মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশ কি জিতছে? by আনু আনোয়ার
মার্কিন-চীন
বাণিজ্য যুদ্ধ যতই তীব্র হচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরের দুই পাড়ের পণ্ডিতেরা
হিসেব কষছেন: কে এখানে আসলে জিতছে? সন্দেহ নেই চীন বা যুক্তরাষ্ট্র কেউ
এখানে জিতছে না, তবে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও চিলির মতো দেশগুলো বিশ্বের
বৃহত্তম দুই দেশের বিবাদের কারণে লাভবান হতে পারে। সরবরাহ ব্যবস্থা ও
বিনিয়োগের প্যাটার্নের উপর এই বাণিজ্য যুদ্ধের যে প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, সেটা
এই দেশগুলো সঙ্ঘাতের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের স্থিতিশীল বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চলে আসছে। দুই দেশের সাথেই বাংলাদেশের বাণিজ্যের আকার এবং মূল্যমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দুই দেশের সাথে বাণিজ্যের প্রকৃতিটা আলাদা। বাংলাদেশের শীর্ষতম আমদানি অংশীদার হলো চীন। ২০১৭ সালে চীন থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫.৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র। (সর্বোচ্চ ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে জার্মানি)।
এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের চিফ ইকোনমিস্ট ইয়াসুইউকি সাওয়াদা বলেছেন, “বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাড়বে”।
বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ৮০ শতাংশই হলো গার্মেন্টস পণ্য। এই খাত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হলে আমরিকান ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও বেশি গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার দেবে এবং চীনে উৎপাদিত পণ্য আমদানির পরিমাণ কমিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের প্রথম তিন কোয়ার্টারে যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে ৬.৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ।
২০১২ সালে ম্যাকিনসে ভবিষ্যদ্বানী করেন যে, চীনের কাছ থেকে তৈরি গার্মেন্টস পণ্য আমদানি হ্রাস পাওয়ায় পরবর্তী আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হবে বাংলাদেশ এবং ২০২০ সাল নাগাদ মার্কেটের মূল্য তিনগুণ বেড়ে যাবে, ২০১০ সালে যে বাজারের আকার ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও এ ধরনের ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে যে চীন শ্রম-ঘনিষ্ঠ শিল্প থেকে উচ্চ প্রযুক্তি, পুঁজি-নির্ভর উৎপাদন খাতের দিকে ঝুঁকছে চীন, এর পরও বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
উচ্চ শুল্ক এড়ানোর জন্য বিভিন্ন কোম্পানি চীন থেকে তাদের কারখানাগুলো এশিয়ার অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সেখানে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইউনিয়ন থাকার পরও কম্বোডিয়ায় কারখানা স্থাপন করাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাছাড়া, ১৬০ মিলিয়ন বাংলাদেশীর বিপরীতে কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা হলো ১৬ মিলিয়ন, যে কারণে শ্রমের দিক থেকে সুবিধাজনক জায়গায় আছে বাংলাদেশ। উচ্চ বেতন ও উৎপাদন খরচের কারণে ভিয়েতনামের অবস্থানও ততটা সুবিধাজনক নয়। বাংলাদেশে ন্যূনতম মাসিক মজুরি হলো ৯৫ ডলার, যেটা কম্বোডিয়ার প্রায় অর্ধেক। কম্বোডিয়ায় মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১৮০ ডলার এবং হ্যানয় ও হো চি মিন শহরে এর পরিমাণ ১৮০ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি বাড়িয়েও লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ। মার্কিন ফার্ম ব্যুরো’র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের উপর চীনের অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকরের পর থেকে চীনে মার্কিন সয়াবিন রফতানির পরিমাণ ৯৭ শতাংশ কমে গেছে। এ সময়টাতে বাংলাদেশ ২ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত ভেজিটেবল অয়েল আমদানি করেছে, যার মাধ্যে ৩০ শতাংশ বা ৬০০,০০০ টন হলো সয়াবিন। এই সয়াবিনের ৯৮ শতাংশ এসেছে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে এবং ব্রাজিল থেকে। বাংলাদেশ যদি সরবরাহ চেইন ল্যাটিন আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে পারে, তাহলে ভোক্তাদের আরও কম খরচে সয়াবিন দিতে পারবে তারা এবং দীর্ঘমেয়াদে সেখানে মুনাফাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এই সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। তবে, বাংলাদেশ এখান থেকে সুবিধাটা নিতে পারবে কি না, সেটা বেশ কিছু ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে খাবি খাচ্ছে, সেখানে আইনের শাসনের অবস্থা দুর্বল, আর ব্যবসায়িক পরিবেশ অনুকূল নয়। বহু পর্যবেক্ষক একই সাথে চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশী গার্মেন্টগুলোর বেপরোয়া ঋণ নেয়ার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের জন্য এখন তাই একটা ইতিবাচক নীতি প্রণয়নের জন্য কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ যাতে নতুন সুযোগগুলো কাজে লাগানো যায় এবং আরও বেশি সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং একই সাথে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি ও পরিণতি এড়ানো যায়।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের স্থিতিশীল বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চলে আসছে। দুই দেশের সাথেই বাংলাদেশের বাণিজ্যের আকার এবং মূল্যমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দুই দেশের সাথে বাণিজ্যের প্রকৃতিটা আলাদা। বাংলাদেশের শীর্ষতম আমদানি অংশীদার হলো চীন। ২০১৭ সালে চীন থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫.৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র। (সর্বোচ্চ ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে জার্মানি)।
এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের চিফ ইকোনমিস্ট ইয়াসুইউকি সাওয়াদা বলেছেন, “বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাড়বে”।
বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ৮০ শতাংশই হলো গার্মেন্টস পণ্য। এই খাত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হলে আমরিকান ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও বেশি গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডার দেবে এবং চীনে উৎপাদিত পণ্য আমদানির পরিমাণ কমিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের প্রথম তিন কোয়ার্টারে যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে ৬.৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ।
২০১২ সালে ম্যাকিনসে ভবিষ্যদ্বানী করেন যে, চীনের কাছ থেকে তৈরি গার্মেন্টস পণ্য আমদানি হ্রাস পাওয়ায় পরবর্তী আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হবে বাংলাদেশ এবং ২০২০ সাল নাগাদ মার্কেটের মূল্য তিনগুণ বেড়ে যাবে, ২০১০ সালে যে বাজারের আকার ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও এ ধরনের ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে যে চীন শ্রম-ঘনিষ্ঠ শিল্প থেকে উচ্চ প্রযুক্তি, পুঁজি-নির্ভর উৎপাদন খাতের দিকে ঝুঁকছে চীন, এর পরও বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
উচ্চ শুল্ক এড়ানোর জন্য বিভিন্ন কোম্পানি চীন থেকে তাদের কারখানাগুলো এশিয়ার অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সেখানে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইউনিয়ন থাকার পরও কম্বোডিয়ায় কারখানা স্থাপন করাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাছাড়া, ১৬০ মিলিয়ন বাংলাদেশীর বিপরীতে কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা হলো ১৬ মিলিয়ন, যে কারণে শ্রমের দিক থেকে সুবিধাজনক জায়গায় আছে বাংলাদেশ। উচ্চ বেতন ও উৎপাদন খরচের কারণে ভিয়েতনামের অবস্থানও ততটা সুবিধাজনক নয়। বাংলাদেশে ন্যূনতম মাসিক মজুরি হলো ৯৫ ডলার, যেটা কম্বোডিয়ার প্রায় অর্ধেক। কম্বোডিয়ায় মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১৮০ ডলার এবং হ্যানয় ও হো চি মিন শহরে এর পরিমাণ ১৮০ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি বাড়িয়েও লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ। মার্কিন ফার্ম ব্যুরো’র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের উপর চীনের অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকরের পর থেকে চীনে মার্কিন সয়াবিন রফতানির পরিমাণ ৯৭ শতাংশ কমে গেছে। এ সময়টাতে বাংলাদেশ ২ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত ভেজিটেবল অয়েল আমদানি করেছে, যার মাধ্যে ৩০ শতাংশ বা ৬০০,০০০ টন হলো সয়াবিন। এই সয়াবিনের ৯৮ শতাংশ এসেছে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে এবং ব্রাজিল থেকে। বাংলাদেশ যদি সরবরাহ চেইন ল্যাটিন আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে পারে, তাহলে ভোক্তাদের আরও কম খরচে সয়াবিন দিতে পারবে তারা এবং দীর্ঘমেয়াদে সেখানে মুনাফাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এই সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। তবে, বাংলাদেশ এখান থেকে সুবিধাটা নিতে পারবে কি না, সেটা বেশ কিছু ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে খাবি খাচ্ছে, সেখানে আইনের শাসনের অবস্থা দুর্বল, আর ব্যবসায়িক পরিবেশ অনুকূল নয়। বহু পর্যবেক্ষক একই সাথে চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশী গার্মেন্টগুলোর বেপরোয়া ঋণ নেয়ার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের জন্য এখন তাই একটা ইতিবাচক নীতি প্রণয়নের জন্য কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ যাতে নতুন সুযোগগুলো কাজে লাগানো যায় এবং আরও বেশি সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং একই সাথে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি ও পরিণতি এড়ানো যায়।
No comments