নদী ভাঙনপীড়িত স্কুল-নীতিনির্ধারকরা নতুন করে ভাবুন
ক্সকুড়িগ্রামের চিলমারীর চর মুদাফৎ কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুর্দশার যে চিত্র শুক্রবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশ হয়েছে, তা আমাদের নিঃসন্দেহে বেদনাহত করে।
আমরা যখন শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নয়নের কথা বলছি, তখন দেখা যাচ্ছে একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর ছাদ নেই, খাবার পানির জন্য নলকূপ নেই, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য টয়লেট নেই। দেশের কোনো কোনো বিদ্যালয়ে যখন ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষের দাবি উঠছে, তখন আরেকটি বিদ্যালয়ের এমন হতশ্রী বড়ই বেমানান, সন্দেহ নেই। কিন্তু বিদ্যালয়টির দুর্দশার কারণ যতটা না দৈন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি দুর্যোগ। নিজস্ব ভবনসহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো ও সুবিধাই ছিল একসময়। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন জায়গা জোগাড় হলেও অবকাঠামো আটকে রেখেছে অর্থাভাব। এটা ঠিক যে, বরাদ্দ থাকলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই নতুন ভবন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে এই প্রত্যাশা বাস্তবসম্মত নয়। সারাদেশেই নদী ভাঙনের শিকার এমন অনেক বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলো বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও স্থায়ী ভবন ফিরে পায়নি। এ ক্ষেত্রে চরাঞ্চলের বিদ্যালয় অবকাঠামো নিয়ে নীতিনির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে বলব আমরা। যেখানে নদী ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে পাকা ও স্থায়ী ভবন নির্মাণ না করে কাঠ ও টিনের কাঠামোই উপযুক্ত সমাধান বলে আমরা মনে করি। যাতে করে ভাঙনের মুখে পড়লে সরিয়ে অন্য স্থানে নেওয়া যায়। আমরা জানি, ইতিমধ্যে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় হাওরাঞ্চলে ভিন্ন শিক্ষা-পঞ্জিকা চালু করা হয়েছে। একই বিবেচনায় চরাঞ্চলের জন্য আলাদা বিদ্যালয় কাঠামো চালু করতেই পারে সরকার। পাকা ভবনের তুলনায় তাতে খরচও কম। একটির জন্য বরাদ্দ অর্থে একাধিক বিদ্যালয়ও নির্মাণ করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখতে পারেন। তবে নীতি পরিবর্তন ও নতুন বরাদ্দের জন্য যে অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করা সঙ্গত নয়, তাও মনে রাখতে হবে। চরাঞ্চলের গৃহহারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য স্থানীয়ভাবেই কাঠ-টিনের ভবন নির্মাণ সম্ভব বলে আমরা মনে করি। চিলমারীর আলোচ্য বিদ্যালয়ের জন্য গৃহ, নলকূপ ও টয়লেটের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়েই সেই প্রক্রিয়া শুরু হোক। সরকারের পাশাপাশি এলাকার শিক্ষানুরাগী বিত্তশালীরাও এগিয়ে আসতে পারেন। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, আমাদের দেশে শিক্ষার প্রাথমিক প্রসার হয়েছিল কিন্তু বেসরকারি উদ্যোগেই।
No comments