কাশ্মীরে শুক্রবার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিলের ডাক by শুভজ্যোতি ঘোষ
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে আগামিকাল
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর যাতে মানুষ কারফিউ অমান্য করে প্রতিবাদ মিছিলে
সামিল হয়, সেই ডাক দিয়ে শ্রীনগরে হুরিয়ত নেতাদের নামে পোস্টার পড়েছে।
কাশ্মীর
থেকে বিবিসি ও রয়টার্স সংবাদদাতারা নিশ্চিত করেছেন, শহরের কয়েকটি
এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের যৌথ সংগঠন 'জয়েন্ট রেজিস্ট্যান্স
লিডারশিপের'র নামে ওই ধরনের পোস্টার চোখে পড়ছে।
তবে যেহেতু ওই নেতারা এখনও আটক বা গৃহবন্দী, ফলে সত্যিই তারা ওই ডাক দিয়েছেন কি না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
দুসপ্তাহ
আগে শ্রীনগরেরই সৌরা এলাকায় শুক্রবারের নামাজের পর বেশ কয়েকশো মানুষ
প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল, যে ভিডিও বিবিসিতে প্রকাশিত হলে তা
আলোড়ন ফেলে দেয়।
৩৭০ ধারা বিলোপের বিরুদ্ধে শ্রীনগরের উপকন্ঠে বিক্ষোভ। ২০শে আগস্ট, ২০১৯ |
কাল শুক্রবারের নামাজের আগেও নিরাপত্তাবাহিনী শ্রীনগর-সহ গোটা কাশ্মীরকে কঠোর নিরাপত্তা ও কারফিউতে মুড়ে রেখেছে।
গত ৫ আগস্ট ভারত সরকারের কাশ্মীরের স্বশাসন কেড়ে নেওয়ার বিতর্কিত
সিদ্ধান্ত ঘোষণার অনেক আগে থেকেই সেখানকার হুরিয়তপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী
নেতাদের হয় গৃহবন্দী, নয় জেলে আটকে রাখা হয়েছিল।
ফলে সৈয়দ আলি
শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ ওমর ফারুক বা ইয়াসিন মালিকের মতো কাশ্মীরের
বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা 'জয়েন্ট রেজিস্ট্যান্স লিডারশিপ' নামে যে যৌথ
নেতৃত্ব গঠন করেছিলেন তাদের দিক থেকে এযাবত কোনও কর্মসূচীর ঘোষণা আসেনি।
কিন্তু
ভারতের পার্লামেন্টে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত
হওয়ার দুসপ্তাহ পর অবশেষে সেই যৌথ নেতৃত্বের নামে পোস্টার পড়েছে - সাধারণ
মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে তারা যেন এই শুক্রবারের নামাজের পর বিপুল
সংখ্যায় সরকার-বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। ফাইল ছবি |
শ্রীনগর থেকে বিবিসি
উর্দুর রিয়াজ মাসরুর এদিন বলছিলেন, "পোস্টারগুলো যে হুরিয়ত নেতাদের সঠিক
লেটারহেডে তা ঠিক বলা যাবে না, তবে সৌরা-সহ শ্রীনগরের কিছু এলাকায় সত্যিই
এগুলো দেখা যাচ্ছে।"
"তবে ২০১৬তে বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর
জয়েন্ট রেজিস্ট্যান্স লিডারশিপ পোস্টারে যে ধরনের ক্যালেন্ডার বের করত -
যে অমুক দিন হরতাল হবে, তমুক দিন বিক্ষোভ মিছিল - এই পোস্টারগুলোও অনেকটা
সে ধরনের।"
"কিন্তু এগুলো আসলেই হুরিয়ত নেতাদের জারি করা আহ্বান কি না, তা যাচাই করার কোনও উপায় নেই।"
"কারণ
তাদের শীর্ষ নেতৃত্বই শুধু নয় - দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নেতারাও সবাই
গত বেশ কয়েকদিন ধরে আটক, বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের কোনওরকম যোগাযোগ করতে
দেওয়া হচ্ছে না।"
হুরিয়তের যৌথ নেতৃত্বের দুই স্তম্ভ - ইয়াসিন মালিক (বাঁয়ে) ও মিরওয়াইজ ওমর ফারুক |
"এই পটভূমিতে পোস্টারগুলো সত্যিই তাদের কিনা, এটা বলা খুব মুশকিল", বলছিলেন ওই বিবিসি সংবাদদাতা।
এদিকে
রয়টার্স জানাচ্ছে, শ্রীনগরের দেওয়ালে সাঁটা এমনই একটি পোস্টারে লেখা
হয়েছে, "প্রত্যেক কাশ্মীরি - তরুণ বা বৃদ্ধ, পুরুষ বা মহিলা - সবাইকে বলা
হচ্ছে শুক্রবারের নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে।"
সেই প্রতিবাদ যে 'হুকুমত' বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সেটাও।
শ্রীনগরে জাতিসংঘের যে সামরিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর (ইউএনএমওজি) কার্যালয় আছে, প্রতিবাদ মিছিল সেই অভিমুখে যাবে বলেও জানানো হয়েছে।
১৯৪৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে প্রথম যুদ্ধের পরই জাতিসংঘের এই কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল।
এখন
এই পোস্টারের আহ্বানে কতটা সাড়া মিলবে তা স্পষ্ট নয়, কিন্তু
নামাজ-পরবর্তী জমায়েত ঠেকাতে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কোনও ঝুঁকি নিচ্ছে
না।
বৃহস্পতিবার শ্রীনগরের একটি বন্ধ বাজারের সামনের দৃশ্য |
রিয়াজ মাসরুর বলছিলেন, "কাশ্মীরে এক মাস বা দুমাস ধরে টানা কারফিউ বা ব্ল্যাকআউট কোনও নতুন ঘটনা নয়।"
"কিন্তু তার পরেও এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা, কারণ যোগাযোগের একটা রাস্তাকেও এবার ছাড় দেওয়া হয়নি।"
"আগামিকাল শুক্রবারের আগে সেই ফাঁস যেন আরও এঁটে বসেছে।"
"যে
এলাকাতেই যাচ্ছি, মানুষ ঘিরে ধরে প্রশ্ন করছেন - এবার কি ভারত-পাকিস্তান
যুদ্ধ লাগবে? আরও কঠোর ক্র্যাকডাউন শুরু হবে? উত্তর কারওরই জানা নেই, আর
সাধারণ মানুষও যেন নিরবিচ্ছিন্ন আতঙ্কের ঘেরাটোপে বন্দী!"
গত
কয়েকদিনে কাশ্মীরের যেখানেই মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেছে
- নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
চালানো হয়েছে বা পেলেট গান বা ছররা বন্দুকও, যাতে ঘায়েল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেকেই।
কাল শুক্রবারেও শ্রীনগরে এমন কোনও সংঘাত দেখা যাবে কি না, সেই আশঙ্কা রয়েছে পুরোদস্তুরই।
বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীনগরের রাজপথে |
No comments