দক্ষিণখানেও গার্মেন্টে আগুন-আদর্শ ব্যবস্থা থাকায় বেঁচে গেলেন শত শত শ্রমিক by আপেল মাহমুদ
সকাল প্রায় ১০টা। উত্তরার মোল্লারটেকের আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। একটু এগিয়ে যেতেই আগুনের লেলিহান শিখা চোখে পড়ে। সোয়ান, স্যার ডেনিম ও ম্যাককয়- এ তিনটি পোশাক কারখানা যে ভবনে, সেটির সামনে কয়েক হাজার মানুষের ভিড়। তাদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ।
গার্মেন্টকর্মীদের আত্মীয়স্বজনের কেউ কেউ বুক চাপড়ে আহাজারি করছে। এদিকে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ঢাকা ও এর আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের অনেক ইউনিট। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে গার্মেন্টকর্মী ও স্থানীয় লোকজন। একপর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ঘোষণা করেন, এ অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গার্মেন্টের শ্রমিক ও কর্মকর্তারা নিরাপদে ভবন থেকে বেরিয়ে যেতে পেরেছেন। এ খবরে স্বস্তি নেমে আসে চারপাশে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার পূর্ব পাশে দক্ষিণখানের একটি ভবনে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মী বলেন, সঠিক সময়ে নামিয়ে আনতে না পারলে এ অগ্নিকাণ্ডেও শত শত শ্রমিক মারা যেতে পারতেন। ভবনের একাধিক প্রশস্ত সিঁড়িই তাঁদের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহও বলেন, বিকল্প সিঁড়ি থাকাতেই প্রাণহানি এড়ানো গেছে।
কয়েকজন গার্মেন্ট শ্রমিক জানান, তাঁরা অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন; কিন্তু কোথাও এমন সুযোগ-সুবিধা নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সাইরেন বাজিয়ে দরজা ও সিঁড়ির গেটের তালা খুলে দেওয়া হয়। এবারও আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাই করা হয়েছে। গার্মেন্টের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার জন্যই ফ্যাক্টরিতে কর্মরত প্রায় ৫০০ শ্রমিক-কর্মচারীর প্রাণ বেঁচে গেছে। তাঁদের কাছে গার্মেন্টের মূল্যবান কাপড়চোপড়ের চেয়ে শ্রমিকদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।
স্যার ডেনিম গার্মেন্টের কর্মচারী আখতার হোসেন বলেন, মালিকের নির্দেশমতো আগুন লাগার মুহূর্তেই ফ্যাক্টরির সব দরজা ও তালা খুলে দেওয়া হয়। মালামালের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। দরজা খুলে দেওয়ার কারণে কমপক্ষে দেড় শ শ্রমিক ছাদে চলে যান। সোয়ান গার্মেন্টের কর্মচারী শহীদুল্লাহ মনে করেন, অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের প্রায় ১৫ কোটি টাকার তৈরি পোশাক পুড়ে গেছে। তবে এতে মালিকের কোনো দুঃখ নেই। কোনো মানুষ যে মারা যায়নি, সেটাই বড় কথা।
স্যার ডেনিম গার্মেন্টের মান নিয়ন্ত্রক আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে জানান, সকাল ১০টার দিকে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির পঞ্চম তলায় নিয়মিত মিটিং চলছিল। এর মধ্যে তাঁরা পোড়া কাপড়ের গন্ধ পাচ্ছিলেন। তাঁরা নিচে এসে দেখেন, সোয়ান গার্মেন্টের গোডাউনে আগুন লেগেছে। তখন গার্মেন্ট কর্মকর্তারা সবাইকে দ্রুত নিচে নেমে যেতে নির্দেশ দেন। মূল সিঁড়ি ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে যাওয়ায় ভবনের মাঝখানের ও পেছনের দিকের সিঁড়ি বেয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী-কর্মকর্তারা খুব সহজে নিরাপদে বের হয়ে যেতে সক্ষম হন।
গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২ মোল্লারটেকের আফনান প্লাজায় দুটি গার্মেন্ট ও একটি গোডাউন রয়েছে। ১২-তলা ভবনের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত সোয়ান গার্মেন্টের গোডাউন। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় রয়েছে স্যার ডেনিম গার্মেন্ট। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ তলা পর্যন্ত ম্যাককয় সোয়েটার লিমিটেড। দুটি গার্মেন্টে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সোয়ান গার্মেন্টের গোডাউন থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। এ ভবনের পাশেই রয়েছে সোয়ান গার্মেন্টের বিশাল ভবন।
শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় লোকজনের আন্তরিকতাও কোনো দিন ভুলে যাওয়া যাবে না। তারা ভবন থেকে শ্রমিকদের নিরাপদে পৌঁছানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এমনকি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির পার্শ্ববর্তী ভবনের জানালার গ্রিল কেটে আটকে পড়া শ্রমিকদের বাঁচায় তারা। অনেকে কলস ও বালতিভর্তি পানি ঢেলে আগুন নেভানোর জন্য এগিয়ে আসে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমত আলী ভূঁইয়া জানান, গার্মেন্ট শ্রমিক ও এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় শত শত শ্রমিকের জীবন রক্ষা পেয়েছে। ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে কেউ মারা যায়নি। তিনি জানান, এলাকায় অনেক গার্মেন্ট রয়েছে। কিন্তু সোয়ান, স্যার ডেনিম ও ম্যাককয় গার্মেন্টের মতো সুশৃঙ্খল গার্মেন্ট খুব কমই আছে।
সোয়ান গার্মেন্টের কর্মচারী মোমেন জানান, আফনান প্লাজার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় তাঁদের গোডাউন। সেখানে তৈরি পোশাক পলিথিনে মুড়িয়ে শিপমেন্টের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল; কয়েক দিনের মধ্যেই বিদেশে রপ্তানি হয়ে যেত। কিন্তু সকাল বেলায় সেই গোডাউনে আগুন লেগে যায়। তিনি জানান, ভবনটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির উপযোগী করে পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশস্ত সিঁড়ির পাশাপাশি একাধিক বিকল্প সিঁড়ি থাকায় প্রচণ্ড আগুন ও ধোঁয়ায় দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হলেও কেউ মারা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, জেনারেটর থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তাই গোডাউনের সঙ্গে জেনারেটর রাখা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। গোডাউনে পলিথিনসহ তৈরি পোশাক থাকায় আগুনের চেয়ে ধোঁয়া বেশি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক ভবনের ওপরে উঠে যান। ভবনে বিকল্প সিঁড়ি থাকায় সবাই প্রাণে বেঁচে যান। তাঁদের উদ্ধারকাজে স্থানীয় লোকজন ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মাত্র ৮-১০ জন শ্রমিক সামান্য আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে সামান্য চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তবে আটকে পড়া গার্মেন্ট শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য পার্শ্ববর্তী ভবনের গ্রিল খুলতে গিয়ে কয়েকজন হাতে আঘাত পেয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রবীণ কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ২০ বছরের চাকরিজীবনে অনেক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী তিনি। কিন্তু এত বড় গার্মেন্টে আগুন লাগা সত্ত্বেও কোনো শ্রমিক মারা না যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
হংকং-ভিত্তিক সোয়ান গার্মেন্টের মালিক টপি হং (মিং অং হং) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতবাক। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গুলশানের বাসা থেকে দ্রুত মোল্লারটেক ফ্যাক্টরিতে চলে আসেন। তিনি ফায়ার সার্ভিসের হেলমেট পরে অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, গার্মেন্টের জন্য যত রকম নিরাপত্তা দেওয়া দরকার তার সব কিছুই সেখানে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিভাবে গোডাউনে আগুন লেগেছে, তা রহস্যজনক। ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে হয়তো আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা মাকসুদুর রহমান মাসুম বলেন, যে তিনটি গার্মেন্টে আগুন লেগেছে তাদের বেশ সুনাম রয়েছে। শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি গার্মেন্টের পরিবেশ খুই ভালো। কিন্তু আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত করে মূল ঘটনা বের করা উচিত। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানান।
গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার পূর্ব পাশে দক্ষিণখানের একটি ভবনে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মী বলেন, সঠিক সময়ে নামিয়ে আনতে না পারলে এ অগ্নিকাণ্ডেও শত শত শ্রমিক মারা যেতে পারতেন। ভবনের একাধিক প্রশস্ত সিঁড়িই তাঁদের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহও বলেন, বিকল্প সিঁড়ি থাকাতেই প্রাণহানি এড়ানো গেছে।
কয়েকজন গার্মেন্ট শ্রমিক জানান, তাঁরা অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন; কিন্তু কোথাও এমন সুযোগ-সুবিধা নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সাইরেন বাজিয়ে দরজা ও সিঁড়ির গেটের তালা খুলে দেওয়া হয়। এবারও আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাই করা হয়েছে। গার্মেন্টের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার জন্যই ফ্যাক্টরিতে কর্মরত প্রায় ৫০০ শ্রমিক-কর্মচারীর প্রাণ বেঁচে গেছে। তাঁদের কাছে গার্মেন্টের মূল্যবান কাপড়চোপড়ের চেয়ে শ্রমিকদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।
স্যার ডেনিম গার্মেন্টের কর্মচারী আখতার হোসেন বলেন, মালিকের নির্দেশমতো আগুন লাগার মুহূর্তেই ফ্যাক্টরির সব দরজা ও তালা খুলে দেওয়া হয়। মালামালের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। দরজা খুলে দেওয়ার কারণে কমপক্ষে দেড় শ শ্রমিক ছাদে চলে যান। সোয়ান গার্মেন্টের কর্মচারী শহীদুল্লাহ মনে করেন, অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের প্রায় ১৫ কোটি টাকার তৈরি পোশাক পুড়ে গেছে। তবে এতে মালিকের কোনো দুঃখ নেই। কোনো মানুষ যে মারা যায়নি, সেটাই বড় কথা।
স্যার ডেনিম গার্মেন্টের মান নিয়ন্ত্রক আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে জানান, সকাল ১০টার দিকে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির পঞ্চম তলায় নিয়মিত মিটিং চলছিল। এর মধ্যে তাঁরা পোড়া কাপড়ের গন্ধ পাচ্ছিলেন। তাঁরা নিচে এসে দেখেন, সোয়ান গার্মেন্টের গোডাউনে আগুন লেগেছে। তখন গার্মেন্ট কর্মকর্তারা সবাইকে দ্রুত নিচে নেমে যেতে নির্দেশ দেন। মূল সিঁড়ি ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে যাওয়ায় ভবনের মাঝখানের ও পেছনের দিকের সিঁড়ি বেয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী-কর্মকর্তারা খুব সহজে নিরাপদে বের হয়ে যেতে সক্ষম হন।
গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২ মোল্লারটেকের আফনান প্লাজায় দুটি গার্মেন্ট ও একটি গোডাউন রয়েছে। ১২-তলা ভবনের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত সোয়ান গার্মেন্টের গোডাউন। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় রয়েছে স্যার ডেনিম গার্মেন্ট। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ তলা পর্যন্ত ম্যাককয় সোয়েটার লিমিটেড। দুটি গার্মেন্টে প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সোয়ান গার্মেন্টের গোডাউন থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। এ ভবনের পাশেই রয়েছে সোয়ান গার্মেন্টের বিশাল ভবন।
শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় লোকজনের আন্তরিকতাও কোনো দিন ভুলে যাওয়া যাবে না। তারা ভবন থেকে শ্রমিকদের নিরাপদে পৌঁছানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এমনকি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির পার্শ্ববর্তী ভবনের জানালার গ্রিল কেটে আটকে পড়া শ্রমিকদের বাঁচায় তারা। অনেকে কলস ও বালতিভর্তি পানি ঢেলে আগুন নেভানোর জন্য এগিয়ে আসে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমত আলী ভূঁইয়া জানান, গার্মেন্ট শ্রমিক ও এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় শত শত শ্রমিকের জীবন রক্ষা পেয়েছে। ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে কেউ মারা যায়নি। তিনি জানান, এলাকায় অনেক গার্মেন্ট রয়েছে। কিন্তু সোয়ান, স্যার ডেনিম ও ম্যাককয় গার্মেন্টের মতো সুশৃঙ্খল গার্মেন্ট খুব কমই আছে।
সোয়ান গার্মেন্টের কর্মচারী মোমেন জানান, আফনান প্লাজার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় তাঁদের গোডাউন। সেখানে তৈরি পোশাক পলিথিনে মুড়িয়ে শিপমেন্টের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল; কয়েক দিনের মধ্যেই বিদেশে রপ্তানি হয়ে যেত। কিন্তু সকাল বেলায় সেই গোডাউনে আগুন লেগে যায়। তিনি জানান, ভবনটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির উপযোগী করে পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশস্ত সিঁড়ির পাশাপাশি একাধিক বিকল্প সিঁড়ি থাকায় প্রচণ্ড আগুন ও ধোঁয়ায় দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হলেও কেউ মারা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, জেনারেটর থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তাই গোডাউনের সঙ্গে জেনারেটর রাখা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। গোডাউনে পলিথিনসহ তৈরি পোশাক থাকায় আগুনের চেয়ে ধোঁয়া বেশি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক ভবনের ওপরে উঠে যান। ভবনে বিকল্প সিঁড়ি থাকায় সবাই প্রাণে বেঁচে যান। তাঁদের উদ্ধারকাজে স্থানীয় লোকজন ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মাত্র ৮-১০ জন শ্রমিক সামান্য আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে সামান্য চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তবে আটকে পড়া গার্মেন্ট শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য পার্শ্ববর্তী ভবনের গ্রিল খুলতে গিয়ে কয়েকজন হাতে আঘাত পেয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রবীণ কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ২০ বছরের চাকরিজীবনে অনেক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী তিনি। কিন্তু এত বড় গার্মেন্টে আগুন লাগা সত্ত্বেও কোনো শ্রমিক মারা না যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
হংকং-ভিত্তিক সোয়ান গার্মেন্টের মালিক টপি হং (মিং অং হং) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতবাক। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গুলশানের বাসা থেকে দ্রুত মোল্লারটেক ফ্যাক্টরিতে চলে আসেন। তিনি ফায়ার সার্ভিসের হেলমেট পরে অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, গার্মেন্টের জন্য যত রকম নিরাপত্তা দেওয়া দরকার তার সব কিছুই সেখানে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিভাবে গোডাউনে আগুন লেগেছে, তা রহস্যজনক। ফায়ার সার্ভিসের তদন্তে হয়তো আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা মাকসুদুর রহমান মাসুম বলেন, যে তিনটি গার্মেন্টে আগুন লেগেছে তাদের বেশ সুনাম রয়েছে। শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি গার্মেন্টের পরিবেশ খুই ভালো। কিন্তু আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত করে মূল ঘটনা বের করা উচিত। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানান।
No comments