জন্মের পরই ডেঙ্গু যন্ত্রণায় by মরিয়ম চম্পা
ফুলের
মতো অবুঝ শিশু। ছোট্ট হাতে লাগানো ক্যানোলা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এমন ছোট
শিশু হাসপাতালে আসছে অনেক। তাদের চিকিৎসা নিয়ে অভিভাবক আর চিকিৎসকরা
গলদঘর্ম। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দেখা যায় এসব শিশু রোগী। ঢাকা শিশু হাসপাতালের
২৩ নং বেডে ঘুমিয়ে আছে শিশু সোয়াদ হোসেন। বয়স ৩ মাস। আগের চেয়ে কিছুটা
সুস্থ হলেও হাতের ক্যানোলা এখনো খোলা হয়নি।
মা শ্রাবনী বলেন, দুই বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। এটাই আমার প্রথম বাচ্চা। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওর ডেঙ্গু ধরা পরে। পরবর্তীতে ডেঙ্গু থেকে কাশি, নিউমোনিয়া, ঠান্ডাসহ একাধিক অসুখ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছে সে কিছুটা সুস্থ। কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি। এতটুকুন দুধের ছেলেকে দুজনে চেপে ধরে হাতে যখন ক্যানোলা ভরে তখন মনে হয়েছিল আমি মরে যাই। এতো কষ্ট ও কিভাবে সইছে। আল্লাহ ছেলেকে সুস্থ করে আমাকে ডেঙ্গু দিলেই পারতো। ঘুমের মধ্যে হাতের ক্যানোলায় যখন টান লাগে তখন সোয়াদ কান্না করতে করতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। পুরো শরীর কালো হয়ে যায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শ্রাবনী বলেন, ছেলের কষ্ট যে আর সইতে পারছি না। ১৯ নম্বর বেডে মুখে মাস্ক নিয়ে নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে আছে মুকিতুল ইসলাম রাফি। বয়স ১১ মাস। একদিকে মুখে গ্যাস দিচ্ছে। অন্য দিকে ডান হাতে স্যালাইন চলছে। রাফির ডান হাতে ক্যানোলার পাশে রক্ত জমে কালসিটে দাগ পরে গেছে। বিছানায় আধা টাঙ্গানো মশারির নিচে শুয়ে আছেন মা মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, চার ছেলে মেয়ের মধ্যে ও সবার ছোট। ওর বাবা শামসুল হক ব্যবসা করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নাখাল পাড়ায় থাকি। চলতি মাসের ১৪ তারিখ রাফির ডেঙ্গু ধরা পরে। প্রথমে ডেঙ্গু থাকলেও এখন একটার পর একটা নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শ্বাসকষ্টটা অনেক বেড়ে গেছে। একটু পর পর গ্যাস দিতে হয়। ছেলের মুখের চেয়ে গ্যাসের মাস্কই বেশি বড়। ও জন্মের সময় যে কষ্ট না পেয়েছি তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি কষ্ট পাচ্ছি এখন। রাতের বেলা শ্বাসকষ্ট সইতে না পেরে রাফি যখন কাঁদে তখন আমিও ওর সঙ্গে কান্না করি। কি করবো। ওর কষ্ট যে সহ্য হয় না।
জান্নাতের বয়স ৯ মাস। হাসপাতালের বিছানায় মা আর খালাতো বোনের মাঝে শুয়ে আছে জান্নাত। বোন অবশ্য তাকে আদর করে মিষ্টি জান্নাত বলে ডাকে। তার মা আসমা আক্তার বলেন, এটাই আমার প্রথম বাচ্চা। জান্নাতের ডেঙ্গু ধরা পরেছে ১৬ই আগস্ট। এখন ডেঙ্গু ভালো হয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট আছে। গ্যাস দিলে ঠিক হয়ে যায়। রক্তের প্লাটিলেট এখন ঠিক আছে। আগের তুলনায় একটু খাওয়া দাওয়া করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা হাজারীবাগ ঝাউচড়ে ভাড়া বাসায় থাকি। বাসার চারপাশের পরিবেশ খুবই নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর। যতদূর সম্ভব মেয়েকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা তো গরীব মানুষ। ভালো পরিবেশে থাকতে বেশি খরচ। নিজেরা খেয়ে বেঁচে থাকবো না কি ভালো বাসায় থাকবো।
মানজুরুল হাসান মুবিন। বয়স ৩ বছর সাত মাস। গত ১৫ তারিখ থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। মুবিনের মা বলেন, যন্ত্রণা সইতে পারছে না এখন আর। বাবার কাছে যাওয়ার জন্য কাঁদছে। কিছু খেতে চায় না। শরীর খুব দুর্বল। সিবিসির রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেছে ওর শরীরে প্লাটিলেট অনেক কম। রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে হলে তো ওকে ভালো মন্দ একটু খেতে হবে। সুপ নিয়ে বসে আছি ছেলে খেতে চাচ্ছে না। ওর বাবা একটি ছোট ব্যবসা করে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা তালতলা মোল্লাপাড়া ভাড়া বাসায় থাকি।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে নিহাকে নিয়ে বসে আছে তার মা। নিহার বয়স দেড় বছর। ডান হাতে স্যালাইন চলছে। সামনে কাউকে দেখলেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কোনো সাড়া শব্দ নেই। নিহার মা নুরজাহান বলেন, দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে নিহা ছোট। আমাদের বাসা আদাবর পানিরপাম্প এলাকায়। স্বামী আবুল খায়ের রিকশা চালান। চলতি মাসের চার তারিখ নিহার ডেঙ্গু ধরা পরে। এখন পর্যন্ত কমছে না। সোমবার সারাদিন ভালো ছিল। ওইদিন রাত ৯টা থেকে এখন পর্যন্ত জ্বর কমছে না। কখনো জ্বর ১শ চার থাকে। কখনো ১শ দুই। এর নিচে নামে না। জ্বর না থাকলে বাবু এমনিতে সুস্থ। বুকের দুধের ওপর এখন বেঁচে আছে। প্রথমে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখান থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। এ পর্যন্ত নিহার চিকিৎসায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মেয়ের চিকিৎসা খরচ যোগাতে ওর বাবা দিনরাত সমানে রিকশা চালায়। নিজেরা একটু ভালো মন্দ খেতে পারি না। কারণ মেয়ের চিকিৎসা করাবো না কি ভালো খাবো। এদিকে আমার চোখে ইনফেকশন হয়েছে। কর্নিয়ায় ছানি পড়েছে। টাকার অভাবে নিজের চিকিৎসা করাতে পারি না। কিন্তু টাকার জন্য তো আর মেয়েকে মেরে ফেলতে পারি না। ঢাকা শিশু হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার কবিতা সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ৯৯ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১১ শিশু। তবে আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে মনে হয়।
মা শ্রাবনী বলেন, দুই বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। এটাই আমার প্রথম বাচ্চা। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওর ডেঙ্গু ধরা পরে। পরবর্তীতে ডেঙ্গু থেকে কাশি, নিউমোনিয়া, ঠান্ডাসহ একাধিক অসুখ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছে সে কিছুটা সুস্থ। কিন্তু আমার দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি। এতটুকুন দুধের ছেলেকে দুজনে চেপে ধরে হাতে যখন ক্যানোলা ভরে তখন মনে হয়েছিল আমি মরে যাই। এতো কষ্ট ও কিভাবে সইছে। আল্লাহ ছেলেকে সুস্থ করে আমাকে ডেঙ্গু দিলেই পারতো। ঘুমের মধ্যে হাতের ক্যানোলায় যখন টান লাগে তখন সোয়াদ কান্না করতে করতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। পুরো শরীর কালো হয়ে যায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শ্রাবনী বলেন, ছেলের কষ্ট যে আর সইতে পারছি না। ১৯ নম্বর বেডে মুখে মাস্ক নিয়ে নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে আছে মুকিতুল ইসলাম রাফি। বয়স ১১ মাস। একদিকে মুখে গ্যাস দিচ্ছে। অন্য দিকে ডান হাতে স্যালাইন চলছে। রাফির ডান হাতে ক্যানোলার পাশে রক্ত জমে কালসিটে দাগ পরে গেছে। বিছানায় আধা টাঙ্গানো মশারির নিচে শুয়ে আছেন মা মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, চার ছেলে মেয়ের মধ্যে ও সবার ছোট। ওর বাবা শামসুল হক ব্যবসা করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নাখাল পাড়ায় থাকি। চলতি মাসের ১৪ তারিখ রাফির ডেঙ্গু ধরা পরে। প্রথমে ডেঙ্গু থাকলেও এখন একটার পর একটা নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শ্বাসকষ্টটা অনেক বেড়ে গেছে। একটু পর পর গ্যাস দিতে হয়। ছেলের মুখের চেয়ে গ্যাসের মাস্কই বেশি বড়। ও জন্মের সময় যে কষ্ট না পেয়েছি তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি কষ্ট পাচ্ছি এখন। রাতের বেলা শ্বাসকষ্ট সইতে না পেরে রাফি যখন কাঁদে তখন আমিও ওর সঙ্গে কান্না করি। কি করবো। ওর কষ্ট যে সহ্য হয় না।
জান্নাতের বয়স ৯ মাস। হাসপাতালের বিছানায় মা আর খালাতো বোনের মাঝে শুয়ে আছে জান্নাত। বোন অবশ্য তাকে আদর করে মিষ্টি জান্নাত বলে ডাকে। তার মা আসমা আক্তার বলেন, এটাই আমার প্রথম বাচ্চা। জান্নাতের ডেঙ্গু ধরা পরেছে ১৬ই আগস্ট। এখন ডেঙ্গু ভালো হয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট আছে। গ্যাস দিলে ঠিক হয়ে যায়। রক্তের প্লাটিলেট এখন ঠিক আছে। আগের তুলনায় একটু খাওয়া দাওয়া করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা হাজারীবাগ ঝাউচড়ে ভাড়া বাসায় থাকি। বাসার চারপাশের পরিবেশ খুবই নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর। যতদূর সম্ভব মেয়েকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা তো গরীব মানুষ। ভালো পরিবেশে থাকতে বেশি খরচ। নিজেরা খেয়ে বেঁচে থাকবো না কি ভালো বাসায় থাকবো।
মানজুরুল হাসান মুবিন। বয়স ৩ বছর সাত মাস। গত ১৫ তারিখ থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। মুবিনের মা বলেন, যন্ত্রণা সইতে পারছে না এখন আর। বাবার কাছে যাওয়ার জন্য কাঁদছে। কিছু খেতে চায় না। শরীর খুব দুর্বল। সিবিসির রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেছে ওর শরীরে প্লাটিলেট অনেক কম। রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে হলে তো ওকে ভালো মন্দ একটু খেতে হবে। সুপ নিয়ে বসে আছি ছেলে খেতে চাচ্ছে না। ওর বাবা একটি ছোট ব্যবসা করে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা তালতলা মোল্লাপাড়া ভাড়া বাসায় থাকি।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে নিহাকে নিয়ে বসে আছে তার মা। নিহার বয়স দেড় বছর। ডান হাতে স্যালাইন চলছে। সামনে কাউকে দেখলেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কোনো সাড়া শব্দ নেই। নিহার মা নুরজাহান বলেন, দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে নিহা ছোট। আমাদের বাসা আদাবর পানিরপাম্প এলাকায়। স্বামী আবুল খায়ের রিকশা চালান। চলতি মাসের চার তারিখ নিহার ডেঙ্গু ধরা পরে। এখন পর্যন্ত কমছে না। সোমবার সারাদিন ভালো ছিল। ওইদিন রাত ৯টা থেকে এখন পর্যন্ত জ্বর কমছে না। কখনো জ্বর ১শ চার থাকে। কখনো ১শ দুই। এর নিচে নামে না। জ্বর না থাকলে বাবু এমনিতে সুস্থ। বুকের দুধের ওপর এখন বেঁচে আছে। প্রথমে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখান থেকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। এ পর্যন্ত নিহার চিকিৎসায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মেয়ের চিকিৎসা খরচ যোগাতে ওর বাবা দিনরাত সমানে রিকশা চালায়। নিজেরা একটু ভালো মন্দ খেতে পারি না। কারণ মেয়ের চিকিৎসা করাবো না কি ভালো খাবো। এদিকে আমার চোখে ইনফেকশন হয়েছে। কর্নিয়ায় ছানি পড়েছে। টাকার অভাবে নিজের চিকিৎসা করাতে পারি না। কিন্তু টাকার জন্য তো আর মেয়েকে মেরে ফেলতে পারি না। ঢাকা শিশু হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার কবিতা সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ৯৯ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১১ শিশু। তবে আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে মনে হয়।
No comments