সেপটিক ট্যাঙ্কে মৃত্যু-কেবল বিষাক্ত গ্যাসই দায়ী নয়
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি বাড়ির মলশোধনী বা সেপটিক ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে চার শ্রমিকের করুণ মৃত্যু ক্ষোভেরও সঞ্চার করে; শুধু বেদনাদায়ক নয়। সামষ্টিক স্বাস্থ্য রক্ষায় খেটে খাওয়া মানুষের মূল্যবান প্রাণহানির এ ধরনের অঘটন আকস্মিক তো নয়ই।
নেহায়েত পেটের দায়ে কোনো বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর আমরা মাঝে মধ্যেই দেখি। আমাদের মনে আছে, এ বছরের ১৯ মার্চ নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় দু'জনের মৃত্যু হয়েছিল একইভাবে। ২০১০ সালের জুলাইতে বগুড়ার কাহালুতে দু'জন, ২০০৮ সালের জুনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় তিনজন এবং ২০০৭ সালের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দু'জনের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছিল। এটি খণ্ডচিত্রই বিবেচিত হবে। ধারণা করা যায়, এ ধরনের মৃত্যুর সম্পূর্ণ চিত্র দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর আরও ঘটনার মিছিলেই হারিয়ে যায়। প্রান্তিক ও অসংগঠিত শ্রমিকশ্রেণীর সদস্যরা এর শিকার হয় বলেই কি এসব জীবনহানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় তরঙ্গও তোলে না? বিষয়টি এতটাই অবহেলিত যে বছরে ঠিক কতজন শ্রমিক সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে আর জীবন্ত ফিরে আসে না, তার কোনো পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় না। কিন্তু এসব মৃত্যুর দায় আমরা এড়াতে পারি কি? প্রায় প্রত্যেকটি মৃত্যু ঘটে একইভাবে_ এক বা একাধিক শ্রমিক কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই সেপটিক ট্যাঙ্কে নামে এবং বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়। ভেতর থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে উদ্ধারে যারা নামে, তাদেরও মেনে নিতে হয় করুণ পরিণতি। অথচ এ কাজের জন্য রয়েছে বৈজ্ঞানিক উপায় ও উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা। সেগুলো মেনে চললেই প্রতিবছর অনেক মূল্যবান প্রাণ বেঁচে যায়। আমরা আশা করি, সাতকানিয়ার অঘটনের পর স্থানীয় প্রশাসনগুলো এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হবে। জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিও জরুরি। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সংগঠনগুলো এগিয়ে আসতে পারে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাতকানিয়াই হতে পারে এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যুর সর্বশেষ ঘটনা।
No comments