ভারতের সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব এ দেশেও পড়ে: -ইমতিয়াজ আহমেদ by মিজানুর রহমান খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচন এবং বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিচে তুল ধরা হলো:
ভারতের নির্বাচনী ফল কি আপনাকে বিস্মিত করেছে?
পরিবারতান্ত্রিকতা কংগ্রেসের একটি বড় দুর্বলতা। তারা সম্মিলিত বিরোধীদলীয় মোর্চাও করতে পারেনি। সুতরাং রাহুল গান্ধীর ওপর মানুষ ভরসা রাখতে পারেনি। সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহার করে বিজেপি তার ভোটব্যাংক বিস্তৃত করেছে। তাই যে ভারতকে চিনতাম, সেটি কতটা টিকবে, তা একটা প্রশ্ন। বেকারত্বের হার, বিশ্বের ৩০টি দূষিত শহরের ২২টিরই ভারতে থাকা, কৃষকের দুরবস্থা, ডিমনিটাইজেশন–কাণ্ড, জঙ্গির সংখ্যা ও সৈন্যদের হতাহত হওয়াসংক্রান্ত তথ্যগুলো কিন্তু বলে যে বিজেপির জেতার কারণ ছিল না। উত্তর আধুনিক যুগে বিজেপি নির্বাচনী ফলাফলে কারসাজির উপকরণগুলো এতটাই দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে যে ওই বাস্তবতা ঢাকা পড়েছে। অনধিক ৩৬ শতাংশ ভোটে পেয়ে এর আগে মোদি দুই-তৃতীয়াংশ আসন জেতেন, এবার কী করলেন, সেটা জানতে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। তবে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান শুধু ভারতের নয়, তার প্রতিবেশীদের জন্যও উদ্বেগের।
বাংলাদেশে ভারতীয় নির্বাচনের প্রভাব কী?
বাংলাদেশ ও ভারতীয় জনগণের মেধা-মনন কাছাকাছি। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত যদি নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহার করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশেও তেমনটা ঘটার আশঙ্কা থাকে। নির্বাচনে জিততে সাম্প্রদায়িক স্লোগানের ব্যবহার হতে পারে। তবে তা হয়তো অবিকল ভারতের মতো হবে না। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে শুধু মুসলিমবিরোধী নয়, বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবও লক্ষ করা গেছে। সেখানে বাংলাদেশবিরোধিতা তীব্রতা পেলে এখানে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র না হওয়ার কারণ নেই। ভারতবিরোধী উপাদানের মধ্যে হিন্দুবিরোধী উপাদান থাকবে। সেখানে একটা ভয় রয়ে গেছে। ভারতের নির্বাচনে বিজেপির গান্ধীবিরোধিতা থেকে মুসলিমবিরোধিতার কমবেশি প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে পারে।
নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রথমে সফর করেছিলেন ভুটান, আর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমে বেছে নিলেন মালদ্বীপ। দিল্লির কাছে ঢাকার গুরুত্ব আসলে কেমন?
মালদ্বীপে ভারতপন্থী বা চীনবিরোধীদের স্বীকৃতি দেওয়ার একটা বিষয় ছিল। সেখানকার ক্ষমতাসীনেরা অতটা চীনের পক্ষে নেই। দক্ষিণ এশিয়া তো ইউরোপের মতো নয়। সেখানে শীর্ষ নেতাদের আসা–যাওয়া অনেকটাই লৌকিকতা। কিন্তু এখানে কে কখন এল, কী দিল—সেসব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা তো ছিলই, তারপর যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা। ভারত রোহিঙ্গা প্রশ্নে কী বলে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালের আগস্টে অনেকে ভেবেছিল, ভারত হয়তো মিয়ানমারকে চাপ দেবে, কিন্তু ঘটল উল্টো। ভারত এখনো রোহিঙ্গা প্রশ্নে চুপ থাকতে চাইছে।
বাংলাদেশ কি চীনের দিকে ঝুঁকছে?
মূলত অর্থনৈতিক কারণে। বাংলাদেশ এমন কোনো জোটে যাবে না, যার নিরাপত্তাগত বা সামরিক তাৎপর্য রয়েছে। চীনের কাছে এখন অঢেল মূলধন, যা পশ্চিমা বিশ্বের কাছে নেই। পাঁচ বছর অন্তর যারা নির্বাচনে জয়ী হতে চাইবে, তাদের বড় উন্নয়ন দেখাতেই হবে। আর ১০ শতাংশ জিডিপির দিকে যেতে চাইলে তার বৃহৎ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ লাগবে। অন্যদিকে চীনই ভারতের একক বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো সব থেকে বেশিসংখ্যক ভারতীয় ছাত্রছাত্রী যুক্তরাজ্যে না গিয়ে চীনে গেছে। তাদের বেশির ভাগই বিজ্ঞানের। সুতরাং আগামী ১০ বছরে চীন-ভারত সম্পর্কে একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে। এই মুহূর্তে অবশ্য ভারতের আমেরিকাকে দরকার। কিন্তু ট্রাম্পে ভরসা করার নাজুক বাস্তবতায় মোদি প্রকারান্তরে বলেছেন, তিনি চীন-রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। আবার দেখুন, পাকিস্তানের কারণে ভারত সার্কে অনীহা দেখালেও সাংহাই কো–অপারেশনে ভারত ও পাকিস্তান সক্রিয় থাকতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
সার্ক কি ভেঙে গেছে?
আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেই নরেন্দ্র মোদি সার্ককে ব্যবহার করছেন। সাংহাই কো–অপারেশনে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে বসতে পারেন। কিন্তু সার্কে পারেন না।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী চীনে গেছেন।
আশা করব, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এবার আমরা চীনের তরফে ইতিবাচক বার্তা পাব। কারণ, মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সুবিদিত। ভারত ও চীনকে বাংলাদেশের বলা উচিত যে তোমাদের মধ্যে যা–ই থাক, সেসবের মধ্যে আমরা নেই। আমাদের উন্নয়ন দরকার। কারও দিকে রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকে পড়ার ব্যাপার নেই।
তিন নারী নোবেল বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিন্যাল কোর্টের (আইসিসি) শরণাপন্ন হতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তখন তাতে সায় দেননি। এখন দিয়েছেন। এর ফলাফল কী হতে পারে?
সত্তর ও নব্বইয়ের দশকের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ ভেবেছিল, এবারও রোহিঙ্গাদের সেভাবেই ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। তা ছাড়া সরকারের সামনে নির্বাচন ছিল, এ বিষয়ে কম মনোযোগ দিতে পেরেছে। তাই তখন আইসিসিতে যেতে চায়নি। নব্বইয়ে যখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঘটে, তখন আমি ওই প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটির সুরাহা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছিলেন, মিয়ানমার যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে, তখন তাদের নাগরিকত্বের সুরাহা একটা হবেই। আমি মনে করি, জাতিসংঘ ও উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের একটা বড় ব্যর্থতা আছে। যেমন কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের প্রভাব মিয়ানমারে কী হতে পারে, সেই হোমওয়ার্ক জাতিসংঘ করেনি। তারিখগুলো দেখুন। ২৩ আগস্ট রিপোর্ট দিল। ২৪ আগস্ট তা ছাপা হলো। ২৬ তারিখে আরসার আক্রমণ ঘটল। ২৭ তারিখে তথাকথিত এথনিক ক্লিনজিং বা গণহত্যা শুরু হলো। অন্যত্র গণহত্যা করেছে—এমন একটি কুখ্যাত রেজিমেন্ট যখন আরাকানে আনা হলো, তখনই বাংলাদেশের প্রশ্ন করা উচিত ছিল যে এই রেজিমেন্ট কেন মিয়ানমারে আসছে? তবে এবার সাক্ষ্য–প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত যে রাখাইনে একটি গণহত্যা ঘটেছে। এই ফ্যাক্টর আগে ছিল না। যখন কোনো দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে, তখন তা আর দ্বিপক্ষীয় থাকে না। আজ বা আগামী এক কি পাঁচ বছরে যদি শতভাগ প্রত্যাবাসন ঘটে, তাহলেও গণহত্যার প্রশ্ন মুছবে না। আইসিসি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সত্তরের দশকে ধর্ষণ গণহত্যারই উপাদান হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। এখন তা আছে। চীন ও ভারত ছাড়া অং সান সু চি অন্যত্র যেতে পারছেন না। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বিব্রত সু চি দায়মুক্তির জন্য আদালতের ঝক্কি কোনোমতে এড়িয়েছেন। আইসিসির উদ্যোক্তা দেশগুলোতেও সু চি যেতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ পাঁচ বছরের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। এখন তারা এদিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে পারবে। গাম্বিয়ার পরে ওআইসি এগিয়ে এসেছে। এসবের মাধ্যমে অন্তত একটা বড় চাপ সৃষ্টি করা যাবে। তাই আন্তর্জাতিকীকরণটা দিন দিন বাড়াতে হবে। এর ফলে যতটা না মিয়ানমার চিন্তিত হবে, তার থেকে বেশি হবে চীন। ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোডের বড় বিষয় হলো বিনিয়োগ। আরাকানে বিনিয়োগে সে ১০ বার ভাববে। কারণ, সে জানে এর ওপর বিশ্বের নজর আছে। আমরা বুঝতে পেরেছি, দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে এর সমাধান হবে না। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাতিসংঘ সফরে বাংলাদেশ সেফ জোনসহ নানা বিষয়ে আরও সোচ্চার হবে।
সেফ জোন করতে বলা নিয়ে ভিন্নমত আছে।
চীন তিন স্তরের (সংঘাত বন্ধ, প্রত্যাবাসন ও সমস্যার মূলে গিয়ে উন্নয়ন দিয়ে সমাধান) একটি নীতি দিয়েছিল, তার মধ্যে এটা আছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের এখান থেকে নেপিডোতে গিয়েও একই জিনিস বলেছিলেন। একজন চীনা স্কলারও একটি আনএট্রিবিউটেড জোনের কথা বলেছিলেন, যে জোনের দায়িত্ব হবে নিরাপত্তা ইত্যাদি।
উত্তর-পূর্ব ভারত এবং ইউনান অঞ্চলের ৩০ কোটি মানুষের নিকটবর্তী সমুদ্রবন্দর কক্সবাজার, যার ব্যবহার অশান্ত রাখাইন অনিশ্চিত করতে পারে। এটা তো চীন-ভারতের অভিন্ন স্বার্থ, তাহলে?
চীন যে চোখ–কান বুজে আছে তা নয়, বেইজিং-সাংহাইয়ে গিয়ে কথাবার্তায় বুঝি, তারা উদ্বিগ্ন। অং সান সু চিতে যে তাদের খুব আস্থা, তা না। সু চির প্রতি ভারতীয় নমনীয়তার কারণে চীন মনে করে, ভারত মিয়ানমারে আমেরিকার হয়ে প্রক্সি দিচ্ছে। তবে মিয়ানমারের চিন্তায় পরিবর্তন আসছে। তারা ভেবেছিল, রোহিঙ্গাদের তাড়ালে আরাকান আর্মির স্বায়ত্তশাসনের লড়াই থামবে। কিন্তু সেটা থামেনি। আরাকান আর্মি বলেছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের কোনো সংঘাত নেই। মজার বিষয় হলো, রোহিঙ্গারা স্বায়ত্তশাসন চায় না, তারা নাগরিকত্ব নিয়ে দেশটির যেকোনো অংশে মাথা গোঁজার ঠাঁই চায়।
একটি ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি, আরসার শক্তিও সমীহ করার মতো, তাই কি?
আমি তা মনে করি না। বরং আরাকান আর্মির অস্ত্রের উৎস হিসেবে কারেন বা চীনের যোগসূত্র আছে বলেই প্রকাশ। চীনের হাতে খেলার মতো যথেষ্ট কার্ড আছে। আবার ভারত ভাবে, মিয়ানমারে তার একটা অর্থনৈতিক জায়গা তৈরিতে সু চির সমর্থন দরকার। তার নীতি হলো মিয়ানমারকে যতটা সম্ভব চীন থেকে সরিয়ে রাখা। নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনা ও সু চিকে দিল্লিতে ডেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকে তিনি ব্যর্থতার নজির তৈরি করেছেন। প্রথম দুই সপ্তাহ বাংলাদেশ সরকার চুপ করে ছিল। মোদি যেহেতু নেপিডো যাচ্ছেন, অনেকে ভরসা করছিলেন। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন, তাতে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে। অবশ্য মনে রাখতে হবে, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের যা সম্পর্ক, সেটা বিজেপির সঙ্গে নেই। বিজেপি হয়তো ভাবে, তুমি তো কংগ্রেসের লোক, তোমার সঙ্গে কেন আমরা এটা করব। এভাবে মধ্যস্থতা করার সুযোগ হাতছাড়া করে পুরো বিষয়টি চীনের দিকেই ঠেলে দেওয়া হলো। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভাবছে, ভারত আমাদের সঙ্গে নেই।
রোহিঙ্গারা যত দিন আছে, তত দিন আমাদের করণীয় কী?
মিয়ানমারের ওপর থেকে চোখ সরানো যাবে না। ভুটানের মোট জনসংখ্যার চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি। আমাদের সাংবাদিকদের মিয়ানমার সম্পর্কে আরও জানতে হবে। কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, কোন পশ্চিমা কোম্পানি সেখানে ব্যবসা করছে, এসব জানা দরকার।রোহিঙ্গাদের কাছে তাদের ভাষায় বার্তা পৌঁছাতে হবে। সে জন্য দুই মাস আগে পররাষ্ট্রসচিব ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমি একটি এফএম রেডিও চালুর প্রস্তাব করেছিলাম। তাঁরা দুজনেই ফলোআপ করার কথা বলেছিলেন।
ভারতের সঙ্গে আমাদের অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির বিষয়ে কিছু বলুন।
নদী শুধু পানিসম্পদ নয়। উপনিষদ বলছে, এটা রক্তের ধমনি। তিনটি বিষয় থাকতে হবে। আত্মা, প্রাণ ও শক্তি। আমরা যারা পানি নিয়ে কাজ করি, তারা বলি, চারটি উপাদান বা ‘ওয়েবস’ থাকতে হবে। ওয়াটার, এনার্জি, বায়োডাইভারসিটি ও সেডিমেন্ট। আমরা যখন ন্যায্য হিস্যার কথা বলি, তখন শুধু পানির কথা বলি। সুতরাং নদী বিষয়ে সবার দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। ভারতীয় জনগণকে বোঝাতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত হাইড্রোডিপ্লোম্যাসির কোর্সে বলেছি, আপনারা যখন পানি আলোচনায় অংশ নেবেন, বলবেন, সেডিমেন্ট (পলি) ও জীববৈচিত্র্য কী করে ভাগ হবে। তখন তাঁরা বুঝবেন, এটা অসম্ভব। তখনই একটি বেসিন বা অববাহিকা অ্যাপ্রোচ সামনে আসবে। সেখানে ভুটান, নেপাল ও দরকারে চীনকেও আনতে হবে। ব্রহ্মপুত্রের মাত্র ১৮ শতাংশ পানি হিমালয় থেকে আসে। বাকি ৮২ শতাংশ পানিই বৃষ্টির। তবে ওই ১৮ শতাংশ অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বড় মাপের হাইড্রোলজিস্ট আছে, সেডিমেন্টলজিস্ট নেই। পলি যদি বুঝতে পারি, তাহলে গত ৫০ বছর পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে রাজনীতি হয়েছে, সেখানে বড় পরিবর্তন আসবে। দুই দেশের জনগণই উপকৃত হতে পারে। আমাদের রেইন হার্ভেস্টিংয়ে (বৃষ্টির পানি ধরে রাখা) বড় আকারে এগিয়ে আসতে হবে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে বলুন।
ভারতের নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রর তিস্তা রিপোর্ট বের হলো না। সিকিম ১৮ থেকে ২০টি বাঁধ তৈরি করেছে। মমতা পানি কতটা পশ্চিমবঙ্গে আসবে, সিকিমের কাছে তার গ্যারান্টি চান। সেটা না পেলে, মমতা বলছেন, আমি কিসের ফিফটি ফিফটি দেব। ফুল গ্লাসের নাকি হাফ গ্লাসের নাকি জিরো গ্লাসের।
তার মানে তিস্তা চুক্তি করে পানি পাওয়ার চেয়ে রাজনীতিটা বড় হয়ে উঠেছে?
একটা লোকদেখানো ব্যাপার তো থাকেই। ফারাক্কা চুক্তি নিয়েও ঘটেছে।
মমতা প্রকাশ্যে সিকিম প্রসঙ্গে বলেছেন বলে নজরে আসেনি। কল্যাণ রুদ্রকে তিনিই অবশ্য নিয়োগ দিয়েছিলেন।
রুদ্র রিপোর্টে তা স্পষ্ট।
আপনি পড়েছেন?
আমি রুদ্র এবং অপর বিশেষজ্ঞ জয়ন্তর কাছ থেকে শুনেছি, বীণা সিক্রিসহ আমরা সিকিমে গিয়েছিলাম। ছয়–সাত বছর আগের কথা। বীণা বলছিলেন, ‘পানি তো নেই।’ এতগুলো ড্যাম পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পানি কম আসছে। এখন সেটাই ভাগাভাগির কথা চলছে, কিন্তু এতে আমাদের খুব লাভ হবে বলে মনে হয় না। তাই আগে ক্ষতিকর ওই ড্যাম বন্ধ করতে হবে।
তাহলে এত দিন আমরা কী শুনলাম? মনমোহন সিং পর্যন্ত মমতার দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। যা সত্য তা মানুষকে বলা হচ্ছে না। তাহলে শুভেচ্ছা-ইলিশ আমরা সিকিমে পাঠাব?
অন্তত যাতে তারা ড্যামগুলো ভাঙতে শুরু করে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.