লোভ-লালসা হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করুন -সিয়াম সাধনার মাস ধর্ম by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
রমজান মাসে রোজাদারদের মন থেকে সব ধরনের লোভ-লালসা ও হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সমাজের সবার সঙ্গে শান্তিতে মিলেমিশে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। পার্থিব যাবতীয় লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মসংযম ও তাকওয়া বা পরহেজগারি অর্জনের নামই হলো রোজা। এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে অপর কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা তার লালসা কোরো না।’ (সূরা আল-নিসা, আয়াত-৩২)
লোভ-লালসা প্রতিনিয়ত মানুষকে অন্যায় ও জুলুমের দিকে ধাবিত করছে। তাই রোজাদার বান্দার মূল লক্ষ্য থাকবে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ধনসম্পদ, মানসম্মান, ক্ষমতা, পদমর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রতি লোভ-লালসা দীন ইসলাম ও ঈমানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) লোভ-লালসাকে সর্বদা দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণার উপকরণ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ঈমান এবং লোভ এক অন্তরে একত্র হতে পারে না। এর কারণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কেননা ঈমানের পরিণাম হচ্ছে ধৈর্য, সহনশীলতা ও অল্পে তুষ্ট থাকা। আর লোভ-লালসার পরিণাম হচ্ছে অশান্তি, ধৈর্যহীনতা ও অস্বস্তিবোধ।’ (নাসাঈ ও তিরমিজি)
রোজা দেহের জাকাতস্বরূপ। জাকাত আদায় করলে যেমন সমস্ত সম্পদ পবিত্র হয়ে যায়, তেমনি রোজা রাখলে সমস্ত শরীর পবিত্র হয়ে যায়। হাদিস শরিফে রোজাকে ইবাদতের দরজা বলা হয়েছে। অন্য বর্ণনানুযায়ী রোজাকে দোজখের আগুন থেকে আত্মরক্ষার ঢাল বলা হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ) মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ যতক্ষণ না সেই ঢালকে কেউ বিনষ্ট করে ফেলে আর মিথ্যা ও পরনিন্দা দ্বারা এই ঢাল বিনষ্ট হয় বা এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়ে যায়।’
রমজান মাসে রোজা পালনকারী ব্যক্তির যেকোনো নেক দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। যিনি সিয়াম সাধনায় রত, তিনি কেবল মহান আল্লাহর প্রেমে বিমুগ্ধ হয়ে রোজা পালন করছেন। রোজাদারের সকল প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে গ্রহণ করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের নির্দেশ দান করেন, তোমাদের নিজস্ব ইবাদত মূলতবি রাখো এবং রোজাদারদের দোয়ার সময় আমিন বলতে থাকো।’ কিন্তু লোভ-লালসা ও হিংসা-বিদ্বেষকারী লোক তওবা করে নিজ নিজ বদ কার্যাদি পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করেন না।
রোজাদারদের লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারগণ বিশেষ একটি দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এ দরজার নাম রাইয়্যান বা তৃপ্তিদায়ক। সব রোজাদার প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপর আর কেউ এ দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।’ অপর এক বর্ণনানুযায়ী ‘রাইয়্যান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি কখনো পিপাসার কষ্ট অনুভব করবে না।’ (তিরমিজি)
বস্তুত মাহে রমজানের রোজার মাধ্যমে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে রোজাদার বান্দারা অতিমানবীয় জীবনের দীক্ষা নেন। যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পার্থিব কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাপরায়ণতা ও পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে রোজার যথার্থ তাত্পর্য ও মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেন, সেই রোজাদারদের আল্লাহ তাআলা তাঁর অপার করুণা, ক্ষমাশীলতায় জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করেন।
সুতরাং মাহে রমজানে লোভ-লালসা সংবরণ করুন; হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলুন। হতদরিদ্র প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, অসহায় দুস্থ লোকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্যক্তিগত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়িক লোভ-লালসা, জাগতিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে আর্তমানবতার কল্যাণে নিজের মানবিকতা জাগিয়ে তুলুন। তাহলে সমাজ থেকে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা দূর হয়ে উত্তম চরিত্রের গুণাবলি প্রকাশ ঘটবে। আসুন, মাহে রমজানে অসহায় লোকদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সেই ইচ্ছা পূরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করি, ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
লোভ-লালসা প্রতিনিয়ত মানুষকে অন্যায় ও জুলুমের দিকে ধাবিত করছে। তাই রোজাদার বান্দার মূল লক্ষ্য থাকবে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ধনসম্পদ, মানসম্মান, ক্ষমতা, পদমর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রতি লোভ-লালসা দীন ইসলাম ও ঈমানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) লোভ-লালসাকে সর্বদা দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণার উপকরণ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ঈমান এবং লোভ এক অন্তরে একত্র হতে পারে না। এর কারণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কেননা ঈমানের পরিণাম হচ্ছে ধৈর্য, সহনশীলতা ও অল্পে তুষ্ট থাকা। আর লোভ-লালসার পরিণাম হচ্ছে অশান্তি, ধৈর্যহীনতা ও অস্বস্তিবোধ।’ (নাসাঈ ও তিরমিজি)
রোজা দেহের জাকাতস্বরূপ। জাকাত আদায় করলে যেমন সমস্ত সম্পদ পবিত্র হয়ে যায়, তেমনি রোজা রাখলে সমস্ত শরীর পবিত্র হয়ে যায়। হাদিস শরিফে রোজাকে ইবাদতের দরজা বলা হয়েছে। অন্য বর্ণনানুযায়ী রোজাকে দোজখের আগুন থেকে আত্মরক্ষার ঢাল বলা হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ) মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ যতক্ষণ না সেই ঢালকে কেউ বিনষ্ট করে ফেলে আর মিথ্যা ও পরনিন্দা দ্বারা এই ঢাল বিনষ্ট হয় বা এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়ে যায়।’
রমজান মাসে রোজা পালনকারী ব্যক্তির যেকোনো নেক দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। যিনি সিয়াম সাধনায় রত, তিনি কেবল মহান আল্লাহর প্রেমে বিমুগ্ধ হয়ে রোজা পালন করছেন। রোজাদারের সকল প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে গ্রহণ করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের নির্দেশ দান করেন, তোমাদের নিজস্ব ইবাদত মূলতবি রাখো এবং রোজাদারদের দোয়ার সময় আমিন বলতে থাকো।’ কিন্তু লোভ-লালসা ও হিংসা-বিদ্বেষকারী লোক তওবা করে নিজ নিজ বদ কার্যাদি পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করেন না।
রোজাদারদের লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারগণ বিশেষ একটি দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এ দরজার নাম রাইয়্যান বা তৃপ্তিদায়ক। সব রোজাদার প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারপর আর কেউ এ দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।’ অপর এক বর্ণনানুযায়ী ‘রাইয়্যান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি কখনো পিপাসার কষ্ট অনুভব করবে না।’ (তিরমিজি)
বস্তুত মাহে রমজানের রোজার মাধ্যমে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে রোজাদার বান্দারা অতিমানবীয় জীবনের দীক্ষা নেন। যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পার্থিব কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাপরায়ণতা ও পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে রোজার যথার্থ তাত্পর্য ও মাহাত্ম্য উপলব্ধি করেন, সেই রোজাদারদের আল্লাহ তাআলা তাঁর অপার করুণা, ক্ষমাশীলতায় জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করেন।
সুতরাং মাহে রমজানে লোভ-লালসা সংবরণ করুন; হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলুন। হতদরিদ্র প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, অসহায় দুস্থ লোকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ব্যক্তিগত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়িক লোভ-লালসা, জাগতিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে আর্তমানবতার কল্যাণে নিজের মানবিকতা জাগিয়ে তুলুন। তাহলে সমাজ থেকে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা দূর হয়ে উত্তম চরিত্রের গুণাবলি প্রকাশ ঘটবে। আসুন, মাহে রমজানে অসহায় লোকদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সেই ইচ্ছা পূরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করি, ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments