কারখানার ফটকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। ফলে সাধারণ মানুষ কারখানার আশপাশে ভিড়তে পারছে না। তবে রবিবার বিকেলে এ প্রতিবেদক কারখানার ভেতরে ঢুকে ঘুরে দেখেন। তখনো কক্ষগুলোতে পোড়া গন্ধ। পোড়া কাপড় আর পোড়া মানুষের উৎকট গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছিল। ভবনের তৃতীয় তলায় উত্তর কোণে পড়ে থাকতে দেখা যায় একটি মাথার খুলি এবং দুই টুকরো পা।
থমকে যায় নিশ্চিন্তপুর : নিশ্চিন্তপুর এলাকার নব্বই ভাগেরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন আশপাশের পোশাক কারখানাগুলো। কিন্তু তাজরীন ফ্যাশনের এ ট্র্যাজিক ঘটনার পর রবিবার যেন থেমে আছে পুরো গ্রাম। পাশের নিট এশিয়া, খান গার্মেন্ট, অন্বেষা সোয়েটার কারখানা, অনন্ত ও হা-মীম কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকের নির্বাক দৃষ্টি ছিল পোড়া ভবনের দিকে। নিট এশিয়া কারখানার শ্রমিক রমিছা বেগম, খান গার্মেন্টের আবদুল আহাদসহ অসংখ্য শ্রমিকের ভাষ্য, এমন বিভীষিকা তাঁরা আর দেখেননি। ধ্বংসলীলা তাঁদের মন ভেঙে দিয়েছে। কাজের সব মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। শোক কবে ভুলতে পারবেন, তাও অনিশ্চিত।
No comments