স্মরণ-স্বৈরাচারের প্রতিবাদী কণ্ঠ ডা. মিলন by এস কবীর
প্রথম প্রথম কয়েক বছর গিয়েছি ডা. মিলনের বাসায়। বিশেষ করে ঈদের দিন। এ রকম বিশেষ দিনগুলোয় মায়ের বুকটা হু হু করে ওঠে ছেলের জন্য। কোনোবারই ছেলের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। কেমন আছেন বা অন্য সাংসারিক টুকিটাকি কথা।
নিজের বুকের ব্যথা নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছেন বরাবর। ছিমছাম বসার ঘরে একটা-দুটা কথা, চা খাওয়া- সবই হয়েছে ঠিকঠাক; কিন্তু মায়ের বুকে বয়ে চলেছে বেদনার সুর। এমনি এক শীতের সকালে চলে গেছেন তাঁর বুকের ধন চিরতরে। এরপর চলে গেছে অনেক বছর। আজিমপুর কলোনির বাসার নিরালা কোনায় তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন ছেলের স্মৃতি নিয়ে।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে পুরো দেশ। একদিকে আন্দোলন চলছে আর অন্যদিকে সরকারের পুলিশি নিপীড়ন। বেশি বেগতিক দেখলে কারফিউর বেড়াজালে আটকে দিচ্ছে জনগণকে। সেই কারফিউ ভেঙে মাঝেমধ্যেই আন্দোলনকারীরা বের হয়ে আসছে রাস্তায়। এমনি করে যখন চরম অরাজকতা, তখন দেশের সব স্তরের ও সব পেশার মানুষ এক হয়ে দাবি জানাল সেই স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের। এতে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক, যুক্ত হয়েছে ছাত্র, যুক্ত হয়েছে শিক্ষক, যুক্ত হয়েছে ডাক্তার। একে একে এটা হয়ে গেছে আপামর জনতার। টলমল করছে যখন এরশাদের ক্ষমতার আসন, তখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন যেকোনো উপায়ে তা টিকিয়ে রাখতে। প্রশাসনের সাহায্যে না পেরে মাঠে নামিয়েছেন নিজের পেটোয়া বাহিনী।
সে দিন ২৭ নভেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এলেও ক্লাস হচ্ছে না ঠিকমতো। ছাত্ররা স্বৈর সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ। তাঁরা টিএসসিসহ বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। এমন সময় শুরু হলো এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হামলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর থেকে সরকারের মদদপুষ্ট একদল সন্ত্রাসী গুলি ছুড়তে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। হঠাৎ করে গোলাগুলি শুরু হওয়ায় সবাই দিশেহারা। সে সময়ই ওই পথে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শামসুল আলম খান মিলন। একই রিকশায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তাঁরা যাচ্ছিলেন এই আন্দোলনের বিষয়ে বিএমএর একটা সভায়। তাঁরা যখন টিএসসির গোল চত্বরটার কাছে, তখন একটা গুলি এসে লাগে ডা. মিলনের গায়ে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গুলির ঘটনা। বিভিন্ন দিক থেকে ছাত্রনেতারা দৌড়ে এলেন। সবাই মিলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হলো। ডা. মিলন চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। তবে তাঁর এই আত্মদান বৃথা যায়নি। মহৎ কোনো কিছুই বৃথা যায় না। আন্দোলনে এই ঘটনা একটা নতুন গতি সঞ্চার করে। পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। স্বৈরাচারের রাহুর গ্রাস থেকে মুক্তি পায় গণতন্ত্র।
এস কবীর
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে পুরো দেশ। একদিকে আন্দোলন চলছে আর অন্যদিকে সরকারের পুলিশি নিপীড়ন। বেশি বেগতিক দেখলে কারফিউর বেড়াজালে আটকে দিচ্ছে জনগণকে। সেই কারফিউ ভেঙে মাঝেমধ্যেই আন্দোলনকারীরা বের হয়ে আসছে রাস্তায়। এমনি করে যখন চরম অরাজকতা, তখন দেশের সব স্তরের ও সব পেশার মানুষ এক হয়ে দাবি জানাল সেই স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের। এতে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক, যুক্ত হয়েছে ছাত্র, যুক্ত হয়েছে শিক্ষক, যুক্ত হয়েছে ডাক্তার। একে একে এটা হয়ে গেছে আপামর জনতার। টলমল করছে যখন এরশাদের ক্ষমতার আসন, তখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন যেকোনো উপায়ে তা টিকিয়ে রাখতে। প্রশাসনের সাহায্যে না পেরে মাঠে নামিয়েছেন নিজের পেটোয়া বাহিনী।
সে দিন ২৭ নভেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এলেও ক্লাস হচ্ছে না ঠিকমতো। ছাত্ররা স্বৈর সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ। তাঁরা টিএসসিসহ বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। এমন সময় শুরু হলো এরশাদের পেটোয়া বাহিনীর হামলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর থেকে সরকারের মদদপুষ্ট একদল সন্ত্রাসী গুলি ছুড়তে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। হঠাৎ করে গোলাগুলি শুরু হওয়ায় সবাই দিশেহারা। সে সময়ই ওই পথে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শামসুল আলম খান মিলন। একই রিকশায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তাঁরা যাচ্ছিলেন এই আন্দোলনের বিষয়ে বিএমএর একটা সভায়। তাঁরা যখন টিএসসির গোল চত্বরটার কাছে, তখন একটা গুলি এসে লাগে ডা. মিলনের গায়ে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গুলির ঘটনা। বিভিন্ন দিক থেকে ছাত্রনেতারা দৌড়ে এলেন। সবাই মিলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হলো। ডা. মিলন চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে। তবে তাঁর এই আত্মদান বৃথা যায়নি। মহৎ কোনো কিছুই বৃথা যায় না। আন্দোলনে এই ঘটনা একটা নতুন গতি সঞ্চার করে। পতন ঘটে এরশাদ সরকারের। স্বৈরাচারের রাহুর গ্রাস থেকে মুক্তি পায় গণতন্ত্র।
এস কবীর
No comments