তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি : দেলোয়ার
আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি ১৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কারখানাটির মালিক দেলোয়ার হোসেন। নিজের কারখানার বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের প্রাণহানি আর কারখানাটি পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও প্রাণভয়ে গত দুই দিন তিনি আশুলিয়ায় যাননি।
কারখানার অন্য কর্মকর্তারাও উধাও। এদিকে পুড়ে গেছে শ্রমিকদের নাম, মজুরিসহ বিভিন্ন তথ্যের রেজিস্টারটিও। এ অবস্থায় শ্রমিকদের মজুরি কিভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়েও চিন্তিত বলে জানিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে এক সাক্ষাৎকারে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তাজরীন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মালিক দেলোয়ার হোসেন। ছয়টি কারখানার সমন্বয়ে গড়া তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার বলেন, 'আমারে সবাই পাগল বানাইয়া ফালাইছে। আমার কিছুই বলার নাই। আগুনে আমার দেড় শ কোটি থেকে দুই শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। আমার সাতটি কারখানার স্টোর হিসেবে ওই কারখানা ব্যবহার করতাম। ওখান থেকেই সব রপ্তানি হতো। আমদানি করা কাপড়ও রাখতাম ওখানে। সব পুড়ে গেছে। বহু শ্রমিকও মারা গেছে। এ অবস্থায় নানাজন নানা প্রশ্ন করে আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে।'
'কারখানায় আগুন লাগার পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ নানা দিক থেকে আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য। কিন্তু কারখানার ভেতরে থাকা সব চেয়ার-টেবিল যেমন পুড়ে ছাই হয়েছে, তেমনি পুড়ে গেছে
রেজিস্টারও। ওই খাতাতেই শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা, পদবি এবং কার মজুরি কত তার হিসাব ছিল। রোজার সময় সব মিলিয়ে এক হাজার ১৩৭ জন শ্রমিক ছিল। ঈদের পর অনেক শ্রমিক আর কাজে ফেরেনি। তাদের বদলে নতুন শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। হিসাবের খাতা পুড়ে যাওয়ায় এখন অন্য কারখানার শ্রমিকরাও এসে মজুরি চাইবে। যারা ঈদের পর আসেনি, তারাও চাইবে। এ অবস্থায় আমি কাকে, কত টাকা বেতন দেব? আমাকে কেউ বুঝতে পারছে না'- যোগ করেন দেলোয়ার।
কারখানাটিতে কোনো সিঁড়ি বন্ধ ছিল না দাবি করে দেলোয়ার বলেন, 'কারখানার ভেতরে তিনটি সিঁড়ি। যেকোনো সিঁড়ি দিয়েই শ্রমিকরা নামতে পারত। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন যারা যোগদান করেছে, তারা হয়তো আগুন লাগার পর সিস্টেম বুঝে উঠতে পারেনি। একজনকে নামতে দেখেও তো অন্যরা নামে। কারখানার সাততলা পুরোটাই ফাঁকা ছিল। সেখানেও তো যেতে পারত। এত বড় কারখানার গেট বন্ধ ছিল- এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার ক্ষতিপূরণ পাইলে পাইলাম, না পাইলে না পাইলাম। গেট বন্ধ রেখে শ্রমিক মেরে আমার লাভ কি?'
তাজরীনের মালিক বলেন, 'আমি তো থাকি ঢাকায়। এখন কেউই আশুলিয়ায় যেতে পারছে না। মার খাওয়ার ভয়ে আমার কর্মকর্তাদের কেউ সেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। নিজের জান বাঁচাতে তাঁদের কেউ কেউ এলাকায় চলে গেছেন। তবে বিজিএমইএ গ্রুপ ইনস্যুরেন্স থেকে নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেবে। এর বাইরে আমিও সহযোগিতা করব। তবে তার পরিমাণ বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করব।'
নিজের সাতটি কারখানায় আট হাজার শ্রমিক কাজ করেন উল্লেখ করে দেলোয়ার বলেন, 'প্রতিবছর আমি গড়ে তিন কোটি থেকে চার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে থাকি।' বিজিএমইএর সদস্য তথ্যকোষ থেকে জানা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনে মোট শ্রমিক সংখ্যা ৩৫০।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের হাজরাবাড়ি বাজারের অদূরে ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের মো. আনিসুর রহমানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন। এলাকায় একজন উদীয়মান শিল্পপতি হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার পরিবারের বড় সন্তান। ছোট ভাই লুৎফর রহমান ভাইয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন। পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন।
তোবা গ্রুপের মূল ফ্যাক্টরি ছিল তাজরীন ফ্যাশন। এই ফ্যাক্টরিতে এলাকার যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা কর্মকর্তা পর্যায়ের। অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের কেউ হতাহত হননি।
দেলোয়ার হোসেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সপরিবারে একসময় ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করতেন। বিয়ে করেছেন মেলান্দহ উপজেলার আদ্রা গ্রামে। কয়েক বছর আগে তাঁর শ্বশুর মোবারক হোসেন তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান। ওই হামলার সময় দেলোয়ার গাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বর্তমানে তিনি ধানমণ্ডিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে এক সাক্ষাৎকারে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তাজরীন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মালিক দেলোয়ার হোসেন। ছয়টি কারখানার সমন্বয়ে গড়া তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার বলেন, 'আমারে সবাই পাগল বানাইয়া ফালাইছে। আমার কিছুই বলার নাই। আগুনে আমার দেড় শ কোটি থেকে দুই শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। আমার সাতটি কারখানার স্টোর হিসেবে ওই কারখানা ব্যবহার করতাম। ওখান থেকেই সব রপ্তানি হতো। আমদানি করা কাপড়ও রাখতাম ওখানে। সব পুড়ে গেছে। বহু শ্রমিকও মারা গেছে। এ অবস্থায় নানাজন নানা প্রশ্ন করে আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে।'
'কারখানায় আগুন লাগার পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ নানা দিক থেকে আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য। কিন্তু কারখানার ভেতরে থাকা সব চেয়ার-টেবিল যেমন পুড়ে ছাই হয়েছে, তেমনি পুড়ে গেছে
রেজিস্টারও। ওই খাতাতেই শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা, পদবি এবং কার মজুরি কত তার হিসাব ছিল। রোজার সময় সব মিলিয়ে এক হাজার ১৩৭ জন শ্রমিক ছিল। ঈদের পর অনেক শ্রমিক আর কাজে ফেরেনি। তাদের বদলে নতুন শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। হিসাবের খাতা পুড়ে যাওয়ায় এখন অন্য কারখানার শ্রমিকরাও এসে মজুরি চাইবে। যারা ঈদের পর আসেনি, তারাও চাইবে। এ অবস্থায় আমি কাকে, কত টাকা বেতন দেব? আমাকে কেউ বুঝতে পারছে না'- যোগ করেন দেলোয়ার।
কারখানাটিতে কোনো সিঁড়ি বন্ধ ছিল না দাবি করে দেলোয়ার বলেন, 'কারখানার ভেতরে তিনটি সিঁড়ি। যেকোনো সিঁড়ি দিয়েই শ্রমিকরা নামতে পারত। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন যারা যোগদান করেছে, তারা হয়তো আগুন লাগার পর সিস্টেম বুঝে উঠতে পারেনি। একজনকে নামতে দেখেও তো অন্যরা নামে। কারখানার সাততলা পুরোটাই ফাঁকা ছিল। সেখানেও তো যেতে পারত। এত বড় কারখানার গেট বন্ধ ছিল- এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার ক্ষতিপূরণ পাইলে পাইলাম, না পাইলে না পাইলাম। গেট বন্ধ রেখে শ্রমিক মেরে আমার লাভ কি?'
তাজরীনের মালিক বলেন, 'আমি তো থাকি ঢাকায়। এখন কেউই আশুলিয়ায় যেতে পারছে না। মার খাওয়ার ভয়ে আমার কর্মকর্তাদের কেউ সেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। নিজের জান বাঁচাতে তাঁদের কেউ কেউ এলাকায় চলে গেছেন। তবে বিজিএমইএ গ্রুপ ইনস্যুরেন্স থেকে নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেবে। এর বাইরে আমিও সহযোগিতা করব। তবে তার পরিমাণ বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করব।'
নিজের সাতটি কারখানায় আট হাজার শ্রমিক কাজ করেন উল্লেখ করে দেলোয়ার বলেন, 'প্রতিবছর আমি গড়ে তিন কোটি থেকে চার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে থাকি।' বিজিএমইএর সদস্য তথ্যকোষ থেকে জানা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনে মোট শ্রমিক সংখ্যা ৩৫০।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের হাজরাবাড়ি বাজারের অদূরে ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের মো. আনিসুর রহমানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন। এলাকায় একজন উদীয়মান শিল্পপতি হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ার পরিবারের বড় সন্তান। ছোট ভাই লুৎফর রহমান ভাইয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেন। পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন।
তোবা গ্রুপের মূল ফ্যাক্টরি ছিল তাজরীন ফ্যাশন। এই ফ্যাক্টরিতে এলাকার যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা কর্মকর্তা পর্যায়ের। অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের কেউ হতাহত হননি।
দেলোয়ার হোসেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সপরিবারে একসময় ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করতেন। বিয়ে করেছেন মেলান্দহ উপজেলার আদ্রা গ্রামে। কয়েক বছর আগে তাঁর শ্বশুর মোবারক হোসেন তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান। ওই হামলার সময় দেলোয়ার গাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বর্তমানে তিনি ধানমণ্ডিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
No comments