আখতারুন নাহার -স্মরণ by প্রবীণ হিতৈষী ডা. মো. ইব্রাহিম
ডা. মো. ইব্রাহিম এমনই এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, মৃত্যুর ২০ বছর পরও যেন তিনি নতুনভাবে নতুন পরিচয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত হচ্ছেন। তাঁর কথা উঠলেই বারডেমের কথা মনে আসে। মনে আসে ডায়াবেটিক রোগিদের জন্য তাঁর নিরন্তর সংগ্রামের কথা। তবে এর বাইরেও অনেক কাজ করেছেন এই মনিষী। তাঁর পূর্ণাঙ্গ কাজের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা এই স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। তাঁর মৃত্যুর পর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও তাঁর সম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়ে গেছে মানুষের মধ্যে। এভাবেই বোধ হয় যুগে যুগে ইতিহাস নতুন করে তার বরেণ্য সন্তানকে বিচার করে, বিশ্লেষণ করে বুঝতে চেষ্টা করে, বোঝাতে চেষ্টা করে। তিনি হয়ে ওঠেন এক অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তি।
ডা. মো. ইব্রাহিমের মানবসেবা, সমাজসেবা অবশ্যই অনুসরণযোগ্য। বাল্যকাল থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি সুষম সুন্দর সমাজ, যেখানে থাকবে না আর্তপীড়িতের হাহাকার, কোনো শ্রেণীই নিপীড়িত হবে না, অর্থনৈতিকভাবে কোনো অসম বণ্টন থাকবে না, সর্বত্রই থাকবে ন্যায়নীতি। তিনি সেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তান সরকারের উচ্চ খেতাব ‘সিতারা-ই-খিদমত’-এ ভূষিত হয়েছেন।
তিনি সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টি দিয়ে সমাজকে দেখেছেন এবং প্রতিনিয়ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন। তখনই তত্পর হয়েছেন সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য। এর একটি হলো প্রবীণদের সমস্যা। আমাদের সমাজে প্রবীণেরা আর্থিক-মানসিক-শারীরিক সব দিক থেকেই অসহায় হয়ে পড়েন। তিনি লক্ষ করলেন, এ সমস্যা এ দেশে দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। তিনি এও উপলব্ধি করলেন যে আমাদের সামাজিক সংগঠন, এমনকি সরকারও এ বিষয় নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। এ কারণে তিনি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক এম এ ওয়াহেদ এ বিষয় নিয়ে এগিয়ে আসেন। এরপর ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ এবং জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। প্রথম দিকে ডা. ওয়াহেদের বাসভবনেই প্রবীণ হিতৈষী সংঘের কাজকর্ম হতো। এখানে প্রবীণদের বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা ও পরামর্শ দেওয়া হতো। ১৯৭৬ সালে ডা. ওয়াহেদের মৃত্যুর পর ডা. মো. ইব্রাহিম এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ইউরোপের আদলে প্রতিষ্ঠানটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি তাঁর জরিপের তথ্য অনুযায়ী প্রবীণ বয়সে সেবা-শুশ্রূষার প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদামতো পরিকল্পনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে জমা দেন। তত্কালীন সরকার এই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এটিকে স্বীকৃতি দেয় এবং সে অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। এই প্রকল্পের মধ্যে ছিল সমিতির নিজস্ব স্থান, প্রবীণদের দৈনিক পরিচর্যাকেন্দ্র, শরীরচর্চার ব্যবস্থা, চিকিত্সার সুবন্দোবস্ত ইত্যাদি। আগারগাঁওয়ে এই সমিতির জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে দালান নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হয় ১৯৮৬ সালে। ডা. মো. ইব্রাহিমের এটিও এক অনন্য সাফল্য। তিনি ১৯৮৪ সালে সরকারের সহায়তায় প্রবীণদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালার আয়োজন করেন। ওই কর্মশালায় তিনি সরকারের কাছে প্রবীণদের কল্যাণে কিছু প্রস্তাব রেখেছিলেন, যেমন—জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রবীণদের অধিকার নিশ্চিত করা, তাঁদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাঁদের মর্যাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা, বয়স্কদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, মা-বাবার প্রতি কর্তব্য পালনে ধর্মীয় অনুশাসনের বিধান প্রচারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
সুতরাং আমরা দেখতে পাই, ডা. মো. ইব্রাহিম শুধু চিকিত্সাবিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দক্ষ সমাজবিজ্ঞানী। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্যই তিনি ভেবেছেন এবং তাঁদের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন। শুধু ডায়াবেটিক হাসপাতাল নিয়েই তাঁর চিন্তা ছিল না। তাঁর চিন্তার পরিধি ছিল বিশাল। এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলে গেছেন চিরদিনের জন্য। রেখে গেছেন তাঁর অনন্য অবদানগুলো। এ জন্য এ দেশের মানুষ তাঁর প্রতি সীমাহীন কৃতজ্ঞ ও ঋণী।
ডা. মো. ইব্রাহিমের মানবসেবা, সমাজসেবা অবশ্যই অনুসরণযোগ্য। বাল্যকাল থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি সুষম সুন্দর সমাজ, যেখানে থাকবে না আর্তপীড়িতের হাহাকার, কোনো শ্রেণীই নিপীড়িত হবে না, অর্থনৈতিকভাবে কোনো অসম বণ্টন থাকবে না, সর্বত্রই থাকবে ন্যায়নীতি। তিনি সেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তান সরকারের উচ্চ খেতাব ‘সিতারা-ই-খিদমত’-এ ভূষিত হয়েছেন।
তিনি সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টি দিয়ে সমাজকে দেখেছেন এবং প্রতিনিয়ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন। তখনই তত্পর হয়েছেন সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য। এর একটি হলো প্রবীণদের সমস্যা। আমাদের সমাজে প্রবীণেরা আর্থিক-মানসিক-শারীরিক সব দিক থেকেই অসহায় হয়ে পড়েন। তিনি লক্ষ করলেন, এ সমস্যা এ দেশে দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। তিনি এও উপলব্ধি করলেন যে আমাদের সামাজিক সংগঠন, এমনকি সরকারও এ বিষয় নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। এ কারণে তিনি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক এম এ ওয়াহেদ এ বিষয় নিয়ে এগিয়ে আসেন। এরপর ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ এবং জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। প্রথম দিকে ডা. ওয়াহেদের বাসভবনেই প্রবীণ হিতৈষী সংঘের কাজকর্ম হতো। এখানে প্রবীণদের বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা ও পরামর্শ দেওয়া হতো। ১৯৭৬ সালে ডা. ওয়াহেদের মৃত্যুর পর ডা. মো. ইব্রাহিম এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ইউরোপের আদলে প্রতিষ্ঠানটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি তাঁর জরিপের তথ্য অনুযায়ী প্রবীণ বয়সে সেবা-শুশ্রূষার প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদামতো পরিকল্পনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে জমা দেন। তত্কালীন সরকার এই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এটিকে স্বীকৃতি দেয় এবং সে অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। এই প্রকল্পের মধ্যে ছিল সমিতির নিজস্ব স্থান, প্রবীণদের দৈনিক পরিচর্যাকেন্দ্র, শরীরচর্চার ব্যবস্থা, চিকিত্সার সুবন্দোবস্ত ইত্যাদি। আগারগাঁওয়ে এই সমিতির জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে দালান নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হয় ১৯৮৬ সালে। ডা. মো. ইব্রাহিমের এটিও এক অনন্য সাফল্য। তিনি ১৯৮৪ সালে সরকারের সহায়তায় প্রবীণদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালার আয়োজন করেন। ওই কর্মশালায় তিনি সরকারের কাছে প্রবীণদের কল্যাণে কিছু প্রস্তাব রেখেছিলেন, যেমন—জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রবীণদের অধিকার নিশ্চিত করা, তাঁদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, তাঁদের মর্যাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা, বয়স্কদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, মা-বাবার প্রতি কর্তব্য পালনে ধর্মীয় অনুশাসনের বিধান প্রচারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
সুতরাং আমরা দেখতে পাই, ডা. মো. ইব্রাহিম শুধু চিকিত্সাবিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দক্ষ সমাজবিজ্ঞানী। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্যই তিনি ভেবেছেন এবং তাঁদের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন। শুধু ডায়াবেটিক হাসপাতাল নিয়েই তাঁর চিন্তা ছিল না। তাঁর চিন্তার পরিধি ছিল বিশাল। এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলে গেছেন চিরদিনের জন্য। রেখে গেছেন তাঁর অনন্য অবদানগুলো। এ জন্য এ দেশের মানুষ তাঁর প্রতি সীমাহীন কৃতজ্ঞ ও ঋণী।
No comments