বেঞ্চ স্বল্পতায় দাঁড়িয়েই ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর তুলনায় বেঞ্চ স্বল্পতা রয়েছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়িয়েই শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় পাঠে ঠিকমতো তাদের মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, বেঞ্চের অভাবে শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়েই ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। এতে পড়াশুনায় ঠিকমত মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে ক্লাস করায় তাদের পায়ে ব্যাথা সৃষ্টির কথাও বলেছেন কোনো কোনো শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ৮৮১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০টি শ্রেণিকক্ষ ও ১৩৫টি বেঞ্চ রয়েছে। প্রতিটি বেঞ্চে তিনজন করে বসা যায়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বেঞ্চ কম হওয়ায় একেকটি বেঞ্চে ছয়জন ঠাসাঠাসি করে বসছে। তারপরও অনেকে বেঞ্চে বসার সুযোগ পায় না। তাই বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়েই ক্লাস করতে হয়। ১৯৪৯ সালে ৩ একর ১৭ শতক জমির ওপর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ১৯ জন। শিক্ষকরা জানান, তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এই দুর্দশা চলছে। অনেক আবেদন-নিবেদনের পরও শিক্ষার্থীদের দুর্দশা লাঘবে কেউ এগিয়ে আসছে না। এ অবস্থার মধ্যেই পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চের অভাবে একাধিক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষকের পাঠ গ্রহণ করছেন। আর প্রতিটি বেঞ্চে ৩ শিক্ষার্থীর জায়গায় ৫-৬ জন করে বসা। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিতুন জেরা জানান, আগে আসলে বেঞ্চ পাওয়া যায়। পরে আসলে সবার শেষে দেয়ালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। স্যারদের বেঞ্চের কথা বললে বলেন ধৈর্য্য ধরতে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রিয়াদুল কবির বলেন, অন্য স্কুলে সব ছাত্রের জন্য বেঞ্চ আছে। কিন্তু আমাদের স্কুলে নেই।
দাঁড়িয়ে ক্লাস করায় পড়ালোখায় মানোযোগ আসে না। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা খাতুন বলেন, আমাদের বসার বেঞ্চ নেই, রুম নাই, একটি ছোট বেঞ্চে ছয়জন করে বসতে হয়। গরমে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে করতে পায়ে ব্যথা হয়। সহকারী শিক্ষক আরফিন হাবিব বলেন, ১০টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ৩টিতে টিনের চালা। বৃষ্টি এলে এই ৩টি শ্রেণিকক্ষে টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ভিজে যায়। রোদ উঠলে টিন থেকে যেন আগুন বেরোয়। রুমে থাকা যায় না। তিনি বলেন, বেঞ্চ সংকট তো আছেই। শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে ঠাসাঠাসি করে ক্লাস করতে হয়। আগে ১৮০টি বেঞ্চ ছিল সেগুলো বেশির ভাগেই ভেঙে গেছে। এখন বর্তমান ৮৮১ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য মাত্র ১৩৫টি বেঞ্চ আছে। এই শিক্ষক আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে দেখে নিজেরই খুব কষ্ট লাগে। প্রধান শিক্ষক কাশেম আলী বলেন, বিদ্যালয়টির এই অবস্থার কারণে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানানো হয়েছে। তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিলুফা সুলতানার কাছে এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কল করলে তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটন জানান, উপজেলা পরিষদের আগামী মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
No comments