‘কছম কইয়ার, কেউ এক মুইট চাউল দিছে না’
সাড়ে তিন মাস থাকি পানিবন্দি। কছম (শপথ) কইয়ার, কেউ এক মুইট চাউল দিছে না। এখন ঢেউয়ে ঘরবাড়ি ভাঙিয়া নেরগি। ইলা দুর্ভোগে আর কতদিন কাটাইতাম।’ এভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বন্যাদুর্গত মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের বড়দল গ্রামের জামাল মিয়া (৭০)। তিনি জানান, তিনি একা বাড়ি পাহারার জন্য থেকে গেছেন। স্ত্রীসহ ছয় সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। শুধু কুলাউড়াই নয়, পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে দেশের বন্যাকবলিত কয়েকটি জেলায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেকে কোমর পানি ভেঙে কলসি নিয়ে দূরবর্তী স্থান থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। ফলে বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নেই বলে অভিযোগ করেছেন বানভাসি মানুষ। এদিকে তিস্তা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সোমবারও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কুড়িগ্রামে অরক্ষিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইলের কাড়েরা গ্রামের যগেশ দাশ, আবদুল মালিক, তজমুল আলী, প্রণতি দাস জানান, ত্রাণ চাইতে গেলে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা উল্টো ধমক দেন। ঘরে চাল নেই, চুলো জ্বলে না। চার দিকে পানি থৈথৈ। কিন্তু পান করার পানির জন্য চলছে হাহাকার। নলকুপগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির খোঁজে ছুটতে হয় দূর-দূরান্তের উঁচু কোনো বাড়িতে। একই গ্রামের সাধন দাস, সজল দাস, শামল দাস জানান, এলাকার বেশির ভাগ মানুষের উঠোনে পানি। কারও ঘরে দুই-তিন ফুট পানি। পেশায় তারা মৎস্যজীবী হলেও তারা মাছ ধরতে পারছেন না। কারণ বন্যার পানি এতই বেশি যে, জাল দিয়ে মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে না। গত সাড়ে তিন মাস ধরে হাকালুকি হাওর পারের এ মানুষগুলো খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে জীবন ধারণ করছেন। তাদের দাবি, হাওর তীরে এখনও ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। মৌলভীবাজারের জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায়ও বানভাসি মানুষের একই রকম দুর্দশা। হাওর তীরের বন্যাকবলিত এ তিন উপজেলায় শতভাগ মানুষ প্রকৃতির কাজ (প্রস াব-পায়খানা) সাড়ছেন বানের পানিতে। ফলে হাওর এলাকার পানি ভয়াবহ দূষণের মুখে পড়ছে। জুড়ী উপজেলার দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে ২৫টি পরিবার। এর মধ্যে শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে ১০টি পরিবার। আশ্রয় কেন্দে র দ্বিতীয়তলায় অবস্থান করছেন মানুষ। নিচতলায় তিন ফুট পানি। বিদ্যালয়ের টয়লেট বন্যাকবলিত হওয়ায় আশ্রিত মানুষকেও বন্যার পানিতে মলমূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ওএমএস ডিলার আজমল আলী জানান, ১ জুলাই থেকে চাল বিক্রি বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিদিন ৩০০-৪০০ লোক ফেরৎ যাচ্ছে। কুলাউড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ওএমএস কার্যক্রম চালু ছিল। সেটি বন্ধ হওয়ায় মাসে বন্যাদুর্গত ৪২ হাজার পরিবার ওএমএসের চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সিলেট : বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিন সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। সভায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়। বন্যার্তদের সাহায্যে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন উপজেলা পরিষদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান মো. শহিদুর রহমান রোমান। বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি জানান, ফের কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক সড়কের মেওয়া মায়ন চত্বর অংশ তলিয়ে গেছে। এ সড়কের আঙ্গারজুর, বৈরাগী বাজার ও তেরাদল অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সোমবার থেকে ছোট ও মাঝারি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে বাস ও মাল বোঝাই ট্রাক। নৌকাযোগে যাতায়াত করছেন এসব এলাকার লোকজন। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি। জাতীয় পার্টিও দুর্গত সব ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ করবে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুুল খালিক লালু। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় সোমবার নতুন করে বন্যাকবলিত হয়েছে তিনটি ইউনিয়ন। উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ জানান, দাউদপুর, মোগলাবাজার ও জালালপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্র্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তিন উপজেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহেদ মোস্তফা জানান, বন্যার সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল। গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোমবার সিলেটের গোলাপগঞ্জে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি : পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সোমবার বিকালে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং থেমে থেমে ভারি বর্ষণের কারণে যমুনা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭২ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনার পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সমতল ও নিচু এবং চরাঞ্চলের ২৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। জেলায় ২১০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে গত কয়েক বছরের ভাঙনে ২১ দশমিক ২০ কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ৫১টি পয়েন্টে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ। বাঁধ ভেঙে পড়ায় ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ এলাকার আইজার রহমান বলেন, তিস্তা নদীতে পানি বাড়ার ফলে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত আটবার নদীভাঙনের ফলে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। এবার বাঁধও ভেঙে যাচ্ছে। জানি না পরিবার নিয়ে কোথায় যাব।
একই এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীতে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে তৈয়ব খাঁ বাজারের একাংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে তৈয়ব খাঁ জামে মসজিদ, বিদ্যানন্দ নিন্মমাধ্যমিক বিদ্যালয়, তৈয়ব খাঁ বাজার, সর্বজনীন মন্দিরসহ শত শত বসতবাড়ি। রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, ব্রহ্মপূত্র নদের তীব্র ভাঙনে এই ইউনিয়নের নয়ারচর বাজারের ৪৯টি দোকানঘর বিলীন হয়ে গেছে।
গাইবান্ধা : উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত তিন দিনের ভারি বর্ষণে গাইবান্ধায় সব নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, বাঙালিসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী নিচু অঞ্চলগুলো ডুবে গেছে। বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে পানির নিচে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পাট, আউশ ধান ও শাক-সবজিসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আলীকদম (বান্দরবান) : টানা দু’দিনের ভারি বর্ষণে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে পানি ঢুকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানির নিচে রয়েছে কয়েকশ’ বাড়িঘর। পানিবন্দি হাজারো মানুষ।
রাউজান : রোববার রাত ও সোমবার দিবন্যাপী ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং হালদা ও কর্ণফুলী নদীর উজানে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। রাউজানে শতাধিক সড়ক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কয়েকশ’ ঘরবাড়ি পানির নিচে।
চকরিয়া (কক্সবাজার) : পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি কক্সবাজারের চকরিয়া অংশে মাতামহুরী নদীর দু’কূল উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। চকরিয়া চিরিঙ্গা ব্রিজ পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান, তার ইউনিয়নের সুরাজপুর-মানিকপুরের হিন্দুপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝেরপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, খন্দকারপাড়া, মাতবরপাড়া ও বড়–য়াপাড়ায় ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।
সিলেট : বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিন সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। সভায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়। বন্যার্তদের সাহায্যে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন উপজেলা পরিষদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান মো. শহিদুর রহমান রোমান। বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি জানান, ফের কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক সড়কের মেওয়া মায়ন চত্বর অংশ তলিয়ে গেছে। এ সড়কের আঙ্গারজুর, বৈরাগী বাজার ও তেরাদল অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সোমবার থেকে ছোট ও মাঝারি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে বাস ও মাল বোঝাই ট্রাক। নৌকাযোগে যাতায়াত করছেন এসব এলাকার লোকজন। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি। জাতীয় পার্টিও দুর্গত সব ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ করবে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুুল খালিক লালু। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় সোমবার নতুন করে বন্যাকবলিত হয়েছে তিনটি ইউনিয়ন। উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ জানান, দাউদপুর, মোগলাবাজার ও জালালপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্র্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তিন উপজেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহেদ মোস্তফা জানান, বন্যার সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল। গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোমবার সিলেটের গোলাপগঞ্জে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি : পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সোমবার বিকালে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং থেমে থেমে ভারি বর্ষণের কারণে যমুনা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭২ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনার পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সমতল ও নিচু এবং চরাঞ্চলের ২৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। জেলায় ২১০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে গত কয়েক বছরের ভাঙনে ২১ দশমিক ২০ কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ৫১টি পয়েন্টে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ। বাঁধ ভেঙে পড়ায় ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ এলাকার আইজার রহমান বলেন, তিস্তা নদীতে পানি বাড়ার ফলে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত আটবার নদীভাঙনের ফলে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। এবার বাঁধও ভেঙে যাচ্ছে। জানি না পরিবার নিয়ে কোথায় যাব।
একই এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীতে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে তৈয়ব খাঁ বাজারের একাংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে তৈয়ব খাঁ জামে মসজিদ, বিদ্যানন্দ নিন্মমাধ্যমিক বিদ্যালয়, তৈয়ব খাঁ বাজার, সর্বজনীন মন্দিরসহ শত শত বসতবাড়ি। রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, ব্রহ্মপূত্র নদের তীব্র ভাঙনে এই ইউনিয়নের নয়ারচর বাজারের ৪৯টি দোকানঘর বিলীন হয়ে গেছে।
গাইবান্ধা : উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত তিন দিনের ভারি বর্ষণে গাইবান্ধায় সব নদীর পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, বাঙালিসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী নিচু অঞ্চলগুলো ডুবে গেছে। বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে পানির নিচে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পাট, আউশ ধান ও শাক-সবজিসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আলীকদম (বান্দরবান) : টানা দু’দিনের ভারি বর্ষণে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে পানি ঢুকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানির নিচে রয়েছে কয়েকশ’ বাড়িঘর। পানিবন্দি হাজারো মানুষ।
রাউজান : রোববার রাত ও সোমবার দিবন্যাপী ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং হালদা ও কর্ণফুলী নদীর উজানে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। রাউজানে শতাধিক সড়ক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কয়েকশ’ ঘরবাড়ি পানির নিচে।
চকরিয়া (কক্সবাজার) : পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি কক্সবাজারের চকরিয়া অংশে মাতামহুরী নদীর দু’কূল উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। চকরিয়া চিরিঙ্গা ব্রিজ পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান, তার ইউনিয়নের সুরাজপুর-মানিকপুরের হিন্দুপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝেরপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, খন্দকারপাড়া, মাতবরপাড়া ও বড়–য়াপাড়ায় ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।
No comments